ETV Bharat / state

বিকাশ ভট্টাচার্য বনাম কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বাকযুদ্ধ আদালতে - Kalyan Banerjee

Calcutta High Court: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন বাকযুদ্ধে জড়ালেন দুই আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সওয়াল-জবাবে কী বললেন তাঁরা ? জানতে প্রতিবেদনটি পড়ুন ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 15, 2024, 5:46 PM IST

কলকাতা, 15 জানুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আদালতে বাকযুদ্ধে জড়ালেন সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ সওয়াল-জবাবে একে-অপরকে কড়া ভাষায় বিঁধেছেন তাঁরা ৷

রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য । প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব স্তরেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে এবং তার সিবিআই তদন্ত চলছে । সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার শুনানির জন্য হাইকোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল । সেই মতোই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রশিদীর ডিভিশন বেঞ্চ গঠিত হয়েছে । সেই বেঞ্চে সোমবার শুনানির প্রথম দিনেই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এ দিন দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানির শুরুর দিনেই চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য সংক্রান্ত কপি রাজ্যকে না দেওয়া নিয়ে তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উপর প্রায় বিষোদ্গার করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

তিনি বলেন, "বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যই যেন দেশের একমাত্র সৎ ব্যক্তি । আর কেউ নেই । সিঙ্গল বেঞ্চে কী হয়েছে সবাই জানে । সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আর সিবিআই মিলে বিচারপর্ব চালিয়েছে । সেখানে রাজ্যের বা কমিশনের কোনও কথাই শোনা হয়নি । বলতেই দেওয়া হয়নি । খালি ওই একজন সিনিয়র আইনজীবী ছাড়া আর কারও কথাই শোনেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ।"

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "যে কোনও মামলার শুনানি করার আগে মামলায় কী আর্জি এবং তার স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ নিয়ে তবেই সওয়াল করতে হয় । একটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে আর্জি জানাতে গেলে, তার পক্ষে প্রমাণ কই ? স্কুল সার্ভিস কমিশন সিঙ্গল বেঞ্চে ভয়ে ভয়ে ছিল সবসময় । সব কিছু চুপিচুপি করা হয়েছে কেন ? 2018 সালের 28 অগস্ট যে গ্রুপ ডির প্যানেল হয়েছিল, তার তিন বছর পরে কেন মামলা ? প্যানেল এক বছর পর এক্সপায়ার হয়ে যায় নিয়ম অনুয়ায়ী । তাহলে কী করে তিন বছর পর সেই নিয়ে প্যানেল বাতিলের আর্জিতে মামলা হয় ? এবং সিঙ্গল বেঞ্চ কী করে সেই মামলার শুনানি করে ? অবিলম্বে এই মামলা খারিজ করা উচিত ।"

অন্যদিকে, কল্যাণের পালটা জবাব দিয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব ফের হলফনামা দিয়ে জানাচ্ছেন যে, তাঁরা আরও 183 জনকে নবম-দশমে ভুল করে সুপারিশ পত্র দিয়েছিলেন । গ্রুপ-ডি তে 2019 সালের চার মে-র প্যানেলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর 609 জন প্রার্থীকে ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছিল সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন ৷ বাগ কমিটি রিপোর্ট দিয়ে এ কথা জানিয়েছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানায়, কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।"

এ কথা শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা একে একে জেলে গিয়েছেন । কিন্তু যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কী চাকরি গিয়েছে ? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, সিঙ্গল বেঞ্চ তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল । কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আপাতত সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে । ফলে যাঁদের চাকরি গিয়েছিল, তাঁরা আপাতত কার্যত ঝুলে রয়েছেন বলা যায় । মোদ্দা কথা, তাঁদের বিষয়টি সেই অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে ।

দুর্নীতি নিয়ে বলতে গয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আরও বলেন, যাঁরা ওই মার্কশিট তৈরি করেছেন, তাঁরাই আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন হ্যাঁ সমঝোতা হয়েছে । সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি নিয়োগের ক্ষেত্রে । এটা নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সব ক্ষেত্রেই হয়েছে । কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে । বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়ার পর বেতন নেওয়াও বেআইনি । ফলে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়াই উচিত । কিন্তু এখনও অনেকেই বেতন পাচ্ছেন । আগামিকাল ফের শুনানি রয়েছে এই মামলার ।

আরও পড়ুন:

  1. আড়াল থেকে হাইকোর্টের দ্বারে শেখ শাহজাহান, সন্দেশখালির মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন
  2. কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর প্রমাণ হিসাবে এখনই ব্যবহার করতে পারবে না ইডি, নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের
  3. প্রাথমিকে নিয়োগ প্যানেল নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশ খারিজ ডিভিশন বেঞ্চে

কলকাতা, 15 জানুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে আদালতে বাকযুদ্ধে জড়ালেন সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ সওয়াল-জবাবে একে-অপরকে কড়া ভাষায় বিঁধেছেন তাঁরা ৷

রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য । প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত সব স্তরেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে এবং তার সিবিআই তদন্ত চলছে । সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সমস্ত মামলার শুনানির জন্য হাইকোর্টে নতুন বেঞ্চ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল । সেই মতোই বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রশিদীর ডিভিশন বেঞ্চ গঠিত হয়েছে । সেই বেঞ্চে সোমবার শুনানির প্রথম দিনেই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতি ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

এ দিন দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানির শুরুর দিনেই চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য সংক্রান্ত কপি রাজ্যকে না দেওয়া নিয়ে তাঁদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উপর প্রায় বিষোদ্গার করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

তিনি বলেন, "বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যই যেন দেশের একমাত্র সৎ ব্যক্তি । আর কেউ নেই । সিঙ্গল বেঞ্চে কী হয়েছে সবাই জানে । সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আর সিবিআই মিলে বিচারপর্ব চালিয়েছে । সেখানে রাজ্যের বা কমিশনের কোনও কথাই শোনা হয়নি । বলতেই দেওয়া হয়নি । খালি ওই একজন সিনিয়র আইনজীবী ছাড়া আর কারও কথাই শোনেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ।"

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "যে কোনও মামলার শুনানি করার আগে মামলায় কী আর্জি এবং তার স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ নিয়ে তবেই সওয়াল করতে হয় । একটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে আর্জি জানাতে গেলে, তার পক্ষে প্রমাণ কই ? স্কুল সার্ভিস কমিশন সিঙ্গল বেঞ্চে ভয়ে ভয়ে ছিল সবসময় । সব কিছু চুপিচুপি করা হয়েছে কেন ? 2018 সালের 28 অগস্ট যে গ্রুপ ডির প্যানেল হয়েছিল, তার তিন বছর পরে কেন মামলা ? প্যানেল এক বছর পর এক্সপায়ার হয়ে যায় নিয়ম অনুয়ায়ী । তাহলে কী করে তিন বছর পর সেই নিয়ে প্যানেল বাতিলের আর্জিতে মামলা হয় ? এবং সিঙ্গল বেঞ্চ কী করে সেই মামলার শুনানি করে ? অবিলম্বে এই মামলা খারিজ করা উচিত ।"

অন্যদিকে, কল্যাণের পালটা জবাব দিয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের সচিব ফের হলফনামা দিয়ে জানাচ্ছেন যে, তাঁরা আরও 183 জনকে নবম-দশমে ভুল করে সুপারিশ পত্র দিয়েছিলেন । গ্রুপ-ডি তে 2019 সালের চার মে-র প্যানেলের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর 609 জন প্রার্থীকে ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছিল সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন ৷ বাগ কমিটি রিপোর্ট দিয়ে এ কথা জানিয়েছিল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে । কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানায়, কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।"

এ কথা শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানতে চান, যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা একে একে জেলে গিয়েছেন । কিন্তু যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কী চাকরি গিয়েছে ? বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, সিঙ্গল বেঞ্চ তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল । কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আপাতত সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে । ফলে যাঁদের চাকরি গিয়েছিল, তাঁরা আপাতত কার্যত ঝুলে রয়েছেন বলা যায় । মোদ্দা কথা, তাঁদের বিষয়টি সেই অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে ।

দুর্নীতি নিয়ে বলতে গয়ে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আরও বলেন, যাঁরা ওই মার্কশিট তৈরি করেছেন, তাঁরাই আদালতে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছেন হ্যাঁ সমঝোতা হয়েছে । সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি নিয়োগের ক্ষেত্রে । এটা নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সব ক্ষেত্রেই হয়েছে । কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে চাকরি দেওয়া হয়েছে । বেআইনি ভাবে চাকরি পাওয়ার পর বেতন নেওয়াও বেআইনি । ফলে তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়াই উচিত । কিন্তু এখনও অনেকেই বেতন পাচ্ছেন । আগামিকাল ফের শুনানি রয়েছে এই মামলার ।

আরও পড়ুন:

  1. আড়াল থেকে হাইকোর্টের দ্বারে শেখ শাহজাহান, সন্দেশখালির মামলায় যুক্ত হওয়ার আবেদন
  2. কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর প্রমাণ হিসাবে এখনই ব্যবহার করতে পারবে না ইডি, নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের
  3. প্রাথমিকে নিয়োগ প্যানেল নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশ খারিজ ডিভিশন বেঞ্চে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.