কলকাতা, 21 জানুয়ারি : এখনও কয়েক মাস বাকি বিধানসভা নির্বাচনের । ভোটের দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়নি এখনও । তবে রাজ্যে এই হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যেও ভোটের উত্তাপ কিন্তু বেশ ভালোই অনুভব করছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল । স্নায়ুর লড়াই চলছে নীলবাড়ির দখল নিয়ে । রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করছে, এই মূহূর্তে সবথেকে বেশি চাপে তিনি যিনি নীল বাড়ির চোদ্দ তলায় বসে রয়েছেন ।
বিগত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই হালকা আভাস পাওয়া গেলেও উনিশের লোকসভা ভোটে যেন মাথা-চাড়া দিয়ে উঠেছে গেরুয়া হাওয়া । আর এখন যেভাবে একের পর এক জেলাস্তরের নেতা ঘাসফুলের জার্সি ছেড়ে পদ্মফুলের জার্সি পরতে শুরু করেছেন তাতে ভিতরে ভিতরে বেশ চাপেই রয়েছে তৃণমূল । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কথায়, যতই একজন-দু'জন সুজাতাকে 'ভাঙিয়ে' আনুক না কেন, শুভেন্দুকে খোয়ানোর ধাক্কা এত সহজে মেটার নয় ।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে কাছে টানতে কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্যবাসীর জন্য একের পর এক বড় বড় ঘোষণা । প্রথমে রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা । সেই যে শুরু হয়েছে, তা আজও চলে আসছে । বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে ছানি অপারেশনের ঘোষণা । আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যজুড়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে 20 লাখ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ছানি অপারেশন করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । 8 লাখ 25 হাজার মানুষকে ফ্রিতে চশমা দেবেন বলেও জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন : রাজ্যে সংখ্যালঘু জোটের হাওয়া, চাপে মমতার ভোট ব্যাঙ্ক
এরপর আজ আবারও বড় ঘোষণা । এক সপ্তাহের মধ্যে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্যাব অথবা স্মার্টফোন কেনার জন্য টাকা পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । রাজ্যের 9 লাখ পড়ুয়া ট্যাব কেনার সুযোগ পাবেন । ভোটের আগে রাজ্যবাসীর 'মন পেতে' উঠে পড়ে লেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী । শুধু তাই নয়, সবুজসাথী প্রকল্পের আওতায় আরও 20 লাখ সাইকেল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
ভোটের মাস খানেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে কল্পতরু হয়ে ওঠার কী কারণ থাকতে পারে ? তবে কি বিজেপি হাওয়াকে সামাল দিতে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে ।
আরও পড়ুন : শুভেন্দুকে আইনি নোটিস অভিষেকের, নিঃশর্ত ক্ষমার দাবি
তৃণমূলের সঙ্গ ছাড়ার পর থেকে শুভেন্দু হয়ে উঠেছেন বিজেপির পোস্টার বয় । যেখানেই সভা হোক, শুভেন্দুকে যেন এখন চোখে হারাচ্ছে রাজ্যের গেরুয়া শিবির । আর তা হবে নাই বা কেন ! সংগঠক শুভেন্দুর কদর বোঝেন না এমন রাজনীতিবিদ বাংলায় খুব কমই আছেন । আর সেই শুভেন্দুই যখন জার্সি বদলে বারবার বলছেন, কেন্দ্রে ও বাংলায় একই সরকার চাই, তখন তো কিছুটা স্নায়ুর চাপ নবান্নের চোদ্দ তলার এসি ঘরে বসেও অনুভব করছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
শুধুমাত্র সাংগঠনিক দিক থেকে কি তবে বিজেপি হাওয়া সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী ? আর সেই স্নায়ুর চাপ থেকেই কি একের পর এক বড় ঘোষণা ? রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, আগামী দিনগুলিতে ভোটের নির্ঘণ্ট যত এগিয়ে আসবে, এই ধরনের চাপ তত বাড়তে চলেছে রাজ্যের শাসক দলের উপর । সেদিক থেকে কি তবে ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে রাজ্যবাসীর জন্য আরও বড় কোনও ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী ? সঠিক সময়েই তার উত্তর মিলবে ।