কোচবিহার, 22 : মাস ছয়েক আগে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে । চলাচল করছে সরকারি ও বেসরকারি গাড়ি ,পণ্যবাহী ট্রাক । রিজার্ভ গাড়িও যাতায়াত করছে । প্রশাসনের নির্দেশে শুধুমাত্র যাত্রীবাহী ছোটো গাড়ি চলাচল করতে পারে না, কারণ সরকার সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেনি । ফলে, এক গাড়িতে এসে সেতুর মুখে নেমে অন্য গাড়ি ধরে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে ! গত কয়েকমাস ধরেই এই পরিস্থিতি চলছে ৷ হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে দিনহাটা মহকুমার অন্তত 15 হাজার বাসিন্দাকে । শুধু হয়রানিই নয়, ভাড়াও বেশি লাগছে । এদিকে, দ্রুত সেতুটিতে যাত্রীবাহী গাড়ি চালু করার দাবি জানিয়ে আসছেন বাসিন্দারা । দাবি এখনও মানা না হলেও প্রশাসনের আশ্বাস, দুর্গোপুজোর মধ্যে সেতুতে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হবে ।
মাঝে মানসাই নদী বয়ে যাওয়ায় মহকুমা শহর দিনহাটা থেকে বিচ্ছিন্ন সিতাই ব্লকের 5 টি গ্রাম পঞ্চায়েত । এই ব্লকে হাটবাজার কিংবা স্কুল থাকলেও নেই কলেজ । উচ্চশিক্ষার জন্য দিনহাটা কলেজে যেতে ভরা বর্ষায় নৌকোয় নদী পেরোতে হয় । আর খরার মরশুমে 2 কিলোমিটার বালুচর ডিঙোনোর ঝক্কি । ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হলেও নদী পেরোতে হয় । এছাড়া এলাকায় কোনও দমকল কেন্দ্রও নেই । ব্লকের কোথাও আগুন লাগলে 60 কিলোমিটার দূরের মাথাভাঙা থেকে আসে দমকলের ইঞ্জিন ৷ অনেক ক্ষেত্রেই তার আগেই সব শেষ ! এই সমস্ত কারণেই কয়েক দশক ধরেই মানসাই নদীর ওপর সেতু তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা । বাম আমলে 2009 সালে লোকসভা নির্বাচনের আগেভাগে সেতুর শিলান্যাস হয় ৷ পালাবদলের পর 2012 সালে সেতুর কাজ শুরু হয় । বরাদ্দ হয় 120 কোটি টাকা । ঠিক ছিল পাঁচ বছরে সেতুর কাজ শেষ হবে । কিন্তু নদী-ভাঙন ও জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কাজ শেষ করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয় । এতে বাজেট বেড়ে হয় 160 কোটি টাকা ।
সেই সেতুর কাজ শেষ হয়েছে লকডাউনের আগেই । সেতুতে নীল সাদা রং-ও পড়েছে । ধীরে ধীরে সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলও শুরু হয় । সরকারি-বেসরকারি গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, মোটরবাইক- সবই চলে । কিন্তু যাত্রীবাহী গাড়ি চলে না । যেহেতু সরকার বাহাদুর সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে উঠতে পারেননি । এই অবস্থায় দিনহাটা-সিতাই রুটের শতাধিক অটো দিনহাটা থেকে যাত্রী নিয়ে সাগরদিঘি ঘাটে সেতুতে ওঠার মুখে নামিয়ে দেয় ৷ এরপর সিতাইয়ের গাড়িতে চাপেন যাত্রীরা । এমনটাই চলছে মাসের পর মাস ৷ এই হয়রানি নিস্তার থেকে পেতেই দিনহাটা-সিতাইযের মধ্যে সরাসরি গাড়ি চালানোর দাবি তুলছেন বাসিন্দারা ।
সিতাইয়ের বাসিন্দা শ্রীকৃষ্ণ বর্মণ বলেন, "সেতুর কাজ শেষ হলেও উদ্বোধন না হওয়ায় যাত্রীবাহী গাড়ি চলছে না । যাত্রীরা হয়রানিতে পড়ছেন । শুধু দিনহাটা-সিতাই রুটই নয়, সেতুর ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হলে দিনহাটা-শীতলকুচি, দিনহাটা-মাথাভাঙা, দিনহাটা-শিলিগুড়ি ভায়া শীতলকুচির মধ্যে বাস পরিষেবা সচল হবে ।"
শীতলকুচির বাসিন্দা মালেক মিঞা বলেন, "সেতুটি চালু হলে মানুষের হয়রানি অনেকটাই কমবে । "
অটো চালক রফিক মিঞা, শাহাদাত আলিরা বলেন, "আমরা দিনহাটা থেকে যাত্রী নিয়ে এসে সেতুর এপারে নামিয়ে দিই । সেখান থেকে যাত্রীদের ফের সিতাইয়ের গাড়িতে উঠতে হয় ।"
সেতুর নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও এমন যাত্রী দুর্ভোগ কেন হবে?
শাসকদলের বিধায়ক জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার বক্তব্য, "অ্যাপ্রোচ রোডের 10-15 দিনের কাজ বাকি আছে । তবে উদ্বোধন কবে হবে এই বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না ।"
দিনহাটার মহকুমা শাসক শেখ আনসার আহমেদের কথায়, "আশা করছি পুজোর মধ্যে সেতু চালু হয়ে যাবে ।"
যে অ্যাপ্রোচ রোডের কথা বলছে প্রশাসন তা দিয়েই তো সরকারি, বেসরকারি প্রাইভেট গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক দিনহাটা-সিতাইয়ের মধ্যে যাতায়াত করছে৷ তাহলে যাত্রীবাহী অটো, বাস কী দোষ করল? কেউ জনেন না !