দক্ষিণ বারাসত, 10 অক্টোবর : এ পুজোয় দেবীর বোধন শুরু হয় ষষ্ঠীর 15 দিন আগে কৃষ্ণ ষষ্ঠী থেকে ৷ মা চণ্ডীর ঘটে বসে ৷ এখনও পুজো চলছে প্রায় 300 বছরের প্রাচীন রীতি মেনে ৷ লর্ড ক্লাইভের সময়ে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে কৃষ্ণচন্দ্র বসু সূচনা করেছিলেন এই পুজোর ৷
1725 সাল, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ৷ তাঁর দেওয়ানি ব্যবস্থায় বর্তমান দক্ষিণ 24 পরগনার দক্ষিণ বারাসতে বেশ কিছু অঞ্চলের দেওয়ানি পান কৃষ্ণচন্দ্র বসু ৷ প্রতিষ্ঠা করেন প্রাসাদোপম বসত বাড়ি ৷ শোনা যায়, তিনি নাকি শরতে দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। তৈরি হয় শিবের মন্দির এবং শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ সেই থেকে চলে আসছে ৷ বর্তমান প্রজন্ম সেই রীতি অনুযায়ী দুর্গাপুজো চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ কৃষ্ণ চন্দ্র বসুর জমিদারির সময়কালে দুর্গাপুজোতে আমন্ত্রিত হতেন ব্রিটিশ আধিকারিকেরা । তাঁর আতিথেয়তায় প্রসন্ন হয়ে কৃষ্ণচন্দ্র বসুকে 'রাজা' উপাধি দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ।
স্বাভাবিক ভাবে সুবিশাল বাড়ি এখন জরাজীর্ণ ৷ পুজোর আয়োজনের জৌলুসও কমেছে, কিন্তু কালের গর্ভে তলিয়ে যায়নি ৷ অতীতে জমিদারের অধীনস্থ প্রজাদের বর্তমান প্রজন্মও বসু বাড়ির পুজোয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুজোর আয়োজনে হাত লাগায় ।
আরও পড়ুন : Durga Puja : 370 বছর ধরে চলে আসছে অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর পারিবারিক পুজো
পুজোর বিশেষত্ব পঞ্চমীতে নয়, 15 দিন আগে থেকে দেবীর দুর্গার বোধন শুরু হওয়ার রীতি । পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে পুজো করেন পুরোহিতেরা, জানালেন বর্তমান প্রজন্মের সদস্য সায়ন্তন বসু ৷ অতীতের 7টি ছাগল বলির এখনও বহাল রয়েছে । বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে আসছে মৃৎশিল্পীরা । পুজোর সময় ডাক পড়ে ঢাকিদের ।
বসু বাড়ির আরেক সদস্য প্রকৃতি বসু বললেন, "আমাদের পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র বসু ৷ তারপর কেশবচন্দ্র বসু, রাধানাথ বসু, গৌরীচন্দ্র বসু, দুর্গাদাস বসু ৷" একসময় এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হত ৷ এখন 40-50 কিলো চালের নৈবেদ্য হয় ৷ নবমীর দিন বিকেলে পরিবার, বন্ধু, পাড়ার সবাইকে নৈবেদ্য আর পাঁঠার মাংস প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়, জানালেন বসু পরিবারের মেয়ে ৷ মা চণ্ডীর ঘটে 1হাজার বেলপাতা, 1 হাজার তুলসী পাতা দিতে হয় ৷ হোমের আগুনও 5 দিন ধরে একভাবে জ্বলতে থাকে আলাদা একটি ঘরে ৷ অতীতে পালাগান ও কবিয়ালের আসরও বসত এই বাড়িতে ।
সায়ন্তন বসু জানালেন, কৃষ্ণচন্দ্র বসুর তৈরি বিশাল প্রাসাদ জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছে ৷ সে সব সংস্কারের কাজ চলছে ৷ পুরনো মন্দিরও নেই এখন ৷ সবকিছুই নতুন করে গড়ে তুলছেন তাঁরা ৷
কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা ভিন রাজ্যে, ভিন দেশে থাকলেও দুর্গাপুজোর সময় সবাই চলে আসেন এখানে । একসঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে বসু পরিবার । এ যুগেও প্রাচীন ঐতিহ্যকে বজায় রাখার চেষ্টা করছে একুশ শতকের প্রজন্ম ।