কলকাতা , 9 সেপ্টেম্বর : অবশেষে গ্রেপ্তার করা হল আনন্দপুরের ঘটনার মূল অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডে-কে । গতকাল গভীর রাতে দমদম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৷ দমদমে এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল অভিষেক । কলকাতা পুলিশের আনন্দপুর থানা এবং গোয়েন্দা বিভাগের দল সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় ইতিমধ্যে ধৃত জানিয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে “নির্যাতিতা"র সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার দিন সন্ধে থেকেই একসঙ্গে ছিল তারা। ছোটখাটো একটি বিষয় নিয়ে হঠাৎ করে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। সেই ঝগড়ার পরিণামে “নির্যাতিতা" গাড়ি থেকে নেমে যেতে চায় । কিন্তু, সেটা চায়নি অভিযুক্ত অভিষেক পান্ডে। বাধা দিতে গেলে ওই যুবতি তার হাতে কামড়ে দেয় ৷ সেই অবস্থায় অভিষেক চড় মারে যুবতিকে । গাড়ি থেকে নামার সময় দরজার কোণে লেগে যুবতির জামার অংশ ছিঁড়ে যায় । পুলিশ সূত্রে জানা গেছে , এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে ওই যুবতিও। অর্থাৎ স্বল্প পরিচিত এক যুবকের মাধ্যমে শ্লীলতাহানির যে গল্প শুনিয়েছিলেন যুবতি , তার বেশিরভাগটাই ঠিক নয় ।
জেরায় অভিষেক আরও জানিয়েছে, তাদের অভ্যন্তরীণ এই বচসায় অন্য কেউ চলে আসবে এটা ভাবতেও পারেনি অভিষেক । কিন্তু নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় এবং দীপ শতপথি সামনে চলে আসায় সে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় । তাই দ্রুত পালাতে গিয়েছিল । আর তাতেই বিপত্তি । সে গাড়িটা কাটানোর চেষ্টা করেছিল , কিন্তু তাতেও পুরোটা না কেটে নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের পায়ের উপর দিয়ে চাকার অংশ চলে যায় ।
লালবাজার সূত্রে খবর, অভিষেকের দাবি এখনই পুরোটা মানা হচ্ছে না । আজ আলিপুর আদালতে পেশ করে তার পুলিশ-হেপাজত চাওয়া হবে । হেপাজতে নেওয়ার পরেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে ধারণা তদন্তকারীদের । তখন ওই যুবতি ও অভিষেককে সামনাসামনি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে ।
আরও পড়ুন , যুবতির শ্লীলতাহানি রুখল দম্পতি, মহিলার পা পিষে পালাল অভিযুক্ত
শনিবার রাতে আত্মীয়র বাড়ি থেকে গাড়ি করে ফিরছিলেন আনন্দপুরের দম্পতি নীলাঞ্জনা চ্যাটার্জি এবং দীপ শতপথি । সেই সময় রাস্তায় অন্য একটি গাড়ি থেকে এক যুবতির বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনতে পান তাঁরা । দেখেন, গাড়ির চালক ওই যুবতির সঙ্গে অভব্য আচরণ করছে । সেই সময় ওই যুবতিকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে বিপদে পড়েন ওই দম্পতি । তাঁদের দেখে যুবতিকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পালায় ওই যুবক । পালানোর সময় গাড়ির চাকায় নীলাঞ্জনাদেবীর পা পিষে দিয়ে চলে যায় অভিযুক্ত । ঘটনায় গুরুতর জখম হন ওই মহিলা ।
আরও পড়ুন , আনন্দপুরের ঘটনায় যুবতির বয়ানে অসংগতি, উদ্ধার অভিযুক্তের গাড়ি
এরপর ওই যুবতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ৷ ঘটনার রাত অর্থাৎ শনিবার নির্যাতিতা যুবতি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তর সঙ্গে 5 দিন আগে সোশাল মিডিয়ায় আলাপ। তা থেকে ঘনিষ্ঠতা। সেই সূত্র ধরে প্রথমবার দেখা করতে গিয়েছিলেন যুবতি। সামনাসামনি দেখা হওয়ার পর যুবতিকে মুখোমুখি হতে হয় এক চূড়ান্ত খারাপ অভিজ্ঞতার। গভীর রাত হয়ে গেলেও ওই যুবতিকে অভিযুক্ত বাড়ি যেতে দিতে চায়নি । অভিযোগ, বাড়ি ছেড়ে দিতে বললে শুরু হয় মারধর। করা হয় শ্লীলতাহানি । এরপরই তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য । সোমবারই অভিযুক্তের মা দাবি করে , পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ওই যুবতির সঙ্গে আলাপ রয়েছে অভিযুক্তের ।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ সোমবার যাদবপুরের একটি আবাসন থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয় ৷ এরপর গতকাল দমদম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে আনন্দপুর থানার পুলিশ ৷