বেলুড়, 7 অক্টোবর : 1901 সালে বেলুড় মঠে (Belur Math) দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) ৷ তৎকালীন সমাজে জাতিভেদ প্রথা ছিল প্রকট ৷ গোঁড়া হিন্দুরা স্বামীজির বিদেশ যাত্রাকে কোনও দিন ভাল চোখে দেখেনি ৷ তাছাড়া, স্বামীজি যেভাবে সর্বধর্মের মিলনের কথা বলতেন, তাও হজম হত না কট্টর হিন্দুদের ৷ পাশাপাশি, তাঁর হাতে তৈরি বেলুড় মঠ সম্পর্কেও বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা ছড়াচ্ছিল ৷ মনে করা হয়, এইসব কারণেই মঠে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷ পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দের এই পদক্ষেপ নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম আধার হয়ে ওঠে ৷ মূলত, হিন্দু সমাজে নারীর সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেই কুমারীপুজো চালু করেন স্বামীজি ৷ কারণ, সেই সময় গোঁড়া হিন্দু সমাজে মেয়েদের অবস্থা ছিল শোচনীয় ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : ভ্যাকসিনের ডবল ডোজ নেওয়া থাকলে সিঁদুর খেলা-অঞ্জলিতে অনুমতি হাইকোর্টের
এছাড়াও বেলুড় মঠ সূত্রে দাবি করা হয়, মঠে পুজো শুরু করার বেশ কিছু সময় আগে থেকেই একটি বিশেষ স্বপ্ন দেখতেন বিবেকানন্দ ৷ তিনি দেখতেন, মঠে দুর্গাপুজো হচ্ছে ৷ এমনকী, সেই সময়ে স্বামীজি ছাড়াও মঠের আরও এক-দু’জন মহারাজ বেলুড় মঠে মায়ের আগমনের দৃশ্য দেখতে পেতেন বলে শোনা যায় ৷ এরপরই স্বামীজির নির্দেশে বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় ৷ কিন্তু, তাতেও নানা বাধার মুখে পড়তে হয় পুজোর আয়োজনকদের ৷ মঠ সূত্রে জানা যায়, পুজোর প্রথম বছরেই প্রতিমা জোগাড় করতে গিয়ে সমস্য়ায় পড়ে বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ ৷ শেষমেশ পুজোর আগে গঙ্গার অন্য পাড়ে গিয়ে কুমোরটুলি থেকে মা দুর্গার একটি মূর্তি নিয়ে আসা হয় ৷ এই ঐতিহ্য আজও মেনে চলা হয় ৷
প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ ভক্ত পুজোর দিনগুলিতে বেলুড় মঠ চত্বরে ভিড় করেন ৷ পুজো দেখতে মঠে আসেন বিদেশিরাও ৷ বেলুড় মঠের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল, এখানকার কুমারীপুজো ৷ অষ্টমীর দিন এই পুজো হয় ৷ স্বামী বিবেকানন্দ নিজে অবশ্য প্রথম কুমারীপুজা করেন 1898 সালে ৷ সেই সময় তিনি কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৷ সেখানে একটি মুসলিম পরিবারের মেয়েকে কুমারী হিসাবে পুজো করেছিলেন তিনি ৷ প্রসঙ্গত, হিন্দু শাস্ত্রে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ কন্যাকেই কুমারী হিসাবে পুজোর বিধান দেওয়া আছে ৷ কিন্তু, স্বামীজি এখানেও জাত-ধর্মের অনেক উপরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন ৷ পরের বছর, অর্থাৎ 1899 সালে দক্ষিণের কন্যাকুমারীতে ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্য়ান্ট জেনারেল মন্মথ ভট্টাচার্যের কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন তিনি ৷ 1901 সালে বেলুড় মঠে কুমারী পুজো শুরু হলে প্রথম বছর ন’জন কুমারীকে পুজো করেন স্বামীজি ৷ বর্তমানে অবশ্য শাস্ত্রীয় রীতি মেনে একজন কুমারীকেই পুজো করা হয় ৷
আরও পড়ুন : Raiganj Durga Puja: 300 বছরের পুরনো সেনবাড়ির পুজোয় প্রবেশ নিষেধ মহিলাদের
করোনা আবহে গত বছরের মতো এবারও দুর্গাপুজোয় বন্ধ থাকছে বেলুড় মঠ ৷ তবে তাতে পুজো বন্ধ থাকছে না ৷ কিন্তু, সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকছে না ৷ সেই মোতাবেক, আগামী 9 অক্টোবর (চতুর্থী) থেকে 16 অক্টোবর (একাদশী) সাধারণের জন্য বন্ধ থাকছে বেলুড় মঠ ৷ তবে বেলুড় মঠের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে পুজোর সম্প্রচার করা হবে ৷ মঠ সূত্রে খবর, এবছর ছট পুজোতেও মঠের দরজা সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হবে ৷