বারুইপুর, 6 ডিসেম্বর: একটা সময় ছিল যখন বাঙালির কাছে শীত মানে পিঠে-পুলি এবং অন্যান্য অনেককিছুর সঙ্গে সমানভাবে জুড়ে ছিল সার্কাস ৷ তবে এখন দিন বদলেছে, পালটে গিয়েছে বিনোদনের মাধ্যমও ৷ কম্বলমুড়ি দিয়ে ঘরে বসে নতুন নতুন ওয়েব সিরিজ দেখাই এখন ট্রেন্ড ৷ পক্ষান্তরে শতাব্দী প্রাচীন সার্কাস এবং সেখানকার শিল্পীদের নানান কার্যকলাপ এখন পরিণত হয়েছে নস্টালজিয়ায় (Circus on Way to Extinction) ৷
শীতের মরশুম এলেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সার্কাসের দল এসে তাঁবু ফেলত কলকাতার পার্কসার্কাস, মার্কাস স্কোয়ার, টালা পার্ক, সিঁথির মোড়ের বিভিন্ন মাঠে ৷ রঙিন তাঁবু, ঝলমলে আলোয় সেজে থাকত ডিসেম্বরের শহর কলকাতা ৷ একুশ শতকে এসে বদলে দিয়েছে বিনোদনের রসদ ৷ স্মার্টফোনের বাড়বাড়ন্ত, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ (Influence of OTT Platform) ছুড়ে দিয়েছে সার্কাসকে ৷ এখন ইচ্ছে হলেই সব হাজির হয়ে যায় মোবাইলের স্ক্রিনে ৷ তারমধ্যে আবার সার্কাসের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়ে গেছে কোভিড ৷
বিনোদনের বহু মাধ্যমের মাঝে টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছে ৷ কিন্তু সেটাও আর কত দিন ? সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষকে ৷ সীমান্ত ডেকার মতো সার্কাস শিল্পীরা সংসার চালাতে বেছে নিচ্ছেন অন্য পেশা ৷ 2000 সালের পর কেবল ভারতেই 17টির বেশি সার্কাস কোম্পানি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে ৷ অথচ ওই বছর বা তার আগে পর্যন্ত সার্কাসের অত্যন্ত জনপ্রিয়তা ছিল ৷ বর্তমানে সার্কাসের জৌলুস কমেছে ৷ ফলে গ্রামেগঞ্জে দু-একটা তাঁবু পড়লেও, সেই আকর্ষণ না-থাকায় দর্শক সেভাবে হয় না ৷
তার উপর বন্যপ্রাণীদের নিয়ে খেলা দেখানো এখন বেআইনি ৷ বিশেষ করে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকের মতো হিংস্র প্রাণীদের আর সার্কাসে স্থান নেই ৷ ফলে সার্কাসের জৌলুসও কমেছে ৷ পাশাপাশি, আগে একটি সার্কাস কোম্পানিতে 10-12 জন জোকার সাজতেন ৷ দিনে দিনে সার্কাসের জনপ্রিয়তা কমায়, জোকারের ভূমিকায় থাকা লোকজন অন্য পেশায় ঢুকে গিয়েছেন ৷ ফলে আরও কমেছে সার্কাসের সেই হাঁসির রসদ ৷ ডায়মন্ড সার্কাসে জোকার সাজেন লিটন দাস ৷ তিনি বলেন, আগে যেখানে সার্কাসে 10-12 জন মিলে জোকার সেজে দর্শকদের আনন্দ দিতাম, সেখানে এখন আমি একা ! মনটা ভালো নেই, ভালো লাগছে না ৷ কিন্তু তেইশ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত আমি ৷ স্মার্টফোনের যুগে মানুষ সার্কাসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: বারুইপুরে শুরু ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা, এবারের চমক আফ্রিকান ডায়মন্ড সার্কাস
ডায়মন্ড সার্কাসের ম্যানেজার মোল্লা সাদেক রহমান ৷ তিনি বলেন, "আমরা বিভিন্ন গ্রামে শীত পড়লেই সার্কাস নিয়ে যেতাম ৷ 2002 সালে বহু মানুষ সার্কাসের টিকিট না-পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরত ৷ কিন্তু, সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে ৷ সার্কাসে এখন টিকিট বিক্রি হয় না ৷ হাতে গোনা কয়েকটি টিকিট বিক্রি হলেও, সার্কাস দেখতে আসা দর্শকরা বলেন সার্কাসে আগের মতো জৌলুস আর নেই ৷ বিভিন্ন পশুপাখির খেলা সেটা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ৷ এখন আমাদের সেই ভরসা আফ্রিকান শিল্পীরা ৷ বিদেশীদের উপর ভরসা করে এখন সার্কাস চালাচ্ছি আমরা ৷ সার্কাসের আগামিদিনের ভবিষ্যৎ কী হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ৷ সরকার যদি মুখ তুলে না তাকায় তাহলে সার্কাস হারিয়ে যাবে ৷"