ETV Bharat / state

নদীর গ্রাসে আস্ত ইতিহাস ! ধ্বংসের পথে ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহাসিক কেল্লা - ডায়মন্ড হারবার

Historical Fort: রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কেল্লা ৷ এখন আর কিছুই তেমন অবশিষ্ট নেই ৷ পর্তুগিজদের তৈরি যে কেল্লার জন্য জায়গাটির নাম ডায়মন্ড হারবার সেই কেল্লাই অযত্নে জলে তলিয়ে যাচ্ছে ৷ কী অবস্থা এখন, ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷

Etv Bharat
ধ্বংসের পথে ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 28, 2023, 2:37 PM IST

Updated : Dec 28, 2023, 5:24 PM IST

নদী ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা

ডায়মন্ড হারবার, 28 ডিসেম্বর: শীতের মরশুমে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির অন্যতম পিকনিক ডেস্টিনেশনের লিস্টে থাকে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা ৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পর্তুগিজদের তৈরি এই কেল্লা ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । শুধু থেকে গিয়েছে পিকনিক স্পটের নাম, 'পুরনো কেল্লা পিকনিক স্পট'। ডায়মন্ড হারবার শহর ছাড়িয়ে পুরনো কেল্লা পিকনিক মাঠটি রয়েছে ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পর্তুগিজ জলদস্যুরা বাণিজ্যের নাম করে নদীপথে বাণিজ্য জাহাজে লুঠপাট চালানোর জন‍্য এই কেল্লা ব‍্যবহার করত ৷ তৎকালীন হুগলি নদী লাগোয়া হাজিপুরের পূর্ব তীরের খাঁড়িতে ভাটার সময় সকালে ও বিকেলে সূর্য কিরণ প্রতিফলিত হয়ে ফুটে উঠত ধবধবে সাদা নুন ৷ মাঝ নদী থেকে মনে হত উজ্জ্বল হীরক খন্ড ৷ এই দৃশ্য দেখে পর্তুগীজ বণিকরা হাজিপুরকে 'ডায়মন্ড ক্রীক' নামে অভিহিত করতেন ৷ পর্তুগিজদের রাখা এই ডায়মন্ড ক্রীক নাম থেকেই পরে হাজিপুরের অধুনা নাম হয় ডায়মন্ড হারবার ৷ পর্তুগিজরা দেশ ছাড়ার পর কালের নিয়মে একই রকমভাবে জলপথে বাণিজ্যের জন্য এদেশে আসে ইংরেজরা ।

Diamond Harbour Fort
সেই বিশাল কামান আজ এভাবেই নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে

এরপর হাজিপুরে ঘাটি গড়ে ব্রিটিশরা ৷ 1868-1869 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ডায়মন্ড হারবারেই একটি দুর্গ নির্মাণ করেন ৷ যা 'ডায়মন্ড হারবার চিংড়িখালি কেল্লা' নামে পরিচিত । এই দুর্গেই ইট-পাথরের বাঙ্কারে একাধিক কামান বসানো হয়েছিল নদীর দিকে নিশানা করে ৷ যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জলদস্যুদের হাত থেকে নিম্ন গাঙ্গেয় বাংলাকে বাঁচানো । বাণিজ্যের সুবিধার্থে সেই সময় হুগলি নদীর তীরে পোতাশ্রয় বা বন্দর গড়ে তোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ৷ একইসঙ্গে নদী পথে নজরদারির পাশাপাশি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কয়েকবিঘা জমিতে তিনটি বিশাল আয়তনের বহুতল দুর্গকে নিয়ে গড়ে ওঠে কেল্লা ৷ এই কেল্লার নিরাপত্তার জন্য তিনটি কামানও বসানো হয়েছিল ৷ ডায়মন্ড হারবারের এই কেল্লা যে ব্রিটিশদের এক বিশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল, এ কথা বলাই যায় । কিন্তু বর্তমান নদী ভাঙনে সেই কেল্লা প্রায় বিলুপ্তির পথে ।

অসীমা মুখোপাধ্যায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, "গত 40 বছর আগে আমরা যে অবস্থায় ডায়মন্ড হারবার কেল্লাকে দেখেছি বর্তমানে তার আর কোনও অংশই অবশিষ্ট নেই । আমরা দেখেছি কেল্লায় যাওয়ার সময় তিনটি বড় বড় রাস্তা, একটি লাইট হাউস, দু'তলা সমান 7টি দুর্গ ও 7টি কামান ছিল । ধীরে ধীরে নদী ভাঙনের কারণে সেই রাস্তা দুর্গ ও লাইট হাউস সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে । এখন কেল্লার কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে । পর্যটকরা এখন দেখতে এসে কেল্লার এই অবস্থা দেখে হতাশ হয় । রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটিকে বাঁচানো সম্ভব ছিল ।"

Fort
কেবল অবশিষ্ট রয়েছে কেল্লার এই টুকরো টুকরো ভগ্নপ্রায় অংশগুলি

এই বিষয়ে সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য,"ডায়মন্ড হারবারের পর্যটনের ক্ষেত্রে এই পুরনো কেল্লার গুরুত্ব অনেক । মানুষ পুরনো ইতিহাস ভুলে যেতে চলেছে । এখনও যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কেল্লাকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হয় তাহলে ডায়মন্ড হারবারের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন পালক সংযোজন হবে । কেল্লাকে আর বাঁচানো যাবে না ৷ কিন্তু কেল্লার মতন যদি রেপ্লিকা তৈরি করা যায় তাহলে অনেক পর্যটকেরা তারা ডায়মন্ড হারবারে আসবে ।"

ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেন,"আমরা যে অবস্থায় দেখেছি কেল্লা এখন আর সেই অবস্থায় নেই । এটি রক্ষা করার ক্ষেত্রে ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার বিধায়ক পান্নালাল হালদার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন । কিন্তু কেল্লার কিছু অংশের জমি কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকার কারণে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি । বর্তমানে ডায়মন্ড হারবারের সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেল্লা সংস্কারের জন্য বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন । কেল্লাকে আবারও তার পুরনো ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টালবাহানার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না ।"

আরও পড়ুন :

1 অনাদরে নারকেলবেড়িয়ার বাঁশের কেল্লা নড়বড়ে স্কুল, স্বাধীনতা দিবসে স্মরণে তিতুমীর

2 ভারতের বিখ্যাত দুর্গগুলি দেখেছেন কি ? জেনে নিন কোথায় রয়েছে এইগুলি

3 ইতিহাস বুকে নিয়ে জঙ্গলের ঘেরাটোপে নল রাজার গড়

নদী ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা

ডায়মন্ড হারবার, 28 ডিসেম্বর: শীতের মরশুমে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির অন্যতম পিকনিক ডেস্টিনেশনের লিস্টে থাকে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা ৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পর্তুগিজদের তৈরি এই কেল্লা ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । শুধু থেকে গিয়েছে পিকনিক স্পটের নাম, 'পুরনো কেল্লা পিকনিক স্পট'। ডায়মন্ড হারবার শহর ছাড়িয়ে পুরনো কেল্লা পিকনিক মাঠটি রয়েছে ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পর্তুগিজ জলদস্যুরা বাণিজ্যের নাম করে নদীপথে বাণিজ্য জাহাজে লুঠপাট চালানোর জন‍্য এই কেল্লা ব‍্যবহার করত ৷ তৎকালীন হুগলি নদী লাগোয়া হাজিপুরের পূর্ব তীরের খাঁড়িতে ভাটার সময় সকালে ও বিকেলে সূর্য কিরণ প্রতিফলিত হয়ে ফুটে উঠত ধবধবে সাদা নুন ৷ মাঝ নদী থেকে মনে হত উজ্জ্বল হীরক খন্ড ৷ এই দৃশ্য দেখে পর্তুগীজ বণিকরা হাজিপুরকে 'ডায়মন্ড ক্রীক' নামে অভিহিত করতেন ৷ পর্তুগিজদের রাখা এই ডায়মন্ড ক্রীক নাম থেকেই পরে হাজিপুরের অধুনা নাম হয় ডায়মন্ড হারবার ৷ পর্তুগিজরা দেশ ছাড়ার পর কালের নিয়মে একই রকমভাবে জলপথে বাণিজ্যের জন্য এদেশে আসে ইংরেজরা ।

Diamond Harbour Fort
সেই বিশাল কামান আজ এভাবেই নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে

এরপর হাজিপুরে ঘাটি গড়ে ব্রিটিশরা ৷ 1868-1869 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ডায়মন্ড হারবারেই একটি দুর্গ নির্মাণ করেন ৷ যা 'ডায়মন্ড হারবার চিংড়িখালি কেল্লা' নামে পরিচিত । এই দুর্গেই ইট-পাথরের বাঙ্কারে একাধিক কামান বসানো হয়েছিল নদীর দিকে নিশানা করে ৷ যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জলদস্যুদের হাত থেকে নিম্ন গাঙ্গেয় বাংলাকে বাঁচানো । বাণিজ্যের সুবিধার্থে সেই সময় হুগলি নদীর তীরে পোতাশ্রয় বা বন্দর গড়ে তোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ৷ একইসঙ্গে নদী পথে নজরদারির পাশাপাশি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কয়েকবিঘা জমিতে তিনটি বিশাল আয়তনের বহুতল দুর্গকে নিয়ে গড়ে ওঠে কেল্লা ৷ এই কেল্লার নিরাপত্তার জন্য তিনটি কামানও বসানো হয়েছিল ৷ ডায়মন্ড হারবারের এই কেল্লা যে ব্রিটিশদের এক বিশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল, এ কথা বলাই যায় । কিন্তু বর্তমান নদী ভাঙনে সেই কেল্লা প্রায় বিলুপ্তির পথে ।

অসীমা মুখোপাধ্যায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, "গত 40 বছর আগে আমরা যে অবস্থায় ডায়মন্ড হারবার কেল্লাকে দেখেছি বর্তমানে তার আর কোনও অংশই অবশিষ্ট নেই । আমরা দেখেছি কেল্লায় যাওয়ার সময় তিনটি বড় বড় রাস্তা, একটি লাইট হাউস, দু'তলা সমান 7টি দুর্গ ও 7টি কামান ছিল । ধীরে ধীরে নদী ভাঙনের কারণে সেই রাস্তা দুর্গ ও লাইট হাউস সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে । এখন কেল্লার কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে । পর্যটকরা এখন দেখতে এসে কেল্লার এই অবস্থা দেখে হতাশ হয় । রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটিকে বাঁচানো সম্ভব ছিল ।"

Fort
কেবল অবশিষ্ট রয়েছে কেল্লার এই টুকরো টুকরো ভগ্নপ্রায় অংশগুলি

এই বিষয়ে সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য,"ডায়মন্ড হারবারের পর্যটনের ক্ষেত্রে এই পুরনো কেল্লার গুরুত্ব অনেক । মানুষ পুরনো ইতিহাস ভুলে যেতে চলেছে । এখনও যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কেল্লাকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হয় তাহলে ডায়মন্ড হারবারের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন পালক সংযোজন হবে । কেল্লাকে আর বাঁচানো যাবে না ৷ কিন্তু কেল্লার মতন যদি রেপ্লিকা তৈরি করা যায় তাহলে অনেক পর্যটকেরা তারা ডায়মন্ড হারবারে আসবে ।"

ডায়মন্ড হারবার পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রণব দাস বলেন,"আমরা যে অবস্থায় দেখেছি কেল্লা এখন আর সেই অবস্থায় নেই । এটি রক্ষা করার ক্ষেত্রে ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার বিধায়ক পান্নালাল হালদার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন । কিন্তু কেল্লার কিছু অংশের জমি কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকার কারণে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি । বর্তমানে ডায়মন্ড হারবারের সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেল্লা সংস্কারের জন্য বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন । কেল্লাকে আবারও তার পুরনো ঐতিহ্য ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টালবাহানার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না ।"

আরও পড়ুন :

1 অনাদরে নারকেলবেড়িয়ার বাঁশের কেল্লা নড়বড়ে স্কুল, স্বাধীনতা দিবসে স্মরণে তিতুমীর

2 ভারতের বিখ্যাত দুর্গগুলি দেখেছেন কি ? জেনে নিন কোথায় রয়েছে এইগুলি

3 ইতিহাস বুকে নিয়ে জঙ্গলের ঘেরাটোপে নল রাজার গড়

Last Updated : Dec 28, 2023, 5:24 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.