রামপুরহাট, 19 অগাস্ট : মাথার উপর প্রচণ্ড রোদ ৷ তার মাঝে রাস্তায় শুয়ে কাতরাচ্ছে এক বৃদ্ধ ৷ এই ছবি ধরা পড়ল রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডে ৷ তাঁকে সেই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে রামপুরহাট থানায় খবর দেন এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ৷ তারপরই সেখানে গিয়ে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে পুলিশ ৷ ভরতি করা হয় রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৷
বৃদ্ধার নাম মদন কোনাই ৷ মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার চেঁচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ৷ রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক স্থানীয় লটারি ব্যবসায়ী সুরজ আলি বলেন, "প্রায় তিন মাস ধরে এভাবেই রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন মদন কোনাই ৷ আজ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় ৷ তারপরই আমরা পুলিশে খবর দিই ৷ পুলিশ এসে তাঁকে নিয়ে যায় ৷ তাঁকে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভরতি করা হয়েছে ৷" লকডাউন শুরুর পর থেকে রামপুরহাট রেল স্টেশনেই হয়ে উঠেছিল তাঁর আস্তানা । সেই সময় কয়েকটি সমাজসেবী সংস্থার সুবাদে দুই বেলা খাবার জুটত ওই বৃদ্ধার ৷ কোথায় বাড়ি? কোথা থেকে এসেছেন? কেউ কিছুই জানত না ৷
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরায় প্রথম ওই বৃদ্ধের মুখ থেকে জানতে পারেন তাঁর নাম মদন কোনাই ৷ বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার চেঁচুড়িয়া গ্রামে । পরিবার বলতে বাড়িতে রয়েছে তাঁর চার ছেলে ৷ কিন্তু ছেলেদের সঙ্গে ঝামেলার জেরে বাড়ি ছেড়েছেন প্রায় তিন মাস ৷ তারপর থেকেই রামপুরহাট রেল স্টেশনেই থাকছিলেন ওই বৃদ্ধ ৷
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে তাঁকে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টাও কার হয় ৷ কিন্তু বাড়ি যেতে রাজি ছিলেন না মদন কোনাই ৷ টোটোতে একবার বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও মাঝপথে রাস্তায় নেমে যান ওই বৃদ্ধ ৷ তারপর থেকে রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থাকতেন তিনি ৷ গত দু'দিন ধরে শরীর অসুস্থতার জেরে বাসস্ট্যান্ডর রাস্তায় রোদের মধ্যেই দিন কাটছিল তাঁর ৷ এই অবস্থা দেখে বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন ওই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী । জানা যায়, মদন কোনাইয়ের সোজো ছেলে কৃষ্ণ কোনাই ৷ পেশায় ড্রাইভার ৷ তাকে ফোন করে বাবার শারীরিক অবস্থার কথা জানালে কানে তোলেননি তিনি ৷ অভিযোগ ব্যবসায়ীদের ৷ উলটে কৃষ্ণ কোনাইয়ের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় বাবার জন্য কোনও কিছুই করতে পারবে না সে ৷ খবর দেওয়া হয় রামপুরহাট থানায় ৷ পুলিশ গতকাল বিকেলে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করে ।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, কয়েকদিন রোদে শুয়ে থাকার কারণে বৃদ্ধের শরীরের জলের অভাব তৈরি হয় ৷ যার জেরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার শর্মিলা মৌলিক বলেন, "আপাতত বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল । ক্রমাগত স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে তাঁকে । আশা করি উনি কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন ।"