আলিপুরদুয়ার, 13 জুলাই: হিমাচলের ভয়াবহ ছবি ধরা দিল আলিপুরদুয়ারে ৷ হড়পা বানে বিপর্যস্ত জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা । ভুটান পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির ফলে খরস্রোতা পানা নদীর জল কালচিনির মেচ পাড়ার ঢুকে সব তছনছ করে দিয়েছে ৷ স্থানীয়দের উদ্ধার করতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনাকে । বিন্নাগুড়ি ও হাসিমারার দুই ইউনিটকে কালচিনির মেচপাড়াতে পাঠানো হয়েছে । তাঁরা গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন । স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে ৷
ভুটান পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীগুলো খরস্রোতা হওয়ায় নদীর জল ঢুকে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয় ৷ এ বারও তাই হয়েছে । পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জলে প্লাবিত হয় বাংরি নদী । নদীর জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের হান্টা পাড়ার একটি আইসিডিএস সেন্টার । নদী গ্রাস করেছে আইসিডিএস সেন্টারের ঘর । ভুটানগামী এশিয়ান হাইওয়ে দলসিংপাড়া এলাকায় প্রধান সড়ক দিয়ে নদী বইছে । এলাকার প্রচুর ঘর জলমগ্ন । যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ ৷ তীব্র সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ ।
রাতভর বৃষ্টিতে কালচিনি ব্লকের বিবাড়ি এলাকায় গোবরজ্যোতি নদীর উপরের সেতু ধসে গিয়েছে । ভারত ও ভুটানের মধ্যে সংযোগকারী 48 নম্বর এশিয়ান হাইওয়ের উপর সেতুটির 50 মিটার অংশ ধসে গিয়েছে ৷ ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । সড়ক পথে পায়ে হেঁটেও কারওকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না । আপাতত ভারত ও ভুটানের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । স্বাভাবিক কারণেই ওই আন্তর্জাতিক সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে পথের দুই পাশে আটকে পড়েছেন বহু মানুষ । আটকে রয়েছেন দুই দেশের যাত্রীরা ।
আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচলে বাড়ছে মৃত্যু, হলুদ সতর্কতা উত্তরাখণ্ডে
ভারত-ভুটান সীমান্তে জয়গাঁ ও ফুন্টসলিং-এর অবস্থাও খারাপ । জয়গাঁর ঝর্না বস্তিতে আজ সকালে তোর্সা নদীর জলে ভেসে গিয়েছেন সহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি । তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ । অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়া পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন । নদীর দুধারে আটকে রয়েছেন বহু মানুষ । এছাড়া হান্টাপাড়ার এক শ্রমিককেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে খবর ।
আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে । ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টি ও এলাকায় ভারী বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায় । ইতিমধ্যে তোর্সা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে । আলিপুরদুয়ার জেলার কালজানি, তিতি, বাংরি, পানা, তোর্সা-সহ বিভিন্ন নদী ফুলে ফেঁপে উঠেছে ৷
প্রবল বর্ষণে ভুটান সীমান্ত জয়ঁগা ও দলসিংপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । এলাকার বাসিন্দারা জানান, "রাত থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে । ভুটানের একাংশে ধসের ফলে বিভিন্ন ঝোড়ার জলের তোড়ে সেতু ভেঙে গাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে । আমাদের খাওয়া দাওয়া বন্ধ । বাড়ির ভেতরে জল ঢুকে আছে ।"
কালচিনির বিডিও জানান, "চুয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের 35টি পরিবার আটকে পড়েছিল । প্রথমে সিভিল ডিফেন্স নামানো হয় । এরপর সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনা ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করে উদ্ধার করেন বানভাসিদের । যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত । উদ্ধারকাজে আমিও নামি ।আমরা সকলে নিরাপদ জায়গায় উদ্ধার করে নিয়ে আসি মানুষকে । সেনাবাহিনী ও বায়ুসেনার কাজে আমরা খুব খুশি ।"
