রামপুরহাট, 22 ডিসেম্বর: 2013 সালের পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তী হিংসায় এক সিপিএম কর্মীকে পিটিয়ে খুন করার অপরাধে 12 জন তৃণমূল কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল রামপুরহাট মহকুমা আদালত । রামপুরহাট মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস অপরাধীদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানারও নির্দেশ দিয়েছেন ৷ জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছে ৷
2013 সালের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরদিন 23 জুলাই বীরভূমের রামপুরহাট থানার সইপুর গ্রামে সিপিএম কর্মী 28 বছরের হুমায়ূন মীরের উপর চড়াও হয়ে তাঁকে বাঁশ, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করা হয় । 24 জুলাই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় । এই ঘটনার পর সেদিনই রামপুরহাট থানায় দাদাকে খুনের অভিযোগে 14 জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বোন জেসমিনা খাতুন । তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে 14 জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে রামপুরহাট থানার পুলিশ । মামলা চলাকালীন দু'জন অভিযুক্তের মৃত্যু হয় । গত 20 জুলাই আদালতের বিচারক 12 জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন । আজ রামপুরহাট মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক গুরুদাস বিশ্বাস 12 জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন ।
যদিও দোষী পক্ষের দাবি, আসল ঘটনা পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে । দোষী পক্ষের এক আসামির আত্মীয় মীর আব্বাস বলেন, "মহকুমা আদালতের এই রায়ের পরিপেক্ষিতে আমরা উচ্চ আদালতে যাব ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য । মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ঝামেলায় এই খুন, কিন্তু যেহেতু ভোটের পরের দিন ছিল, তাই রাজনৈতিক রং দিয়ে নিরীহ লোকেদের ফাঁসিয়ে দেওয়া হল ।"
এই বিষয়ে সিপিআইএম নেতা সঞ্জীব মল্লিক বলেন, "2011 সালের পালাবদলের পর প্রথম পঞ্চায়েত ভোটের দু'দিন পর আমাদের দলের কর্মী হুমায়ুন মীরকে বাড়ি থেকে বের করে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে খুন করা হয় । গোটা রাজ্যজুড়ে তৃণমূল সন্ত্রাস চালাচ্ছে । বহু মামলা চলছে । এই রায়ের উপর আমরা আগামী দিনে একটু ভরসা পাচ্ছি ।
মৃত হুমায়ুন মীরের বাবা মীর আসগর আলি বলেন, "আমার ছেলেকে পিটিয়ে খুন করেছে । সাজাপ্রাপ্ত কয়েক জনের ফাঁসি হলে খুশি হতাম । তবে এই রায়ের পর আমরা খুবই আতঙ্কিত । গ্রামে থাকতে পারব কি না জানি না । যদি প্রয়োজন হয় সব বিক্রি করে গ্রাম ছেড়ে চলে যাব ।"
তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, "বিরোধীরা যেটা বলে থাকে যে, পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে । আজ রামপুরহাটে আদালতের যে সাজা হল এটাই প্রমাণ করে যে, প্রশাসন তার নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে । পুলিশ সক্রিয় আছে এবং নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করেছে বলেই তৃণমূল কর্মীরা সাজা পেয়েছেন ৷ তবে আমরা দলগত ভাবে তৃণমূল কর্মীদের পাশে আছি । উচ্চতর আদালতে আপিল করা হবে । যেটুকু করা দরকার দল তাঁদের জন্য করবে ।
আরও পড়ুন: