আরামবাগ, 20 মার্চ: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি হেফাজতে রয়েছেন বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার তাঁর সম্পর্কে একাধিক তথ্য উঠে আসছে ৷ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও কোটি কোটি টাকার উৎস কী ? শান্তনুকে নিয়ে এই প্রশ্ন উঠছিল ৷ নিয়োগ দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের পাশাপাশি বেআইনি বালি খাদানের যোগ পাওয়া যাচ্ছে (Illegal Sand Mining Connection of Santanu Banerjee) ৷ অভিযোগ বালি খাদান থেকেও তিনি বেআইনিভাবে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন ৷ হুগলি জেলার একাধিক বালি খাদানে তাঁর যোগ রয়েছে ৷
আরামবাগ মহকুমার মধ্যে গোঘাট, আরামবাগ ও পুড়শুড়া এমনকি বর্ধমানের বেশ কয়েকটি বালি খাদানে শান্তনু অংশীদার বলে জানা যাচ্ছে ৷ এই বালি কারবার চলে মুণ্ডেশ্বরী নদী এবং দামোদর ও দ্বারকেশ্বর নদের চরে ৷ বেআইনিভাবে এইসব বালি খাদান থেকে বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ ৷ এই সমস্ত বালিখাদানগুলিতে তাঁর লোকজন কাজ করে ৷ সেই বেআইনি বালিপাচারের টাকা তৃণমূল যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে চলে যেত ৷ শান্তনু সেই টাকাতেই সামান্য মোবাইলের দোকানদার থেকে কোটিপতি হন বলে জানা গিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরই তৃণমূলের একাংশ কর্মী ব্যাপক ক্ষোভপ্রকাশ করেছিল ৷ একসময় তাঁর দাপটে আরামবাগের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল বলেও অভিযোগ ৷ তৃণমূলের একটি অংশ তাঁর অত্যাচারে বসেও গিয়েছে ৷ এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ৷ শান্তনুর দাপট এতটাই ছিল যে পুলিশ প্রশাসনও নাকি নীরবে সব দেখে যেত ৷ শান্তনু আরামবাগকে তাঁর নিশানা করেছিল প্রায় 15 বছর আগে ৷ প্রথমে তিনি মোবাইল ফোনের ব্যবসা করলেও, বিদ্যুৎ দফতরের হিসেবরক্ষক হিসেবে খানাকুলের রাজহাটিতে কাজ করতে শুরু করেন ৷ তারপরই ধীরে ধীরে তৃণমূলের দাপুটে নেতা হিসেবে তাঁর উত্থান হয় ৷
অভিযোগ সেই উত্থানের মধ্যেই খানাকুলে বসে আরামবাগ মহকুমায় বালি ব্যবসার ছক সাজান শান্তনু ৷ আরামবাগে কীভাবে বালি মাফিয়ারাজ চালানো যায়, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করেন বলে দাবি এলাকার মানুষের ৷ এরপর তিনি বলাগড়ে পোষ্টিং নিয়ে চলে যান ৷ এরপরেই কোনও বড়ো নেতার ছত্রছায়ায় থেকে হুগলি জেলার তৃণমূল যুব-সভাপতি হন ৷ তারপর ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করে বালি মাফিয়ার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ ৷
আরও পড়ুন: প্রোমোটিংয়ের পাশাপাশি আইটি সংস্থার মালিক, বহুমুখী প্রতিভা অয়নের
এই বিষয়ে আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান জয়দেব জানা জানিয়েছেন, ভূমি সংস্কার দফতর ও পুলিশ প্রশাসন আছে তারা দেখবে ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নদীর পাড়ে পাহারা দেবেন না ৷ অপরাধ করলে আইন তাঁদের শাস্তি দেবে ৷ আইন আইনের পথে চলবে ৷ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেআইনি বালি খাদান নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি ৷ শান্তনুর বেআইনি বালি কারবার যোগ নিয়ে সরব হয়েছে ৷
এই বিষয়ে খানাকুলের বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘2013-14 সালে উনি খানাকুলের রাজহাটির বিদ্যুৎ দফতরে চাকরি করতেন ৷ তারপর রাজনীতিতে উত্থান ৷ শুধু চাকরি চুরি হয়েছে তা নয় ৷ এর পাশাপাশি বালি চুরিও করা হয় ৷ ইডি তদন্ত করলে খানাকুলেও তৃণমূলের কেষ্ট-বিষ্টুরা ধরা পড়বে ৷ সবমিলিয়ে এখন এলাকায় নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের ব্যাপক ক্ষোভ এই বালি মাফিয়ারাজ নিয়ে ৷’’