কোচবিহার, 5 ফেব্রুয়ারি: আবারও বাংলাভাগের জিগির ! এবারের বক্তা বিজেপি নেতা তথা কার্শিয়াঙের বিধায়ক বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা (BJP MLA demands Separate State) ৷ গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বীর চিলা রায়ের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি ৷ সেই অনুষ্ঠানেই ফের একবার বাংলাভাগের কথা শোনা যায় এই গেরুয়া নেতার গলায় ৷ যদিও বিধায়কের এই মন্তব্যকে আমল দিতে নারাজ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷
রবিবারের অনুষ্ঠানে বিষ্ণু (Bishnu Prasad Sharma) বলেন, "আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ আপনি পাহাড়ে যান ৷ সেখানেও একই জিনিস দেখতে পাবেন ৷ এখানেও রাজবংশীদের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ এটা হতে দেওয়া চলবে না ৷ আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস আমাদেরই বাঁচাতে হবে ৷ তাই আমাদের সকলকে একজোট থাকতে হবে ৷ একজোট থাকলে তবেই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যপূরণ সম্ভব ৷" এর প্রক্ষিতে এক সাংবাদিক বিজেপি বিধায়ককে প্রশ্ন করেন, "আপনাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী ?" জবাবে বিধায়ক বলেন, "বাংলাভাগ ! আমরা আলাদা রাজ্য চাই !"
আরও পড়ুন: 'বিজেপি সবসময় ছোট রাজ্য চায়', সাংসদের মন্তব্যে জল্পনা
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "এ নতুন কিছু নয় ৷ আগেও বহু নেতা বাংলাভাগের কথা বলেছেন ৷ তাঁরা সবাই চুপসে গিয়েছেন ৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এখন আর এ নিয়ে কোনও কথা বলেন না ৷ সেখানে নিচুতলার কয়েকজন বিধায়ক কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না ৷ তিনি হয়তো একটু বেশি হাততালি পাওয়ার জন্য এসব কথা বলছেন ! তাই তাঁকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও কারণ নেই ৷ বাংলাভাগ হবে না, হবে না, হবে না ৷ বাংলাভাগ হতে দেওয়াও হবে না ৷"
প্রসঙ্গত বাংলাভাগ নিয়ে রাজনীতি সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ৷ আসলে এ রাজ্যে উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয় ৷ উত্তরবঙ্গবাসীর অভিযোগ, তাঁরা বরাবর অবেহলিতে থেকে গিয়েছেন ৷ বাংলার প্রশাসন মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক ৷ আর সেই কারণেই দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ ৷ তাছাড়া, উত্তরবঙ্গে যে পাহাড়ি মানুষ বা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ থাকেন, তাঁদের সংস্কৃতিও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সঙ্গে মেলে না ৷ এই বৈসাদৃশ্যকে হাতিয়ার করেই ইদানীং বাংলাভাগের অস্ত্রে শান দিচ্ছেন গেরুয়া নেতারা ৷ যদিও বাম জমানা হোক, কিংবা তৃণমূলের সরকার, কোনও পক্ষই বাংলাভাগকে সমর্থন করে না ৷
বীর চিলা রায়ের জন্মজয়ন্তী উদযাপন নিয়েও ভেদাভেদ রয়েছে ৷ একদিকে, কোচবিহার রাসমেলার মাঠে বংশীবদন বর্মনের নেতৃত্বাধীন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্য়াসোসিয়েশন বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ৷ অন্যদিকে, অনন্ত মহারাজের নেতৃত্বাধীন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন অনুষ্ঠান করে কোচবিহার-2 ব্লকের সিদ্ধেশ্বরীতে ৷ গত বছর সিদ্ধেশ্বরীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ এবারও তাঁকে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, তিনি আসেননি ৷ তবে, তাৎপর্যপূর্ণভাবে শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে প্রথম দিনই সামিল হয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ৷ আর রবিবার এলেন বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা ৷ সেখানেই অনন্ত মহারাজের পাশে বসে ফের একবার বাংলাভাগের কথা বললেন তিনি !