কলকাতা, 19 এপ্রিল : প্রথম দফায় দাবি উঠেছিল অল্পবিস্তর। দ্বিতীয় দফায় দাবিটা হয় জোরদার। চাই কেন্দ্রীয় বাহিনী। দ্বিতীয় দফায় শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি করলেও কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক বুঝেছেন চোপড়ার গন্ডগোল আসলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতেই। আর তাই তৃতীয় দফায় 100 শতাংশ বুথেই থাকতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কমিশন সূত্রে খবর, তৃতীয় দফায় থাকবে 324 কম্পানি বাহিনী। কমিশনের আশা, এরপর অন্তত বাহিনী সংক্রান্ত অভিযোগ আর উঠবে না।
বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিক ছিল, দ্বিতীয় দফায় বাহিনী আসবে 274 কম্পানি। সেই মতো তৈরি হয়ে গেছিল পরিকল্পনা। বুধবার মাঝরাতে আসেন রাজ্যের বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক। তারপরই বদলে যায় গোটা চিত্রনাট্য। গতকাল সাত সকালে যখন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরে পা রাখছেন তিনি, ততক্ষণে গোয়ালপোখরে রক্ত ঝরেছে সাংবাদিকের। সূত্র বলছে, রক্তাক্ত সেই ছবি টেলিভিশনের পর্দায় দেখে বিচলিত হন বিশেষ পর্যবেক্ষক এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। যদিও পরে রিপোর্ট আসার পর বিষয়টিকে অত গুরুত্ব দিতে চাননি বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক। কিন্তু তারপরই সামনে আসে চোপড়ার ঘটনা। সেখানে একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট দিতে যাবেন না বলে দাবি করেন প্রায় 150 জন ভোটার। পরে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তরের নির্দেশে পুলিশ এসে তাদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি। সেই গন্ডগোল দীর্ঘস্থায়ী হয়। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ওঠে গুলি চালনার অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে ফাটাতে হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। দ্বিতীয় দফায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি বলতে মূলত ছিল এই দুটি ঘটনা।
তার আগে বুধবার রাতে অবশ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েই ঘটে যায় দুটি ঘটনা। নির্বাচনের জন্য রায়গঞ্জে ব্লকের GSST স্কুলের 35/185 নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। বুথটিতে ভোটকর্মীরা ঢুকতে যান। কিন্তু, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না করায় ভোটকর্মীদের স্কুলে ঢুকতে দেননি স্থানীয়রা। কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছায় রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। তাদেরও আটকে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে বুথজ্যাম করা হয়েছিল। দেদার ছাপ্পা দেওয়া হয়েছিল। সেজন্য সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসে পুলিশ। স্থানীয়দের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন কর্ণজোড়া ফাঁড়ির OC চন্দন সিং। রীতিমতো আঙুল তুলে পুলিশের সঙ্গে তর্ক করতে থাকেন স্থানীয়রা। রায়গঞ্জের ছত্রপুর এলাকাতেও একই দাবিতে এলাকাবাসীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিষয়গুলি নজর এড়ায়নি বিশেষ পর্যবেক্ষকের।
গতকাল বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের সঙ্গে বৈঠকের পর ঠিক করে ফেলেন দ্বিতীয় দফায় যে কোনও মূল্যে সব বুথে রাখতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কারণ তৃতীয় দফার 5টি কেন্দ্রের ভোট অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাড়ানো হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা। সেই সূত্রে বুধবার পর্যন্ত বাহিনী মোতায়েনের যে প্ল্যানিং ছিল তা পালটে গেছে। 274-র জায়গায় আসতে চলেছে 324 কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। যার ফলে 100 শতাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে চলেছে।