ETV Bharat / state

বাড়ির বাইরে টু-লেট বোর্ড, দেখা নেই ভাড়াটের

কোরোনা ভাইরাস ও লকডাউনের জেরে একদিকে যেমন সমস্যায় পড়েছেন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা ৷ অন্যদিকে সমস্যায় পড়েছেন টু লেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা ৷

to-let boards are hanging, multiple houses are empty
শহরের একাধিক বাড়িতে ঝুলছে টু-লেট বোর্ড
author img

By

Published : Jul 31, 2020, 8:09 PM IST

শিলিগুড়ি, 31 জুলাই : কোরোনা ভাইরাসের জেরে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আনলকডাউন পর্ব ৷ ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ৷ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিকের দিকে এগিয়েছে ৷ কিন্তু, লকডাউন পর্বে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন ৷ অনেকের আবার ছোট খাটো ব্যবসায় ইতি পড়েছে ৷ আনলক পর্বে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হলেও অনেকেই এখনও পর্যন্ত কাজ ফিরে পাননি তাঁরা ৷ এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা ৷ বিপাকে পড়েছেন বহু বাড়ির মালিকেরাও ৷ অনেকেই কাজ না থাকায় বাড়ি ভাড়া ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়েছেন ৷ যার ফলে অনেক বাড়িই খালি হয়ে পড়ে রয়েছে ৷

ঠিক এরকমই চিত্র ধরা পড়েছে শিলিগুড়িতে ৷ উত্তরবঙ্গের বহু জেলা থেকে মানুষ কর্মসূত্রে এখানে আসেন ৷ এই শহরেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা ৷ একটা সময় যখন এই শহরের অনেক বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন ভিন জেলা বা রাজ্য থেকে আসা অনেকেই ৷ এখন তার সিংহভাগই ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৷ অনেকেই বা বাড়ি পালটাতে চাইছেন ৷ কিন্তু, এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বাড়ি পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ৷ যেসব ভাড়াটিয়ারা শহরে আছেন তাঁরাও পড়েছেন নানা সমস্যায় ৷ কিছু ক্ষেত্রে অনেকেরই পুরোনো বাড়ির চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ নতুন বাড়ির খোঁজে বেড়িয়েছেন তাঁরা ৷ কিন্তু, নতুন বাড়ি মিলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের ৷ এপ্রসঙ্গে বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা চিরদীপ দত্ত বলেন, "একাধিক বাড়ি দেখেছি ৷ কোথাও বলা হচ্ছে ভাড়া দেওয়া হবে ৷ কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই মিলবে বাড়ি ৷ কোথাও আবার অচেনা পাড়ায় ঘর নিতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি জানাচ্ছেন ৷ আবার কোথাও জানতে চাওয়া হচ্ছে যে, মার্কেটিং সহ অন্য কোনও কাজে বাইরে গিয়েছিলেন কী না ? যার ফলে বাড়ি বদলাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ অন্যদিকে আবার বাড়ির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাড়ির মালিকও তাড়া দিচ্ছেন ৷ "

কী বলছেন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা ?

শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির বাইরে ঝুলছে টু লেট বোর্ড ৷ অনেক বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দিতে চাইলেও নানা আশঙ্কায় ভুগছেন ৷ যাঁরা বাড়ি ভাড়া নিতে আসছেন তাঁরা সম্প্রতি ভিনরাজ্যে যাননি তো ? আর্থিক ক্ষতি হলেও নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এগোতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা ৷ বাড়ির মালিক বিনয় চন্দ্র দে বলেন, " অবসরকালীন প্রাপ্য দিয়ে দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছি ৷ নিচের তলায় ভাড়া দিয়ে থাকি ৷ পেনশন ছাড়াও ওই ভাড়া দিয়েই সংসার চালাই ৷ একমাস আগেই পুরোনো ভাড়াটিয়া উঠে গিয়েছে ৷ কিন্তু এখনও নতুন ভাড়াটে মেলেনি ৷ ঘর ভাড়া নিতে ভাড়াটে এলেও কিছুটা হলেও শঙ্কা রয়েছে মনে রয়েছে ৷ তাই যাঁরা ঘর ভাড়া নিতে আসছেন তাঁদের বেশ কিছু বিষয় জানতে চাইছি ৷ যা উত্তর মিলছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না ৷ আবার অনেক ক্ষেত্রেও যাঁরা ঘর নিতে আসছেন তাঁদের ঘর পছন্দ হচ্ছে না ৷ যার ফলে রোজগারে বেশ কিছুটা টান পড়ছে ৷ কিন্তু এতে কিছু করার নেই ৷ ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৷"

শিলিগুড়ি পৌরনিগম সূত্রে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অন্তত এক লাখ লোক ঘর ভাড়া নিয়ে এই শহরে থাকেন । প্রায় 30 হাজার বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় । কিন্তু এখন অধিকাংশ বাড়িই ফাঁকা । বাড়ির বাইরে ঝুলছে টু লেট বোর্ড । শুধু বাড়ি ভাড়া নয় । বাণিজ্যিক দোকান ভাড়ার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি শহরে । নতুন করে দোকান ভাড়া নিয়ে বা অফিস ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালু করতে চাইছেন না কেউ । ফলে বাণিজ্যিক দোকান, অফিস সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই ।

শুধু বাড়ির মালিক বা ভাড়াটেরা নন ৷ সমস্যায় পড়েছেন শহরের টু লেট সার্ভিস প্রোভাইডাররাও ৷ অনেকেই এই কাজের মাধ্যমে সংসার চালান ৷ কিন্তু, বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা ৷ প্রধাননগর এলাকার টু লেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রশান্ত সাহা বলেন, ''বাড়ি ভাড়া নিতে কেউ আসেননি । বাণিজ্যিক দোকান বা অফিস নিতে চেয়েও কেউ আসেননি । গত দু-মাসে একজন গ্রাহক পাইনি । ফলে বাধ্য হয়েই সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছি । আমার নিজের বাড়িতেই ঘর ফাঁকা রয়েছে । কিন্তু ভাড়াটিয়া পাইনি । কোরোনার জেরেই এই সমস্যা । অচেনা লোককে পাড়ায় হঠাৎ করে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসতে দিতে চাইছেন না অনেকে । তাছাড়া কাজকর্ম না থাকায় অনেকে শহরে থাকছেন না আর । ফলে বিভিন্ন এলাকায় বহু বাড়িতে টু লেট বোর্ড ঝুলছে । কিন্তু ভাড়াটিয়া মিলছে না । মাসে গড়ে তিরিশ জনকে আমরা পরিষেবা দিতাম । এখন সব বন্ধ ।"

এ প্রসঙ্গে পৌরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত শংকর ঘোষ বলেন, "সব এলাকাতেই একই পরিস্থিতি । আমার পাড়াতেও একই অবস্থা । জ্বর থাকায় আমি আপাতত বাড়িতে আইসলেশনে রয়েছি । পরিস্থিতি স্বাভাবিই না হলে এই সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না ।"

শিলিগুড়ি, 31 জুলাই : কোরোনা ভাইরাসের জেরে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আনলকডাউন পর্ব ৷ ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ৷ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিকের দিকে এগিয়েছে ৷ কিন্তু, লকডাউন পর্বে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন ৷ অনেকের আবার ছোট খাটো ব্যবসায় ইতি পড়েছে ৷ আনলক পর্বে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হলেও অনেকেই এখনও পর্যন্ত কাজ ফিরে পাননি তাঁরা ৷ এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা ৷ বিপাকে পড়েছেন বহু বাড়ির মালিকেরাও ৷ অনেকেই কাজ না থাকায় বাড়ি ভাড়া ছেড়ে নিজেদের এলাকায় ফিরে গিয়েছেন ৷ যার ফলে অনেক বাড়িই খালি হয়ে পড়ে রয়েছে ৷

ঠিক এরকমই চিত্র ধরা পড়েছে শিলিগুড়িতে ৷ উত্তরবঙ্গের বহু জেলা থেকে মানুষ কর্মসূত্রে এখানে আসেন ৷ এই শহরেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা ৷ একটা সময় যখন এই শহরের অনেক বাড়িতেই ভাড়া থাকতেন ভিন জেলা বা রাজ্য থেকে আসা অনেকেই ৷ এখন তার সিংহভাগই ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৷ অনেকেই বা বাড়ি পালটাতে চাইছেন ৷ কিন্তু, এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বাড়ি পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ৷ যেসব ভাড়াটিয়ারা শহরে আছেন তাঁরাও পড়েছেন নানা সমস্যায় ৷ কিছু ক্ষেত্রে অনেকেরই পুরোনো বাড়ির চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ নতুন বাড়ির খোঁজে বেড়িয়েছেন তাঁরা ৷ কিন্তু, নতুন বাড়ি মিলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের ৷ এপ্রসঙ্গে বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা চিরদীপ দত্ত বলেন, "একাধিক বাড়ি দেখেছি ৷ কোথাও বলা হচ্ছে ভাড়া দেওয়া হবে ৷ কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরই মিলবে বাড়ি ৷ কোথাও আবার অচেনা পাড়ায় ঘর নিতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি জানাচ্ছেন ৷ আবার কোথাও জানতে চাওয়া হচ্ছে যে, মার্কেটিং সহ অন্য কোনও কাজে বাইরে গিয়েছিলেন কী না ? যার ফলে বাড়ি বদলাতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ৷ অন্যদিকে আবার বাড়ির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাড়ির মালিকও তাড়া দিচ্ছেন ৷ "

কী বলছেন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেরা ?

শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির বাইরে ঝুলছে টু লেট বোর্ড ৷ অনেক বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দিতে চাইলেও নানা আশঙ্কায় ভুগছেন ৷ যাঁরা বাড়ি ভাড়া নিতে আসছেন তাঁরা সম্প্রতি ভিনরাজ্যে যাননি তো ? আর্থিক ক্ষতি হলেও নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এগোতে সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা ৷ বাড়ির মালিক বিনয় চন্দ্র দে বলেন, " অবসরকালীন প্রাপ্য দিয়ে দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছি ৷ নিচের তলায় ভাড়া দিয়ে থাকি ৷ পেনশন ছাড়াও ওই ভাড়া দিয়েই সংসার চালাই ৷ একমাস আগেই পুরোনো ভাড়াটিয়া উঠে গিয়েছে ৷ কিন্তু এখনও নতুন ভাড়াটে মেলেনি ৷ ঘর ভাড়া নিতে ভাড়াটে এলেও কিছুটা হলেও শঙ্কা রয়েছে মনে রয়েছে ৷ তাই যাঁরা ঘর ভাড়া নিতে আসছেন তাঁদের বেশ কিছু বিষয় জানতে চাইছি ৷ যা উত্তর মিলছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না ৷ আবার অনেক ক্ষেত্রেও যাঁরা ঘর নিতে আসছেন তাঁদের ঘর পছন্দ হচ্ছে না ৷ যার ফলে রোজগারে বেশ কিছুটা টান পড়ছে ৷ কিন্তু এতে কিছু করার নেই ৷ ঘর ফাঁকা পড়ে রয়েছে ৷"

শিলিগুড়ি পৌরনিগম সূত্রে একটি সমীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, অন্তত এক লাখ লোক ঘর ভাড়া নিয়ে এই শহরে থাকেন । প্রায় 30 হাজার বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় । কিন্তু এখন অধিকাংশ বাড়িই ফাঁকা । বাড়ির বাইরে ঝুলছে টু লেট বোর্ড । শুধু বাড়ি ভাড়া নয় । বাণিজ্যিক দোকান ভাড়ার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি শহরে । নতুন করে দোকান ভাড়া নিয়ে বা অফিস ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালু করতে চাইছেন না কেউ । ফলে বাণিজ্যিক দোকান, অফিস সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই ।

শুধু বাড়ির মালিক বা ভাড়াটেরা নন ৷ সমস্যায় পড়েছেন শহরের টু লেট সার্ভিস প্রোভাইডাররাও ৷ অনেকেই এই কাজের মাধ্যমে সংসার চালান ৷ কিন্তু, বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা ৷ প্রধাননগর এলাকার টু লেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রশান্ত সাহা বলেন, ''বাড়ি ভাড়া নিতে কেউ আসেননি । বাণিজ্যিক দোকান বা অফিস নিতে চেয়েও কেউ আসেননি । গত দু-মাসে একজন গ্রাহক পাইনি । ফলে বাধ্য হয়েই সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছি । আমার নিজের বাড়িতেই ঘর ফাঁকা রয়েছে । কিন্তু ভাড়াটিয়া পাইনি । কোরোনার জেরেই এই সমস্যা । অচেনা লোককে পাড়ায় হঠাৎ করে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসতে দিতে চাইছেন না অনেকে । তাছাড়া কাজকর্ম না থাকায় অনেকে শহরে থাকছেন না আর । ফলে বিভিন্ন এলাকায় বহু বাড়িতে টু লেট বোর্ড ঝুলছে । কিন্তু ভাড়াটিয়া মিলছে না । মাসে গড়ে তিরিশ জনকে আমরা পরিষেবা দিতাম । এখন সব বন্ধ ।"

এ প্রসঙ্গে পৌরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত শংকর ঘোষ বলেন, "সব এলাকাতেই একই পরিস্থিতি । আমার পাড়াতেও একই অবস্থা । জ্বর থাকায় আমি আপাতত বাড়িতে আইসলেশনে রয়েছি । পরিস্থিতি স্বাভাবিই না হলে এই সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.