বাঁকুড়া, 15 নভেম্বর: "ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা", এই কথাটা শোনা যায় না, বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন বাঁকুড়া 2 নম্বর ব্লকের বদড়া গ্রামে ৷ এই গ্রামে পালিত হয় না ভাইফোঁটা ৷ অবাক হলেও ঘটনাটা সত্যি ৷ বুধবার সকাল থেকে রাজ্যের সর্বত্র ভাইফোঁটা হচ্ছে। উৎসবে মেতে উঠেছেন সবাই ৷ ঠিক তখনই বাঁকুড়ার এই গ্রামের বোনেরা ফোঁটা দেবে না ভাইদের ৷
বছরের পর বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে ৷ এই প্রসঙ্গে গ্রামেরই এক বাসিন্দা প্রদীপ কুমার রায় বললেন, আনুমানিক 300-400 বছর আগে এলাকাটায় জঙ্গল ছিল ৷ সেই সময়ে ভাইফোঁটার দিনে ক্ষত্রিয়দের একজন জঙ্গলে গিয়েছিলেন ৷ জঙ্গলে হিংস্র বাঘের হাতে তিনি প্রাণ হারান ৷ ভাইফোঁটার দিনে এমন দুর্ঘটনার পর থেকে বদড়া গ্রামে আর ভাইফোঁটাৈ পালিত হয় না ৷
বদড়া গ্রামকে কেন্দ্র করে রয়েছে আরও লোককথা ৷ এই গ্রামে মূর্তি পূজা হয় না ৷ গ্রামে রয়েছে মহামায়ার থান ৷ গ্রামবাসী দেবীর ভক্ত ৷ পরবর্তীকালে গ্রামে ভাইফোঁটা শুরু হয় ৷ কিন্তু তখন জমি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা তৈরি হয় ৷ শুরু হয় মামলা মোকদ্দমাও। এমনটাই জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ তারপর ফের বন্ধ হয়ে যায় ভাইফোঁটা পালন ৷
দীর্ঘদিন ধরেই দিদি বা বোনেদের হাতের ভাইফোঁটার স্বাদ পেত না বদড়া গ্রামের ছেলেরা ৷ তবে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বাঁকুড়া জেলার বদড়া গ্রামেও ৷ গ্রামবাসীদের আধুনিক চিন্তাধারা বলছে, ভাইফোঁটার মতো আনন্দদায়ক উৎসব থেকে ছোট ছেলে-মেয়েদের বঞ্চিত করা ঠিক নয় ৷ তাই কিছু কিছু পরিবার ভাইফোঁটা পালন করছে ৷ তবে নয়া স্রোতে গা ভাসিয়ে দেন না এমন পরিবারের সংখ্যা আজও বেশি।
বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রামের একাংশে ভাই ফোঁটা পালন হচ্ছে ৷ গ্রামবাসী পিনাকি রায়ের বাড়িতে আজ পালিত হবে ভাই ফোঁটা ৷ তিনি তাঁর মেয়ের আবদার ফেলতে পারবেন না বলে জানালেন ৷ তাই এই ভাইফোঁটার আয়োজন ৷ বাঁকুড়া জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে বহু না-বলা গল্প ৷ বাঁকুড়ার পল্লি সমাজের অলিতে গলিতে রয়েছে বিশেষ প্রথা এবং বিশ্বাস ৷ প্রত্যেকটি বিশ্বাসের পিছনেই রয়েছে একটি করে কারণ । সেই কারণের পাশাপাশি তার বর্তমান প্রেক্ষাপটটা জানাও একইরকম জরুরি ৷
আরও পড়ুন:
1. ভাইফোঁটার শুভ দিন, কাটবে কেমন জেনে নিন