বীরভূম, 9 জুন : রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন পেশার মানুষজনকে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছে । কিন্তু বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরা ? না, তাঁদের কথা এখনও পর্যন্ত কেউ ভাবেননি ।
ভোটের সময় বয়স্ক ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের যেভাবে ভোট দানে উৎসাহিত করা হয়, ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে সেরকম কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা গেল না । বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের দাবি, বাড়িতে এসে তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক সরকারের তরফে ।
উল্লেখ্য, কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে শুরু থেকেই রাজ্য ও কেন্দ্র সংঘাত চলছে । তার মাঝেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজও চলছে । হকার থেকে শুরু করে পরিবহণ কর্মী, ভ্যাকসিনেশনের তালিকায় বাদ নেই কেউ ৷ কেবল ব্রাত্য রয়ে গেছেন ওঁরা ৷ ওঁদের হয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারই আওয়াজ তুলল না ৷ প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে মহকুমা হাসপাতাল ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সব জায়গাতেই ভ্যাকসিনেশনের লাইনে ভিড় ৷ তবু ওঁরা রয়ে গিয়েছেন ঘরের কোণে ৷ আর পাঁচজনের মত লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না বলেই কী ওঁদের কথা ভাবল না কেউ ? এইসব প্রশ্নই চক্কর কাটছে ওঁদের মনে ৷
পরিসংখ্যান বলছে, 2011 সালের জরিপ অনুযায়ী বীরভূম জেলায় মোট 49069 জন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষজন রয়েছেন । শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক, এমনকি ষাটোর্ধ্ব মানুষজনকে নিয়েই এই পরিসংখ্যান । প্রতিবন্ধকতাকে মোট আট ভাগে ভাগ করা হয় । এদের মধ্যে বীরভূম জেলায় মানসিকভাবে দুর্বল রয়েছেন 1668 জন, বধিরের সংখ্যা 4581 জন, মানসিক ভারসাম্যহীন রয়েছেন 4568 জন, অস্থি সংক্রান্ত বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের সংখ্যা 24480 জন, মূক ও বধির রয়েছেন 2840 জন, অন্ধত্ব সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে 5004 জনের, একাধিক সমস্যাজনিত ব্যক্তি রয়েছেন 3530 জন ৷ এছাড়াও অন্যান্য সমস্যাজনিত ব্যক্তির সংখ্যা 372 জন ।
তাই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বলা যায়, বীরভূম জেলাজুড়ে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় ৷ জেলার মধ্যে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি রয়েছে বোলপুর, রামপুরহাট, সাঁইথিয়া, লাভপুর ও ময়ূরেশ্বর ব্লকে । এই প্রত্যেকটি ব্লকেই সংখ্যাটা 3 হাজারের উপরে । চিকিৎসকদের সার্টিফিকেট অনুযায়ী 85 থেকে 95 শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম মানুষও রয়েছেন অনেক ।
বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা বলছেন, "আমরা তো এত রোদে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারব না । আমাদের বাড়িতে এসে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক । সেই আর্জি জানাচ্ছি সরকারের কাছে ।"
তাঁদের পরিবারের লোকেদের দাবি, "রোদের মধ্যে এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন নিতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে । বাড়িতে এসে ওঁদের যদি ভ্যাকসিন দেওয়া হয় তাহলে খুব ভাল হয় ।"
মানসিক ভারসাম্যহীন ও মানসিক বিকারগ্রস্ত বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে কিনা বা দেওয়া গেলেও তা কীভাবে হবে সে বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া দরকার । বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি হলেও তাঁদের কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া যেতেই পারে । তাই তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে ভাবুক সরকার এটাই চাওয়া ওঁদের ৷
আরও পড়ুন : করোনার জেরে অনুষ্ঠান বন্ধ, খিদের জ্বালায় সুর ভুলেছেন বাউল শিল্পীরা