কলকাতা, 27 এপ্রিল: আগামী 9 মে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে পারফর্ম করতে চলেছেন বাংলার তাবড় শিল্পীরা ৷ এই নিয়ে রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়েছে ৷ সাংস্কৃতিক এই অনুষ্ঠান কি আদপে তারকাদের গেরুয়া রাজনীতিতে যোগদানের মহড়া ? এই প্রশ্নে বঙ্গ রাজনীতি তোলপাড় হলেও, নামী শিল্পীরা ভিন্ন মতই পোষণ করছেন ৷ তাঁদের মতে, শিল্পীরা এই ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন শুধুই সংস্কৃতির টানে ৷ এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই ৷
25 বৈশাখ অর্থাৎ 9 মে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । সূত্রের খবর, এ দিন রাজ্যে আসতে পারেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাও । এ বছর রবীন্দ্র জয়ন্তীতে অমিত শাহ প্রথমে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে যেতে পারেন । এরপরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ তিনি যাবেন সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে । সেখানে 'খোলা হাওয়া' র নিবেদনে 'আমাদের রবীন্দ্রনাথ' শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন টলিকুইন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শংকর, সঙ্গীতশিল্পী সোমলতা আচার্য, আবৃত্তি শিল্পী মেধা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে । এঁদের অনুষ্ঠান পরিবেশনায় মুখরিত হয়ে উঠবে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়াম ।
এ দিনের অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা অমিত শাহ । তা ছাড়াও থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্ত । হাজির থাকবেন আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা । এঁদের উপস্থিতি থাকলেও এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানা গিয়েছে । উল্লেখ্য, 'খোলা হাওয়া'র সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত স্বপন দাশগুপ্ত । আর পাঁচটা সাংস্কৃতিক সংস্থা যেভাবে এই দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে, তেমনই মেতে উঠবে 'খোলা হাওয়া' । এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগসূত্র নেই । তবে এ কথাও ঠিক, কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে রাজনৈতিক নেতৃত্বদের পাশাপাশি শিল্পীদের উপস্থিতি আমজনতার মনে নানাবিধ প্রশ্নের বাতাবরণ তৈরি করে । তা হলে কি সংশ্লিষ্ট দলে হাত মেলালেন সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিল্পী ?
এই ব্যাপারে তনুশ্রী শংকরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "প্রথমত আমার এই শো নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছে নেই । তবে একটা কথা আমি বলতে চাই, আমরা তো শিল্পী, আমাদের যে-ই ডাকুক না কেন, আমরা শো করব । আমাদের পৃথিবীটা হল অনস্টেজ এবং ব্যাকস্টেজ । ফ্রি থাকলে যে যখনই আমাদের শো করতে ডাকুক, আমরা করব । এতে অন্য কোনও কিছু খুঁজলে চলবে না ।"
এ প্রসঙ্গে নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দত্ত বলেন, "প্রথমত এ রকম ধরে নেওয়ার কোনও মানে নেই । দ্বিতীয় কথা হল, শিল্পীরা এখনই এত পলিটিক্সে আসছে । আগে এত আসত না । এই সুযোগও ছিল না । রাজনীতিতে এলে যে সুবিধা আজ পাওয়া যায়, সেগুলো আগেকার দিনে ছিল না । ফলে এই প্রশ্নগুলোও উঠত না । আমার নিজের কেরিয়ারেও এমন হয়েছে যে, এক মঞ্চে নেতা মন্ত্রীরাও আছেন, আমিও আছি । অনেক নেতা মন্ত্রীকে তখন চিনতামও না । অনেক শিল্পী আজ যেহেতু জড়িয়ে যাচ্ছেন রাজনীতির সঙ্গে তাই এত প্রশ্ন উঠছে । কিছু দল অনেক সুবিধাও দিয়ে থাকে । ফলে শিল্পীরা বেশিই আসছেন । আর সেই কারণেও কথা উঠছে । আবার এটাও ঠিক, কোনও শিল্পীর যদি রাজনীতি করার ক্ষমতা থাকে তিনি করলে আপত্তি কোথায় ? কিন্তু কোনও শিল্পী কখনও কোনও দলের হয়ে শো করতে যায় না । তিনি দর্শকের কাছে পৌঁছতে যান । আমি কখনও কেউ শো-এর জন্য এলে তাঁকে জিজ্ঞেস করি না তিনি কোন দল থেকে এসেছেন । আমার মতো সব শিল্পীই হয়ত সেটাই ভাবেন । তাই দর্শক এগুলো না ভাবলেই ভালো ।"
এই ব্যাপারে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বেজে যায় । কারণ তিনি উত্তরবঙ্গে শুটিঙে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে, তাঁর তরফে তাঁর বন্ধু তথা সহকারী তথা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত আসন্ন ছবি 'দত্তা'র পরিচালক নির্মল চক্রবর্তী বলেন, "এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনও দলের রাজনৈতিক ঝান্ডার সম্পর্ক নেই বলেই জানি । ঋতুপর্ণাও সে রকমই জানেন । শিল্পী তাঁর শিল্প তুলে ধরবেন দর্শকের সামনে । সেখানে কে বক্তব্য রাখছেন, তিনি কোন দলের সেটা বড় ব্যাপার নয় । যে কেউ উপস্থিত থাকতে পারেন সেখানে । সকলেরই নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত রয়েছে । সুতরাং এই নিয়ে কাটাছেঁড়া না করাই ভালো বলে মনে করেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ।"
আরও পড়ুন: 'গজিয়ে উঠছে আরেকটা ইন্ডাস্ট্রি', ফিল্মফেয়ার প্রত্যাখ্যান করে বিস্ফোরক বিবেক অগ্নিহোত্রী