কলকাতা, 25 অগাস্ট: অসুস্থতা তাঁকে কাবু করতে পারেনি । বইয়ের ব্যবসার পাশাপাশি দানধ্যান করতেও ভালোবাসতেন তিনি । তবে, ইদানিং কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় কিছুই করতে পারতেন না । বরাবরই ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর নিজের অঙ্গদান করবেন ৷ ইচ্ছা মতো, শুক্রবার রাতে লিভার প্রতিস্থাপিত করা হল এক রোগীর শরীরে । উলটোডাঙার EM বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা ৷
শ্রীতেশ দত্ত রায় (47) । বাড়ি সোদপুর । গড়িয়াহাটে তাঁর বইয়ের দোকান । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ গত বৃহস্পতিবার সকালেও সকলের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেছিলেন । সমস্যার সূত্রপাত হয় ওই দিন সকাল 11টা নাগাদ ৷ আচমকা বমি করতে শুরু করেন । গলব্লাডারে স্টোনের কারণে মাঝে মধ্যে বমি করতেনই । পরে ধীরে ধীরে ঠিকও হয়ে যেত ৷ সেদিন অতিরিক্ত বমি হওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভরতি করেন । সেখানে সিটি স্ক্যান হয় । সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, রোগীর অবস্থা ভালো নয় । তাঁর চিকিৎসার জন্যে সেখানে যথাযথ পরিকাঠামো নেই । তাই তাঁরা রোগীকে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন । ওইদিনই বেলা দুটো নাগাদ উলটোডাঙার কাছে EM বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয় । চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোক হয়েছে শ্রীতেশবাবুর ৷ অবস্থা ভালো নয় । তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় । পরদিন চিকিৎসকরা ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন ৷ ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর শ্রীতেশবাবুর অঙ্গদানের সম্মতি জানান তাঁর পরিজনরা । তবে, তাঁর লিভার এবং কর্নিয়া দান করা সম্ভব হয়েছে ।
শ্রীতেশবাবুর জামাই বাপ্পা কর বলেন, "দানধ্যান করতে বরাবরই ভালোবাসতেন বাবা । রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ কোনও মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতেন । 2-3 বছর আগে ব্লাড সুগার ধরা পড়ে । এর জন্য আতঙ্কে থাকতেন । এরপরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে । গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ডায়ালিসিস শুরু হয় । অঙ্গদানের ইচ্ছা ছিল । তাই আমরা অঙ্গদানের কথা বলি ।" পরিজনদের এই সম্মতি পাওয়ার পর শুরু হয় গ্রহীতার খোঁজ । শুক্রবার রাতে ওই বেসরকারি হাসপাতালেই দমদমের বাসিন্দা 56 বছর বয়সি এক রোগীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় । গতকাল সকালে এই প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ওই লিভার গ্রহীতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ।
বাপ্পা বলেন, "অঙ্গদান, মহৎ কাজ । বাবাকে দেখে আমরা শিখেছি । আমি ও আমার স্ত্রী অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছি ।"