কলকাতা, 9 এপ্রিল : বাংলার ভূখণ্ডে এ যেন এক টুকরো চিন । না এটা কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের কাহিনী নয় । বা কোন বিভাজনের বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গল্প নয় । বরং বাংলার মিশ্র সংস্কৃতিতে বিবিধের মধ্যে ঐক্যের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ ।
ষাটের দশক থেকেই কলকাতার বুকে এই চায়না কলোনি গড়ে উঠেছিল । বিভিন্ন সময়ে ভারতে আসা চিনা গোষ্ঠীর একটা ছোট অংশ এখানে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস করতে শুরু করে ওই সময় থেকেই । সংখ্যায় নেহাতই কম নয় । কিন্তু পরিচয়ে তাঁরা চিনা বংশধর হলেও পুরোমাত্রায় ভারতীয় ।
জন্মসূত্রে এবং বাকি সব দিক দিয়ে এরা আমার আপনার মতই এই গণতন্ত্রের বাসিন্দা । সবচেয়ে বড় কথা, এরা সুশি - চাউমিনের ভক্ত হলেও আদতে এই বাংলারই ভোটার । বাংলার মানচিত্র থেকে তাই তাঁদের আলাদা করা যাবে না । বরং বলা যেতে পারে বাংলার বুকেই যেন এ একটুকরো সাংহাইয়ের ছবি ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রতি ভোটে এই পাড়ায় দেওয়াল লেখা হয় চিনা ভাষায় । তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও এই ছবি অন্যত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না । আর এই পরিচয়টাই ট্যাংরার এই এলাকাকে আরও বৈচিত্রময় করে তোলে ।
আরও পড়ুন : রাম ভক্ত হলেও অন্ধ ভক্ত হবেন না, আর্জি দেবের
কলকাতায় চিনাদের অভিবাসন বাড়তে থাকে তিন ও চারের দশক জুড়ে । চিনের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও জাপানের সঙ্গে চিনের যুদ্ধের ফলে 1927-1949 সময়কালে বহু চিনা দেশ ছেড়েছেন । চিনের গৃহযুদ্ধ (1927-1949) এবং দ্বিতীয় চিন-জাপান যুদ্ধ (1937-1945) সে দেশে খাদ্যের অপ্রতুলতা, নিরাপত্তাহীনতা, অস্থির পরিবেশ এবং কর্মহীনতা সৃষ্টি করেছিল । দেশে ছেড়ে চিনারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যেতে শুরু করেন, কেউ কেউ আরও দক্ষিণ পশ্চিমে, ভারতের উদ্দেশে পাড়ি দেন ।
জয়তী ভট্টাচার্য ও কুনুর কৃপালনি তাঁদের এক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, তাঁদের একটা অংশ এখন এই পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা । তাঁদের সকলেরই ভোটার কার্ড আছে । আধার, প্যান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিচয় পত্রও আছে । জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের তাঁরাও যোগদান করেন সাধারণ ভারতীয়দের মতোই ।
আমরা বারবার বলি ভারত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের এক দেশ । নির্বাচনের ছবি সেই বৈচিত্রের মিশেলকে তুলে ধরে । ভোট এখানে এমন একটা উৎসব যেখানে দুটি সংস্কৃতি মিলে মিশে এক হয়ে যায় । কলকাতার এই টেরেটি বাজার আজও অনন্য ।