সুন্দরবন, 9 অগস্ট : জলে কুমির ডাঙায় বাঘ ৷ প্রতিনিয়ত এদের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সুন্দরবনের মানুষদের। কখনও শোনা যায় সুন্দরবনের কোনও মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে বাঘের আক্রমণে আবার শোনা যায় যে সুন্দরবনের কোনও মৎস্যজীবীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে কুমিরের আক্রমণে।
সুন্দরবনের জল-জঙ্গলে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবন জীবিকা চলে মৎস্যজীবীদের। দক্ষিণ 24 পরগনার সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি অঞ্চলে এখন তৈরি হয়ে গিয়েছে বাঘ বিধবা পল্লি।
সুন্দরবনের জল-জঙ্গলে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বা মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের হামলায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় এবং বাঘের আক্রমণে নিখোঁজের ঘটনায় ওই অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বাঘ বিধবা পল্লি। বর্তমানে ঝড়খালি অঞ্চলে প্রায় 83 জন বাঘ বিধবাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি গ্রাম। কোনও মতে সংসার চলে তাদের। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
কেউ কেউ বাঘ বিধবা সরকারি সুযোগ, সুবিধা পেয়েছেন। তবে বেশির ভাগ বাঘ বিধবারা আজও কোন সরকারি সাহায্য পাননি। আর এই সমস্ত অসহায় বাঘ বিধবাদের পাশে দাঁড়ালেন বাউল শিল্পী স্বপন দত্ত।
আরও পড়ুন : Rain Affects Farming : টানা বৃষ্টিতে জলের তলায় চাষের জমি, মাথায় হাত ভাঙড়ের কৃষকদের
তিনি পূর্ব বর্ধমান থেকে এলেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত ঝড়খালি অঞ্চলের গ্রাম গুলিতে। ঝড়খালির বিদ্যাসাগর পল্লী, লস্কর পাড়া, ঝড়খালি 2 নম্বর গ্রাম সহ বিভিন্ন গ্রাম গুলিতে বাঘ বিধবাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন বাউল শিল্পী স্বপন দত্ত।
এমনকি বাঘ বিধবাদের করুণ কাহিনির গান নিজেই লিখে, নিজেই সুর দিয়ে নিজের কণ্ঠে গান গেয়ে তুলে ধরলেন বাউল শিল্পী । তিনি বলেন, "বাঘ বিধবাদের করুণ কাহিনির কথা আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে তুলে ধরব ৷ যাতে অসহায় বাঘ বিধবা মায়েরা সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়। উত্তরবঙ্গের হাতির হানায় মৃত পরিবারের সদস্যদের রাজ্য সরকার যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয় সেই পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ সুন্দরবনের বাঘের আক্রমণে মারা যাওয়া মৃতের পরিবারকে যেন দেওয়া হয় সেই আবেদন জানাব।"
আরও পড়ুন : Financial help : দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য রাজ্য সরকারের
শান্তি দাস নামে এক বিধবা বলেন, "কয়েক বছর আগে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয় আমার স্বামীর । তারপর থেকে বড় কষ্টে চলছে সংসার । জীবন-জীবিকার তাগিদে আমি ও আমার ছেলে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরতে চাই। সরকারি তরফ থেকে বিধবা ভাতা পেলেও তেমন কোনও ভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাইনি রাজ্য সরকারের কাছে। এই গ্রামে বহু বিধবা রয়েছে যারা এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিধবা ভাতা টুকুও পায়নি। আমি চাই সরকার আমাদের প্রতি একটু মুখ খুলে দেখুক।"