বালুরঘাট, 5 সেপ্টেম্বর: শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান থেকে মঙ্গলবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ রাজ্যপালকে তাঁর এক্তিয়ার মনে করিয়ে দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচিত সরকার নীতি তৈরি করে, রাজ্যই টাকা দেয় ৷ তাই খবরদারি করা রাজ্যপালের কাজ নয় ৷ রাজ্যপালের সমালোচনা করতে গিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে এদিন মমতা 'অর্থনৈতিক অবরোধ' তৈরির কথাও বলেছেন ৷ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ বালুরঘাটে এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে 'ছোটলোকামি'র মতো শব্দ ৷
এদিন সুকান্ত মজুমদার বলেন, "এই ধরনের ছোটলোকামি কথা ছোটলোক বাড়িতেই হয় বলে শুনেছি । আমি টাকা দিই তাই আমার কথা মতো তোমায় চলতে হবে, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে ধরনের কথা বলছেন তা তাঁর মুখে শোভনীয় নয় ৷ উনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন উনি এখন মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী উনি এখন আর নন ৷"
রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শিক্ষা দফতর ও রাজভবনের মধ্যে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে তা এদিন সপ্তমে পৌঁছেছে ৷ রাজ্যপাল রাজ্যের কথা না-শুনলে প্রয়োজনে রাজভবনের সামনে ধরনায় বসার কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে এদিন বলেছেন, "আপনি যদি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, আর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যদি আপনার কথা শুনে চলে আমি কিন্তু অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব ৷ এখানে টিট ফর ট্যাট ৷ নো কম্প্রোমাইজ ৷ দেখি আপনি কোন ইউনিভার্সিটি-কলেজের শিক্ষককে মাইনে দেন ৷" রাজভবনের টাকাও রাজ্য দেয় বলে, এদিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
আরও পড়ুন: 'শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ', প্রতিবাদে রাজভবনের গেটে ধরনার হুমকি মমতার
এর পালটা রাজ্য বিজেপি সভাপতি এদিন বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অ্যাজেন্ডা যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মাধ্যমে পরিচালনা করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মধ্যে দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রবেশ কিরাবার চেষ্টা করছেন তিনি । বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বশাসিত সংস্থা । বিশ্ববিদ্যালয় তার মত চলবে । সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করবেন কেন? বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনিও হস্তক্ষেপ করেন না।" ধরনার বিষয়ে সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করে বলেন, "ওনার নামই তো 'ধরনা দিদি'। উনি যখন বিরোধীদের বিরোধী নেত্রী ছিলেন তখন তিনি সবসময় ধরনা দিয়ে বেড়াতেন, এখন মনে হয় তো ধরনা দিন । সুপ্রিম কোর্ট বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু করার নেই, এই বিষয় আচার্য্য সিদ্ধান্ত নেবেন । রাজ্যপাল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই কাজ করছেন । মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক পদে থেকেও সংবিধান বিরোধী কাজ করছেন ৷ তার কারণ তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে চাইছেন না । যদি আঘাত করেন তাহলে প্রত্যাগত করবে বাংলা ।"
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্যপালের কথা শুনে চললে অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব, হুঁশিয়ারি মমতার
বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের পকেট থেকে দেন নাকি? এই টাকা যে রাজ্য সরকার দেবে সেটা তো আমাদের সংবিধানই রয়েছে আর রাজ্যের সংবিধানের প্রধান হলেন রাজ্যপাল ৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্কলারশিপ সবকিছুই কেন্দ্র সরকার দেয় । এই টাকাগুলি যদি রাজ্য সরকারকে পাঠানো কেন্দ্র সরকার বন্ধ করে দেয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রী চালাতে পারবেন তো ?