হাওড়া, 29 জুন: পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দম ফেলার ফুরসৎ নেই হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের থানা মাকুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পোদরা সরকার পাড়ার বোস পরিবারের । তিন দলের প্রার্থী সেই পরিবারের তিন বউ, ভোটে লড়ছেন এক বাড়ি থেকেই !
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল, বিজেপি ও জাতীয় কংগ্রেস যুযুধান তিন রাজনৈতিক দল হলেও সাঁকরাইল ব্লকের এই গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন প্রার্থীরই বসবাস একই বাড়িতে । যদিও রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও হিংসা নেই বোস পরিবারের তিন প্রার্থীর মধ্যে । তিন প্রার্থীরই এক বক্তব্য, এলাকার সাধারণ মানুষ যাঁকে নির্বাচিত করবেন তিনিই জয়ী হবেন । যদিও জয়ের বিষয়ে যথেষ্টই আত্মবিশ্বাসী বোস বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারের তিন বউই ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন । প্রতিটি রাজনৈতিক দলই রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ভোটপ্রচারে । একইভাবে সরকার পরিবারের তিন গৃহবধূও 113 নম্বর বুথে গ্রামসভাতে জয়ী হতে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন । চলছে দেওয়াল লিখন ৷ ওই বুথে একই পরিবারের তিনজন প্রার্থীই সক্রিয় রাজনীতিতে কোনওদিন ছিলেন না । বলা যেতে পারে, পঞ্চায়েত ভোটেই তাঁদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি । যদিও গত নির্বাচনে সরকার বাড়ির বড় গৃহবধূর নির্দল হিসাবে প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৷
বোস পরিবারের তিন বধূ গৃহস্থালীর কাজের ফাঁকে ফাঁকেই বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরু করেছেন । তিনজনের একই বক্তব্য, রাজনীতির ময়দানে যিনিই জিতুন না কেন, কোনওভাবেই হিংসার রেশ তাঁদের পরিবার বা গ্রামের মানুষের মধ্যে পড়বে না ৷ ঘরের উঠোন পাড় করে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখলেও, নিজেদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়েনি বলে জানালেন তিন জা ।
বোস পরিবারে তিন ভাইয়ের এক হাঁড়ি, তিন জায়ের মধ্যে সম্পর্ক তিন বোনের মতো ৷ ভোটের ময়দানে তাঁরাই আজ তিন যুযুধান । ভিন প্রতীকে ভোটে দাঁড়িয়ে পাড়ায় রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন তাঁরা । পরিবারের বড় বৌমা নীলিমা বোস এ বার ভোটে লড়ছেন কংগ্রেসের হয়ে । মেজ জা কাকলি বোসের প্রতীক ঘাসফুল । তিনি তৃণমূলের প্রার্থী । তৃতীয় ও ছোট জা পিঙ্কি বোস দাঁড়িয়েছেন পদ্ম ফুল চিহ্নে ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে একই আসনে তিন দলের প্রার্থী তিন মামি, আগাম শুভেচ্ছা মিমির
নিজেদের দলীয় প্রতীক পেতেই জোর কদমে তাঁরা শুরু করেছেন ভোটের প্রচার । দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে পোস্টার তৈরি, এলাকায় দলীয় পতাকা লাগানোর কাজ, সবেতেই হাত লাগাচ্ছেন তিনজন । বাড়িতে একসঙ্গেই ঘরের কাজে হাত লাগালেও ভোটের ময়দানে তাঁরাই নিজেরাই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী । তাঁরা জানালেন, সারাদিন দুই দলের হয়ে প্রচার করলেও সন্ধ্যায় প্রচার শেষে ঘরে ফিরে আবারও চেনা ছন্দে থাকেন তাঁরা । হাসিঠাট্টায় দিন কাটে তাঁদের ।
ওই বুথে বিজেপি প্রার্থী পিঙ্কি বোস বলেন, “আমার বড় জা নীলিমা বোস কংগ্রেসের, মেজ জা কাকলি বোস প্রার্থী হয়েছে তৃণমূলের । আমি বিজেপির প্রার্থী । সবাই ভোটের প্রচার করছে। আমি আমার মতো প্রচার করছি । তবে ভোটের রাজনীতি আমাদের সংসারে কোনও দাগ কাটে না । আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো । জয়ের বিষয় আমি ওই বুথের ভোটদাতাদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছি । তাঁরা যাঁকে পছন্দ করবেন তিনিই জয়ী হবেন । তবে বাড়ির রাস্তার উন্নয়ন হোক এটা আমি চাই ।”
বোস বাড়ির মেজ বৌ কাকলির কথায়, দলীয় রাজনীতির প্রভাব কখনওই সংসারে পড়বে না । তিনি বলেন, “সম্পর্ক এক জায়গায় আর রাজনীতি এক জায়গায় । এই দুইকে আমরা কেউই গুলিয়ে ফেলছি না । ভোট মানুষ দেবেন । যাঁকে বেছে নেবেন, তিনিই আগামী 5 বছর মানুষের কাজ করবেন । রাজনীতির প্রভাব আমাদের সংসারে এখনও পড়েনি আর আগামী দিনেও পড়বে না বলেই আমি মনে করি । আমার জয়ী হওয়ার বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী ।”
একইভাবে পরিবারের বড় বউ ও কংগ্রেসের প্রার্থী নীলিমা বোস বলেন, "আমি আগের পঞ্চায়েতে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম । যদিও প্রত্যক্ষ রাজনীতির কোনও অভিজ্ঞতা আমার নেই । একই পরিবারের তিনজন সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পাড়ার বাসিন্দারাও ধন্দে পড়েছেন কাকে ভোট দেবেন । তিন জা আমরা তিনজনের মতো প্রচার করছি ।"
তিন জায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি বেশ উপভোগ করছেন বোস পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা । পরিবারে সদ্য বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হওয়া বউমা তনুশ্রী বোস বলেন, "এত দিন পাড়াতে কেউ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে দেখতাম । এ বার নিজের পরিবারেই তিন শাশুড়ি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, এটা নতুন বিষয় আমার কাছে । যদিও এখনও আমার ভোট বাপের বাড়ির দিকেই, বদলানো হয়নি । তাই এখানে ভোট দিতে পারব না । যদিও নিজের শাশুড়ি-সহ আর দুই খুড়তুতো শাশুড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো ।"
একই একান্নবর্তী পরিবারের তিন বৌমার লড়াইতে কাকে ভোট দেবেন, তাই নিয়ে যথেষ্টই ধন্দে পড়েছেন বোস পরিবারের সদস্যরাও । একই অবস্থা পাড়ার বাসিন্দাদের । যদিও তিন বউয়ের মধ্যে 113 নম্বর বুথে যিনিই জয়ী হন না কেন, বিজয় আবিরে অকাল হোলি খেলবে পোদরার সরকার পাড়ার বোস পরিবারই ।