হুগলি, 10 অক্টোবর: হামাস জঙ্গি সংগঠনের আক্রমণে যুদ্ধ চলছে ইজরায়েলে । সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, এই যুদ্ধের জেরে দুই দেশ মিলিয়ে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে । এই যুদ্ধের সময় ইজরায়েলে গিয়ে আটকে পড়েছেন বহু ভারতীয় । যাঁদের মধ্যে রয়েছেন হুগলির তিন গবেষক ৷ গবেষক দম্পতি সহ মোট তিন জন গবেষক আটকে ইজরায়েলে ৷ দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাদের পরিবার ।
স্ত্রী ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে ইজরায়েলের হাইফা শহরে আটকে রয়েছেন উত্তরপাড়ার গবেষক সোমোদয় হাজরা ৷ যুদ্ধের কারণে ইজারায়েলে বন্ধ স্কুল কলেজ , যদিও যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমোদয় হাজরা গবেষণা করেন, সেটি খোলা আছে। সেখানে গবেষণার কাজ চলছে । স্নায়ুতন্ত্র বিষয়ে গবেষণা করেন স্বামী-স্ত্রী । যদিও হাইফা শহরে এখনও যুদ্ধের আঁচ পৌঁছয়নি । তবে সাইরেন বাজলেই বাঙ্কারে ঢুকে যেতে হচ্ছে খাবার সংগ্রহ করে । কালীপুজোর আগে 9 নভেম্বর বাড়ি ফেরার টিকিট কাটা আছে তাঁদের । কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে তাঁরা এখনই বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ।
অন্যদিকে দেড় বছর আগে হুগলির ধনিয়াখালির ভাণ্ডারহাটির আরও এক গবেষক ইজরায়েলের বাণিজ্যনগরী তেল আভিভেতে যান সৌরভ কুমার । তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে (নিউরো সায়েন্স) অ্যালঝাইমার্স রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি । তবে বাড়ি ধনিয়াখালি হলেও বর্তমানে উত্তরপাড়ায় থাকে তাঁর পরিবার । স্ত্রী অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের ফিজিওলজির অধ্যাপক । তাঁদের সাত মাসের মেয়ের অর্নাকে নিয়ে থাকেন । তিনিও সকলের মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন । সকলের পরিবার চায় যত শীঘ্র সম্ভব তাদের ফেরার ব্যবস্থা করুক ভারত সরকার ।
আরও পড়ুন : ইজরায়েলে হামাসের হামলায় আহত কেরলের নার্স
সোমোদয়ের বাবা প্রাক্তন অধ্যাপক উদয়শঙ্কর হাজরা । দু'সপ্তাহ আগে ছেলের কাছ থেকে ফিরেছেন স্বামী-স্ত্রী । তাঁর কথায়, "আমার ছেলে যেখানে আছে তা অন্য জায়গার তুলনায় নিরাপদ । তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি তো কোনও কিছু বলা যায় না । ছেলে বৌমা ছাড়া ভারতের অনেকেই আছেন । আমাদের আবেদন ভারত সরকার ও ভারতীয় দূতাবাস তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করুক ।"
সোমোদয় ইজরায়েল থেকে ভিডিয়ো কলে বাবা-মাকে বলছেন তাঁরা যেন দুশ্চিন্তা না করেন । তাঁর কথায়,"সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে ঢুকে যেতে বলা হয়েছে । 72 ঘণ্টার জন্য জল, খাবার, পোশাক মজুত করে রাখতে বলা হয়েছে । সোমোদয় ও জয়িতা হাইফার টেকনিয়ন আইআইটিতে গবেষণা করছেন । স্থানীয় সূত্র থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, এই মুহূর্তে 14 অক্টোবর পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট বন্ধ আছে । আমাদের সংস্থার সকলেই আমাদের সহযোগিতা করছে ঠিকই কিন্তু আমরাও চাইছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া যায় ৷ আমাদের বন্ধুবান্ধবরাও বিভিন্নভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছে । যদি এয়ার ইন্ডিয়া না হয় তাহলে অন্যান্য দেশ ঘুরে তবে ভারতে যাওয়া যাবে ।"
এদিকে গবেষক সৌরভের স্ত্রী অনিন্দিতা বলেন,"খুবই দুশ্চিন্তায় মধ্যে আছি । পুজোর আগে বাড়ি ফেরার কথা ছিল সৌরভের । 16 অক্টোবর বিমানের টিকিট কাটা আছে । যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ইজরায়েলে আটকে পরা ভারতীয়রা কী করে ফিরবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার ।"
সৌরভ তাঁর স্ত্রীকে ফোনে জানাচ্ছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে পারছেন না । সাইরেন বাজলেই শেল্টার হোমে ঢুকে পড়তে হচ্ছে । জল খাবার পেতে এখনও সমস্যা হয়নি । তবে দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললে কী হবে তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন । মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । হামাস জঙ্গিরা যেখানে সেখানে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে । ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে । মাঝে মধ্যে কানে আসছে সেসব শব্দ । অনিন্দিতা নিজেও ইজরায়েলে গিয়েছিলেন কয়েকমাস আগে। সেখানে অনেক ভারতীয় এবং বাঙালি রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা কী করে দেশে ফিরবেন জানা নেই ।
আরও পড়ুন : যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েল, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি আমেরিকা-ফ্রান্স-জার্মানি-ইতালি-ব্রিটেনের