জলপাইগুড়ি, 10 ফেব্রুয়ারি: সদ্য বিজেপি (BJP) ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে (Trinamool Congress) যোগদান করেছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল ৷ তার পরই শুক্রবার ওই জেলায় গিয়ে সুমনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ প্রশ্ন তুললেন 2021 সালের নির্বাচনে সুমনের জয় নিয়েও ৷ তাঁকে ‘অ্যাক্সিডেন্টাল বিধায়ক’ বলেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু ৷ বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক কোন হরিদাস পাল ! আমাদের একটা বুথ সভাপতিকে দাঁড় করিয়ে দিলেও জিততেন ।’’ তাঁর আরও দাবি, মানুষ নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) জন্য বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন ৷
এদিন আলিপুরদুয়ারের যে জায়গায় সভা হয় শুভেন্দু অধিকারীর, তার কাছেই বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের বাড়ি ৷ সেই কথাও উল্লেখ করেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক ৷ তবে তিনি একবারও সুমনের নাম উল্লেখ করেননি ৷ বরং তিনি বলেন, ‘‘আড়াইশো মিটার দূরে কে যেন একটা থাকেন না ! তাঁর কানে আওয়াজ পৌঁছাতে হবে ।’’ একই সঙ্গে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, গাড়ি ও বেআইনিভাবে অর্থ রোজগারের জন্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন সুমন ৷ তাই ওই বিধায়কের উদ্দেশ্যে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘তুমি টাকা রাখতে পারবে না । আমি বলে দিয়ে গেলাম । টাকা বের করবই । মাটির নিচে রাখলেও মাটির নিচ থেকে বের করব ।’’
সুমন কাঞ্জিলালের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, "দম যদি থাকে প্রকাশ্যে বল বিজেপি ছাড়লাম ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দিলাম ।’’ অন্যদিকে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির জেলা সভাপতি ছিলেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা ৷ তিনি অনেক আগেই তৃণমূলে গিয়েছেন ৷ তিনি এখন জয়গাঁ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ৷ তাঁর বিরুদ্ধেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু ৷ বলেছেন, ‘‘গঙ্গাপ্রসাদকে কীভাবে উৎখাত করতে হয় তা আমরা জানি ৷
একই সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে সুর চড়ান শুভেন্দু ৷ তাঁকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলে কটাক্ষ করেন৷ বলেন, ‘‘আমি ওর সব জানি । কত চন্দন কাঠ পাচার করছে, সব হিসাব আমাদের কাছে আছে । তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) এনে সভা করিয়েছেন । তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কালচিনিতে এসে সব মিথ্যার জবাব দেব । কিন্তু আমরা আজ আলিপুরদুয়ারে সভা করলাম ।’’
এই প্রসঙ্গে এদিন আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীর উদ্দেশ্যে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আপনি জেলাশাসক সুরেন্দ্র মিনার হয়ে কাজ করবেন না । সুমনের সঙ্গে কতবার জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের কতবার কথা বলেছেন, কী কী করেছেন, সব তথ্য আছে । এ কাজ যদি করেন তাহলে জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও হবে । সুরেন্দ্র মিনাকে 24 ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হবে ।’’
একই সঙ্গে শুভেন্দু দাবি করেন, তৃণমূল থেকেও অনেকে বিজেপিতে আসতে চাইছেন ৷ কিন্তু নেতাদের নেওয়া হবে না ৷ বরং বুথস্তরের কর্মীদের নেওয়া হবে ৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপিতে গিয়ে দু’টো কাজ ছিল - একটা মমতাকে হারানো । সেটা হয়েছে । আর একটা কাজ বাকি । মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করব । আপনাদের সঙ্গে চাই ।’’
আলিপুরদুয়ারে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) চা বাগানের সমস্যার সমাধানের দাবিতে বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের তরফে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে ৷ শুক্রবার তার পালটা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ বললেন, ‘‘ভুয়ো চাকরি গিয়েছে । এই সংখ্যা 30-40 হাজারে যাবে । চাকরি হারাদের পরামর্শ দিচ্ছি, আপনার তৃণমূলদের টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন । আপবার টাকা ফেরতের জন্য এজেন্টদের বাড়ি ঘেরাও করে আন্দোলন করুন । আপনারা হাজরা থেকে মিছিল করে কালীঘাট যান ।’’
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে পদ্মের ঘর ভাঙল, তৃণমূলে যোগ আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়কের
