তারাপীঠ, 1 ডিসেম্বর: উনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর থেকেই প্রচারের আলোতে আসে বীরভূমের তারাপীঠ । তারপর থেকে যতদিন গিয়েছে ততই বেড়েছে মা তারার ভক্ত ৷ হাজার থেকে লাখো ভক্ত সমাগম হতে শুরু করে কৌশিকী অমাবস্যায় । তাকে ঘিরেই গজিয়ে ওঠে সাধারণ থেকে ফাইভ স্টার হোটেল । এখন ছোট বড় মিলিয়ে 500 ও তার বেশি হোটেল রয়েছে তারাপীঠে ৷ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেই তারাপীঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার উন্নয়নের জন্য তৈরি করে তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ । শুধু মা তারার মন্দির নয়, এলাকার রাস্তাঘাটও পালটে যায় বিগত কয়েক বছরে ।
তারা মায়ের মন্দির ছাড়াও অন্যান্য অনেকগুলি মন্দির সংস্কারের কাজ করে এই উন্নয়ন পরিষদ । কিন্তু মাত্র তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে উদয়পুরের বহু প্রাচীন শিবমন্দির আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে । দু-ফালি হয়ে গিয়েছে শিবলিঙ্গ । মন্দিরের চূড়ায় জন্মেছে বিশাল বটবৃক্ষ । দিনের পর দিন রক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে মন্দিরের টেরাকোটার সেই ঐতিহ্য ।
তারাপীঠ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী গ্রাম উদয়পুর । এখানকার ডাকাতকালীর নাম শুনলে আজও গা শিউরে ওঠে এলাকার মানুষের । সেই গ্রামের ঢোকার পূর্ব দিকে আছে তিনটি শিব মন্দির । যাদের নাম রামেশ্বর, ঘগেশ্বর ও গৌরীকান্ত । প্রায় 400 বছরেরও বেশি হবে উদয়পুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এই শিবগুলির পুজো করে আসছে ।
এখানকার মন্দিরের সেবায়েত দিলীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "প্রায় 500 বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষের জমিদারীর অধীনে এই মন্দিরগুলি আসে । তখন থেকে আমাদের পরিবার এই মন্দিরগুলির পুজো করে আসছে । কিন্তু তখন জমিদারি ছিল, এখন আর নেই । ফলে এখন এই মন্দিরগুলির সংস্কার করার মতো আর্থিক অবস্থা আমাদের পরিবারের নেই । তাই আবেদন করব, যদি তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ এই মন্দিরগুলো নিয়ে সংস্কার করে, আমরা খুবই উপকৃত হব ।"
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আরেক সদস্য শোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "কে কবে এই মন্দির গুলি বানিয়েছিল তা বলতে পারব না । তবে মন্দিরগুলি দেখে মনে হয় আনুমানিক 400 বছরেরও বেশি পুরনো ৷ সংস্কারের অভাবে এখন মন্দিরগুলির অবস্থা জরাজীর্ণ । আমি তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদের কাছে আবেদন করব যাতে মন্দিরগুলি সংস্কার করে দেওয়া হয় । তাহলের এলাকার একটি ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে ।"
এই বিষয়ে তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "মন্দিরের দায়িত্বে থাকা পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করলে অবশ্যই আমরা মন্দিরগুলির সংস্কারের জন্য প্রস্তুতি শুরু করব । আমরা কখনও চাই না এরকম পুরনো মন্দির সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাক । এই জন্যই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ তৈরি করেছেন । আমাদের কাছে আবেদন এলেই পরবর্তী মিটিংয়ে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।"
আরও পড়ুন :