আলিপুরদুয়ার, 31 অক্টোবর: জ্বলছে মশাল ৷ মাথায় লাগানো টর্চ ৷ ভেসে আসছে মাদলের সুর ৷ আর আপন মনে চা পাতা তুলছেন মহিলা শ্রমিকরা ৷ কোজাগরী পূর্ণিমায় এমনই দৃশ্যের সাক্ষী ছিল আলিপুরদুয়ার মাঝেরডাবরি চা বাগান ৷ এবছর নিয়ে মাঝেরডাবরিতে চতুর্থবার হল মুনলাইট টি প্লাকিং অর্থাৎ, জ্যোৎস্নায় চা পাতা তোলা । কোজাগরী পূর্ণিমায় এক অন্য সন্ধ্যা উপভোগ করলেন পর্যটকরা ৷ একদিকে মাদল এবং ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী নৃত্য, অন্যদিকে মহিলা চা শ্রমিকদের এই মুনলাইট টি প্লাকিং ৷ অর্থাৎ, জ্যোৎস্নায় দুইটি চা পাতা ও একটি কুঁড়ি তোলা ৷
ভাবছেন তো, দিনের আলোতে যখন পাতা তোলা যায় তখন হঠাৎ চাঁদের আলোতে কেন ? এর উত্তরে চা বাগান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দিনে সূর্যের আলোতে চা পাতার সুগন্ধ, বিশেষত্ব ও গুণাগুণ অনেকটা কম বা নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু, ফুলমুন অর্থাৎ পূর্ণিমায় চাঁদের আলোতে তুললে তাতে পাতার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে । সেই থেকেই ডুয়ার্সের বুকে এই চিন্তাভাবনার শুরু ৷ দার্জিলিংয়ের দুই একটি বাগান এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় চা পাতা তুলে থাকে ।
অতি যত্নের সঙ্গে এই পাতা তোলার কাজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত 12 ঘণ্টা সময় লাগে । বিকাল 5টা থেকে শুরু করে রাত 8টা পর্যন্ত পাতা তোলা হয় । এরপর শুরু হয় প্রক্রিয়াকরণ । ভোর 5টা থেকে সকাল 8টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । আর এই মুনলাইটে পাতা তোলা দেখতে এদিন মাঝেরডাবরি চা বাগানে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ থেকে পর্যটকরা ।
চা-বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরের কথায়,"সাধারণত দিনের বেলাতেই চা-পাতা তোলার প্রথা রয়েছে । তবে যেমন কিছু ফুল রয়েছে যারা রাতের বেলা সুগন্ধি ছড়ায় তেমনি পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চা-গাছের নির্দিষ্ট অংশ থেকে পাতা তোলা হলে তার সুগন্ধ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় । প্রথাগত সিটিসি চায়ের তুলনায় এই চায়ের পানীয় গুণ অনেকটাই বেশি । একেই বলে হয় মুনলাইট প্লাকিং । দেশ-বিদেশে এই চায়ের ভালো চাহিদা রয়েছে । এই চা দেড় হাজার টাকা কেজি ৷"
আরও পড়ুন : ত্বকের অনেক সমস্যায় চা-পাতা উপকারী, ব্যবহারের উপায় জেনে নিন