ইলামবাজার, 6 জুলাই : তিনি অভিনেত্রী নন ৷ ক্রীড়াবিদ বা রাজনীতিকও নন । তবে সাড়া ফেলে দিয়েছেন নেট দুনিয়ায় ৷ সাদামাটা কিন্তু সুস্বাদু খাবার রান্না করেই অশীতিপর বৃদ্ধা নেটবিশ্বে সমাদৃত । ফেসবুক-ইউটিউব মিলিয়ে 27 লক্ষের বেশি মানুষ ফলো করেন তাঁকে ৷ বিলাসবহুল শৌখিন রান্নাঘরে নয়, খড়ের চালের রান্নাঘর, মাটির উনুন, কাঠের জাল, মাটির আসবাবপত্র- এই হল পুষ্পরানি দেবীর ব্যবস্থা ৷ তাতেই তাঁর জনপ্রিয়তা সেলিব্রিটি-তুল্য ৷ মাঝে-মধ্যেই তাঁর অনুরাগীরা দেখাও করতে আসেন ৷ নিয়মিত ফোন তো আছেই ৷ নাতি এবং বউমায়ের সহযোগিতায় এই ইউটিউবার দিদা আজ আইকন ।
বীরভূম জেলার ইলামবাজার থানার বনভিলা গ্রামের বাসিন্দা পুষ্পরানী সরকার । বয়স ছুঁয়েছে 82 ৷ ছেলে, বৌমা, নাতিদের নিয়ে তাঁর সংসার । ঠাকুমা খুব ভাল রান্না করেন ৷ ঠাকুমায়ের হাতের রান্না চেটেপুটে খায় নাতিরা । ঠাকুমা কেমন রান্না করে তা দেখতে মোবাইলে একদিন ভিডিয়ো করতে বসেন নাতি কাজল সরকার । সেই ভিডিয়ো ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে দেন নাতি কাজল ৷ চ্যানেলের নাম দেওয়া হয় 'ভিল-ফুড' অর্থাৎ ভিলেজ ফুড মানে গ্রামীণ খাবার ৷ বাঁশ-খড় দিয়ে তৈরি রান্নাঘর ৷ গোবর দিয়ে লেপামোছা মেঝে ৷ কাঠের জালের মাটির উনুন ৷ বাসনপত্রও মাটির ৷ সেখানেই রান্না করছেন অশীতিপর পুষ্পরানি ৷ সেই ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড হতেই বহু মানুষের নজরে আসে । চার বছর আগে নাতির হাতধরে এভাবেই যাত্রা শুরু ইউটিউবার দিদার ৷
এই চার বছরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা । তা শুধু ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ নয় ৷ রয়েছে একটি ফেসবুক পেজও ৷ সেখানেও আপলোড করা হয় তাঁর রান্নার ভিডিয়ো । দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সেইসব ভিডিয়ো দেখেন ও ফলো করেন ৷ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের নেট মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের বৃদ্ধা ইউটিউবারের সাদামাটা রান্নার প্রণালী ৷ ইউটিউব-ফেসবুক মিলিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, জাপান, চিন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, আফ্রিকা-সহ গোটা বিশ্বের প্রায় 150টি দেশে 27 লক্ষের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে তাঁর ।
কখনও দেশি মুরগির মাংস আর লুচি, কখনও কই-মাগুর মাছের ঝোল, কখনও থানকুনি পাতা দিয়ে মাছের ঝোল, কখনওবা চচ্চড়ি ৷ ঠাকুমার এইসব রান্নার ভিডিয়ো বানিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন নাতি কাজল সরকার । নেই পেশাদারিত্ব, নেই আহামরি রান্নাঘরও ৷ অতি সাধারণ তেল-মশলা দিয়েই নিত্যদিনের ঘরোয়া খাবার প্রস্তুত করে সেলিব্রিটি দিদা ৷ সাহায্য করেন বউমা কবিতা সরকার ।
ইউটিউবার দিদার অনেক অনুরাগী ৷ অনেকেই আসেন দেখা করতে ৷ ফোনও করেন নিয়মিত । বিভিন্ন মশলা, তেল ইত্যাদির কোম্পানিগুলি তাদের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করার জন্য রীতিমতো অনুরোধ করেন পুষ্পরানিকে ৷ ইউটিউব, ফেসবুক থেকে বছরে বড় অঙ্কের আয় হয় তাঁর । সেই আয়ের একটা অংশ বনভিলা গ্রামের দুস্থ আদিবাসীদের নিয়মিত খাওয়ানোয় ব্যয় করেন তিনি । লকডাউনের শুরু থেকে এমন প্রায় দু'শো মানুষকে নিয়মিত খাবার জোগান দিয়েছে সরকার পরিবার ।
পুষ্পরানি বলেন, "মাত্র 13 বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছিল । শাশুড়ি মা ছিলেন না । নিজে নিজেই অল্প অল্প করে রান্না শিখেছি ৷ নাতিরা বলত ঠাকুমা খুব সুন্দর রান্না হচ্ছে । একদিন হঠাৎ করেই মোবাইলে ছবি তুলে নাতি কোথায় যেন দিয়ে দিল । তারপর থেকে সেই চলছে । আমি চাই আমার নাতিরা ভাল থাকুক । এক সময় ওদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারতাম না । এখন আর অভাব নেই । কত মানুষ আসেন দেখা করতে । ভাল লাগে ।"
বউমা কবিতা সরকার বলেন, "শাশুড়ি মাকে সহযোগিতা করি । খুব সুন্দর রান্না করেন উনি । ওঁর কাছেই আমি রান্না শিখেছি ৷ যতদিন উনি আছেন আমাদের এই রান্নাঘরও আছে ।"
নাতি কাজল সরকার বলেন, "বিভিন্ন নামীদামি খাবারের রেসিপি আমরা ফেসবুক-ইউটিউবে দেখি ৷ কিন্তু মা-ঠাকুমার হাতের তৈরি খাবারের রেসিপি সচরাচর দেখা যায় না । নতুন কিছু করতে হবে, এই ভেবে ঠাকুমার রান্না করার ভিডিয়ো তুলে আপলোড করতে থাকি । এখন তা দেশ-বিদেশের বহু মানুষ দেখছেন । আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । এটাই আমাদের পাওনা ।"
আরও পড়ুন : Ajay River : কোপাইয়ের পর অজয়েও জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য, প্রতিবাদ নাট্যকর্মীদের