জলপাইগুড়ি, 7 অক্টোবর: বাংলা নয়, মধ্যপ্রদেশের হয়ে ন্যাশনাল গেমসে (National Games) দুটি সোনা জিতলেন এশিয়াডে সোনার মেয়ে অর্জুন স্বপ্না বর্মন (Swapna Barman)। এশিয়াডে জয়ের পর পারফরম্যান্সে খামতি হয়েছিল । তাই টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াড স্কিমে দেশের 258 জনের নাম থাকলেও নাম ছিল না পশ্চিমবঙ্গের সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মনের । বিভিন্ন সময় চোট আঘাত থেকে স্বপ্নার পারফরম্যান্স খানিকটা খারাপ হয় । সমালোচকরা এক হাত নেন স্বপ্নাকে । স্বপ্না আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে তোপ দাগাও শুরু হয়ে যায় । এরপর থেকে স্বপ্না ফের তাঁর অনুশীলন শুরু করেন । কোচ সুভাষ সরকারের পরামর্শ মেনে চলে কঠোর অনুশীলন । ফলস্বরূপ গুজরাতে হওয়া ন্যাশনাল গেমসে দুটো সোনা জিতে সমালোচকদের যোগ্য জবাব দিলেন স্বপ্না (Swapna Barman Wins Double Gold)।
গুজরাতের গান্ধিনগরে অনুষ্ঠিত 36তম ন্যাশনাল গেমসে হেপ্টাথেলনে সোনা জিতলেন স্বপ্না বর্মন । মধ্যপ্রদেশের হয়ে স্বর্ণপদক জয়ের ফলে উচ্ছ্বসিত মধ্যপ্রদেশ সরকার । গুজরাতে 29 সেপ্টেম্বর থেকে আয়োজিত ন্যাশনাল গেমসে সোনা জিতে স্বপ্না মুখ উজ্জ্বল করলেও বাংলার মেয়ে পশ্চিমবঙ্গের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ না পেয়ে মধ্যপ্রদেশের হয়ে খেলায় অংশ নেন । আর তাতেই বাজিমাত করেন তিনি । গান্ধিনগরে ন্যাশনাল গেমসে 1.83 মিটার হাইজাম্প দিয়ে মহিলাদের মধ্যে নতুন রেকর্ড গড়েছেন স্বপ্না বর্মন । অন্যদিকে হেপ্টাথেলনে সাতটি ইভেন্ট মিলিয়ে সোনা জেতেন স্বপ্না ।
স্বপ্না বর্মনের নাম নেই টপ 258 তে । টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াড স্কিমে দেশের 258 জন খেলোয়াড়ের নাম থাকলেও সেই জায়গায় নাম ছিল না পশ্চিমবঙ্গের সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মনের । স্বপ্নার নাম যুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীকে চিঠি দেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েটসের সাধারণ সম্পাদক বংশীবদন বর্মন । এশিয়াডে হেপ্টাথেলনে ভারতের প্রথম সোনাজয়ী মেয়ের নাম না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই মর্মাহত হয়ে পড়েছিল স্বপ্নার পরিবার ও তাঁর গ্রাম জলপাইগুড়ি পাতকাটা গ্রামপঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া ।
আরও পড়ুন: রেল মিটে সোনা জিতলেন স্বপ্না
2018 সালে স্বপ্না বর্মন এশিয়াডে সোনা জয় করে দেশের নাম উজ্জ্বল করেন । এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রেলে চাকরি দেওয়া হয় স্বপ্না বর্মনকে ৷ পাশাপাশি স্বপ্নাকে অর্জুন পুরস্কারের ভূষিত করা হয় । কিন্তু টপ 258-এ স্বপ্নার নাম কেন নেই সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তিনি নিজেও । যদিও সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্বপ্না । জানা গিয়েছে, এই তালিকায় নাম থাকলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাঁদের খেলোধুলোর সমস্ত খরচ দেওয়া হয় ৷ এমনকী 25 হাজার টাকা করেও দেওয়া হয় ৷ তালিকায় নাম না থাকলেও স্বপ্না চালিয়ে যান তাঁর অনুশীলন । এরপর মধ্যপ্রদেশের হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি ।
এরপর স্বপ্না বর্মন অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি ইভেন্টে সোনা ও রুপো জেতেন ৷ উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের হয়ে খেলেন তিনি । চলতি বছর মার্চ মাসে কলকাতায় আয়োজিত অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের হয়ে খেলেন স্বপ্না ।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেলের স্টাফ ওয়েলফেয়ার ইনস্পেকটর হিসেবে কর্মরত স্বপ্না বর্মন । জাভলিন থ্রোতে সোনা জয় করার পাশাপাশি হাইজাম্পে রুপো জেতেন তিনি । এরপরেই মধ্যপ্রদেশের হয়ে ন্যাশনাল গেমসে অংশ নিয়ে দুটো সোনা জিতলেন স্বপ্না বর্মন ।
মধ্যপ্রদেশের হয়ে খেলে সোনা জিতলেও বাংলার মেয়ে বাংলার হয়ে খেলতে না পেরে আক্ষেপ রয়েছে স্বপ্নার পরিবারের । স্বপ্নার দাদা পবিত্র বর্মন বলেন, "বোন এশিয়াডে জয়ের পর বড় একটা ইভেন্টে ভালো ফল করল । খুব খুশি আমরা ৷ কিন্তু একটা দুঃখও আছে । বোন মধ্যপ্রদেশের হয়ে সোনা জিতলেও বাংলার হয়ে খেলতে পারল না । পশ্চিমবঙ্গের হয়ে খেললে আরও ভালো লাগত । মাঝে অনেকেই বলেছিল, স্বপ্না আর কিছুই করতে পারবে না । কিন্তু বোন চুপ করে অনুশীলন করে গিয়েছে । একটা প্রবাদ আছে "সবর কা ফল মিঠা হোতা হ্যায়"। তাই সোনা নিয়ে সমালোচকদের জবাব দিয়েছে বোন ।"
এই সাফল্যের পর স্বপ্না জানিয়েছে, "আগামীতে কঠোর অনুশীলন করে আমি আমার খেলা চালিয়ে যেতে চাই । চোট আঘাতের কারণে মাঝেমধ্যেই আমার পারফরম্যান্স খারাপ হয় ঠিকই । কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে স্থির থেকে খেলা চালিয়ে যেতে চাই ।"