খড়িবাড়ি, 17 নভেম্বর: অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে পাকিস্তানি মহিলা ও তাঁর নাবালক পুত্রকে গ্রেফতার করেছে সশস্ত্র সীমা বল বা এসএসবি ৷ শিলিগুড়ি সংলগ্ন খড়িবাড়ি ব্লকের ইন্দো-নেপাল আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি থেকে তাঁদের বুধবার ধরে এসএসবি ৷ পাকিস্তানি নাগরিক হলেও তিনি বাংলায় কথা বলতে পারেন ৷ তাঁর বোন উত্তর 24 পরগনায় থাকে বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা ৷
এই ঘটনায় সমান্তরাল তদন্ত শুরু করল ভারতীয় সেনার গোয়েন্দা বিভাগ বা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ৷ অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ওই মহিলাকে খড়িবাড়ি থানার পুলিশ শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তুললে বিচারক সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ পাশাপাশি ওই মহিলার ছেলেকে দার্জিলিং জুভেনাইল আদালতে পেশ করা হয় ৷ বিচারক তার বয়ান গ্রহণ করেন এবং তাকে নিরাপদ হেফাজতে রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন ৷ হেফাজতে নিয়ে ওই পাকিস্তানি মহিলাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ । তার পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগ ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এবং এসএসবির আধিকারিকরাও জেরা করছেন ৷
সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বাসুনিয়া বলেন, "এই মহিলা কীভাবে ভারতে এলেন, তাঁর উদ্দেশ্য কী ছিল, তা জানা প্রয়োজন ৷ তিনি বয়ানে যেসব দাবি করেছেন, সেগুলির সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে ৷ সেজন্য বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ৷" পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের নাগরিক ওই মহিলা ঝরঝরে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন ৷ এমনকী আদালতে তোলার সময় সাংবাদিকদের তিনি বাংলায় উত্তর দেন ৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, ওই পাকিস্তানি মহিলা বিয়ের পর ধর্মান্তরণ করেন ৷
তাঁর আসল নাম গৌরী দে। আদিবাড়ি অসমে ৷ পরে পুরো পরিবার উত্তর 24 পরগনায় চলে আসে ৷ বহু বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি ৷ পরিবারের অমতে উত্তর 24 পরগনা থেকে দিল্লি চলে যান ৷ 1979 সালে বিয়ে করেন এবং স্বামীর সঙ্গে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান ৷ সেখানে বহু বছর থাকার পর কাজের সূত্রে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে পাড়ি দেন শাইস্তা ৷ পাকিস্তানের নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে করার ফলে সেই দেশের নাগরিকত্ব পান মহিলা ৷
শাইস্তা হানিফ নিজেই জানিয়েছেন, ভারতে আসার জন্য ভিসার আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায় ৷ তাই সৌদি আরবের জেড্ডা বিমানবন্দর থেকে প্রতিবেশী দেশ নেপালের কাঠমান্ডুর টিকিট কেটেছিলেন তিনি ৷ আসার সময় জেড্ডা থেকে মুম্বই হয়ে কাঠমান্ডু পৌঁছন ৷ আবার কাঠমান্ডু হয়েই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর ৷
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ইন্দো-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি মুক্ত সীমান্ত হওয়ায় সেখান থেকে কোনওভাবে ভারতে প্রবেশ করে কলকাতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি ৷ উত্তর 24 পরগনায় তাঁর বোন থাকেন বলেও দাবি করেছেন অভিযুক্ত ৷ তাঁর দেওয়া তথ্য যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দার্জিলিং জেলা পুলিশ ৷
বুধবার ভারত-নেপাল আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় শাইস্তা হানিফ ও তার 11 বছরের ছেলেকে গ্রেফতার করে এসএসবি ৷ পরে জানা যায়, তারা দু'জনেই পাকিস্তানের নাগরিক ৷ ভারতে প্রবেশের জন্য তাদের কাছ থেকে কোনও বৈধ নথি পাওয়া যায়নি ৷ এরপরই দুজনকে খড়িবাড়ি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় এসএসবি ৷ তবে তাঁর ভারতে প্রবেশের নেপথ্যে পারিবারিক কারণ নাকি গুপ্তচরবৃত্তি বা অন্য কোনও মতলব ছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷
আরও পড়ুন: