কোচবিহার, 25 জুলাই: এ পার বাংলায় চাহিদা কম থাকলেও ও পার বাংলায় চাহিদা প্রচুর । সেই কারণে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে পাচার হচ্ছে 'চুই ঝাল'। মূলত মাংস রান্নার ক্ষেত্রেই এই মশলার দারুণ কদর বাংলাদেশে ।
চুই ঝাল আসলে কী ? এই মশলা একাধিক নামে পরিচিত ৷ তবে এটি চাই ঝাল বা চুই ঝাল নামেই বিখ্যাত । যার বিজ্ঞানসম্মত নাম পাইপার চাবা ৷ এটি আবার পাইপার চিলি নামেও পরিচিত ৷ এটি মূলত লতা-গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ । নাম চুই ঝাল হলেও, স্বাদে কিন্তু তেমন ঝাল নয় ৷ তবে এর স্বাদ ও গন্ধের কোনও তুলনা নেই । চুই ঝাল গাছ অনেকটা পান গাছের মতো দেখতে । কোচবিহার, জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বেশকিছু এলাকায় পাওয়া যায় এই গাছ । কোচবিহার জেলায় এই গাছের বেশি দেখা মেলে । কেউ আবার বাড়ির ছাদে বা মাঠেও এর চাষ করে থাকেন ।
কোথায় কোথায় ব্যবহার হয় এই চুই ঝাল ? জানা যায়, বাংলাদেশের যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইলের অধিকাংশ এলাকায় ভালো স্বাদের মাংস রান্নাতে ব্যবহার হয় চুই ঝাল । মাংসের সঙ্গে চিবিয়েও খাওয়া হয় এই চুই ঝাল । তবে শুধু রান্নার স্বাদবৃদ্ধি নয়, একাধিক ভেষজ গুণও রয়েছে এই চুই ঝালের । গাছের কাণ্ড ছোট ছোট করে কেটে শুকিয়ে তারপর রান্না করা হয় । বাংলাদেশে চুই ঝাল প্রতি কেজি 300-400 টাকা হলেও চুই ঝাল গাছের গোড়ার অংশের দাম বাংলাদেশে 500 টাকারও বেশি । সময় বিশেষে দাম দিগুণ হয় বলে জানা গিয়েছে ।
চুই ঝাল দিয়ে কীভাবে রান্না হয় ? স্বাদ কেমন ? চুই ঝাল শুধু রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ায় তাই নয়, রান্নার পর গোটা চুইকে চিবিয়েও খাওয়া হয় । তাই মাংস, ছোলার ঘুগনি, খিচুড়ি, ঝালমুড়িতে চুই ঝাল ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে দেওয়া হয় । এছাড়া ঝোল ঘন করার জন্য বেটেও চুই ঝাল তরকারিতে দেওয়া হয় । তুলনামূলকভাবে এ পার বাংলায় চুই ঝালের ব্যবহার কম, কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা ।
সীমান্ত দিয়ে পাচার: সম্প্রতি, কোচবিহারের জামালদহ সীমান্তে কৌশিক বিওপি-র অধীনে কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় গ্রাম লতামারিতে স্থানীয় বাসিন্দারা দুটি প্যাকেটে বাঁধা অবস্থায় পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে চুই ঝাল । এরপর কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ ও বিএসএফ এর তদন্ত শুরু করে ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে পাচারের আগেই উদ্ধার 140টি কচ্ছপ
তদন্ত শুরু হয়েছে: কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত ভার্মা বলেন, "আমাদের এই বাংলায় চুই ঝালের চাহিদা কম থাকলেও বাংলাদেশে এই চুই ঝালের চাহিদা অনেক । সেই কারণেই চোরাকারবারিরা চুই ঝাল পাচার করে মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করে । সম্প্রতি পাচারের আগে প্রচুর পরিমাণে চুই ঝাল লতামারি গ্রামে উদ্ধার হয়েছে । কীভাবে কাঁটাতার পেরিয়ে ওপারে চুই ঝাল পাচার হচ্ছে তা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয় । আমরা তদন্ত করছি । কোথা থেকে আনা হচ্ছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।"
নজর রাখছে পুলিশ ও বিএসএফ: এ দিকে, লতামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য কৌশিক রায় জানান, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে চুই ঝালের চাহিদা অনেক বেশি । তাই অসাধু ব্যক্তিরা চুই ঝাল রাতের অন্ধকারে কাঁটাতারের ওপারে পাচারের চেষ্টা করে । সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে । উদ্ধার হয়েছে চুই ঝাল । বিষয়টি পুলিশ ও বিএসএফ দেখছে ।" স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ লস্কর জানান, মাংস রান্নার মশলাও যে পাচার হচ্ছে সেটা ভাবতেও অবাক লাগে । বাংলাদেশে মাংসের চাহিদা অনেক । তাই এই মশলা প্রচুর ব্যবহার হয় । সেই চাহিদা মেটাতে এখান থেকে পাচার হচ্ছে ।"