ইম্ফল, 31 জুলাই : তিনি অসফল হয়েছেন, ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে সাফল্য পেয়েছেন ৷ টোকিয়ো অলিম্পিকসে ভারোত্তোলনে 49 কেজি বিভাগে রুপো জিতেছেন মীরাবাঈ চানু ৷ টোকিয়োয় দেশের হয়ে প্রথম পদক ৷
পাঁচবছর আগে রিও অলিম্পিকসে চূড়ান্ত অসফল ছিলেন ৷ সেখান থেকে টোকিয়ো অলিম্পিকসের পোডিয়ামে দাঁড়ানো ৷ আগামী প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করতে কোচেরা মীরাবাঈ চানুর এই অনুপ্রেরণাদায়ক কাহিনী অবশ্যই শোনাবেন ৷ কেমন ছিল যাত্রাটা ? মীরাবাঈ বলছেন, "বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম ৷ আমি কয়েকদিন ধরে খাবার পর্যন্ত খাইনি ৷ বুঝতে পারছিলাম না এত পরিশ্রম করার পরও কী হল ৷ সেদিনই শপথ নিয়েছিলাম যে আগামী দিনে আরও পরিশ্রম করব ৷ নিজের উপর বিশ্বাস ছিল ৷ আর সেই বিশ্বাস থেকে আমি করে দেখিয়েছি ৷" ইম্ফলের বাড়ি থেকে ইটিভি ভারতকে ফোন মারফত বললেন রুপোজয়ী ভারোত্তোলক ৷
পরিশ্রম এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসের সুফল পেয়েছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ৷ সেখান থেকে টোকিয়ো অলিম্পিকসের রুপোজয় ৷
প্রশ্ন : ভারতের হয়ে অলিম্পিকসে রুপো জয়, কেমন লাগছে ?
চানু : অনুভূতিটা দারুণ ৷ ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন ৷ দেশে ফেরার পর প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি ৷ বিমানবন্দরে নেমে দারুণ অভ্যর্থনা পেয়েছি ৷ আমি ভীষণ খুশি ৷
প্রশ্ন : তাহলে কতগুলো পিৎজা খেলেন ?
চানু : (হেসে) প্রচুর পিৎজা খেয়েছি ৷ দেশে ফেরার পর থেকে পিৎজা খেয়ে যাচ্ছি ৷ এখন তো আর গুনছি না ৷
প্রশ্ন : পাঁচবছর আগে রিও অলিম্পিকসে ক্লিন অ্য়ান্ড জার্ক বিভাগে তেমন পারফরম্যান্স করতে পারেননি ৷ তবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ৷ কোন বিষয়টা আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছে ?
চানু : রিও অলিম্পিকসে আমার অভিষেক হয়েছিল ৷ প্রস্তুতির সময় প্রচুর পরিশ্রম করেছি ৷ রিও অলিম্পিকসেও আমার পদক জয়ের সম্ভাবনা ছিল ৷ রিও অলিম্পিকসের ট্রায়ালে আমি যে ওজন তুলেছিলাম তা মূলপর্বে তুলতে পারলে রুপো অবশ্যই আসত ৷ তবে দিনটা হয়তো আমার ছিল না ৷ দেশের হয়ে পদক না জেতার দুঃখ ছিল ৷ বুঝতে পারছিলাম না এত পরিশ্রম করার পরও কী হল ৷ আমার পরিবার এবং বিজয় স্যার ছিলেন ৷ আমার মনে আছে, বিজয় স্যার বলতেন যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে ৷ সামনে অনেক প্রতিযোগিতা রয়েছে ৷ বলতেন, তোমার বয়স কম এবং অলিম্পিকসে পদক জেতার জন্য সময় রয়েছে ৷ সেদিনই শপথ নিয়েছিলাম যে আগামী দিনে আরও পরিশ্রম করব ৷ নিজের উপর বিশ্বাস ছিল ৷ আর সেই বিশ্বাস থেকে আমি করে দেখিয়েছি ৷ দেশে ফেরার পর মা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে ৷ বিজয় স্যারের সঙ্গে আলোচনার পর অনুশীলন এবং কৌশলে পরিবর্তন নিয়ে আসি ৷ খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম ৷ তারপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতলাম ৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পারফরম্যান্স আমাকে প্রচুর শক্তি দিয়েছে ৷ এরপর থেকে আশা হারাইনি ৷
প্রশ্ন : লকডাউনের সময়ের সবথেকে কঠিন মুহূর্ত কোনটি ?
চানু : মাসদুয়েক অনুশীলন করতে পারিনি ৷ ভারোত্তোলন হল এমন একটি বিষয় যেখানে একটা দিন অনুশীলন না করতে পারলে খেলায় প্রভাব পড়ে ৷ নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হয় ৷ ফলে ওই সময়টা আমার কাছে খুব কঠিন ছিল ৷ পাতিয়ালায় থাকাকালীন অনুশীলন শুরু করার অনুরোধ করি ৷ ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করে বলি, ট্রেনিং শুরু না করলে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ কোয়ালিফায়ার এবং অলিম্পিকসের জন্য যা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সব জলে যাবে ৷ দু'মাস পর ট্রেনিংয়ে নামলেও পেশীতে টান ধরায় অনুশীলন করতে পারিনি ৷
প্রশ্ন : দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির বাইরে ছিলেন ৷ এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকস পদক জয়ের জন্য আপনার সবচেয়ে বড় বলিদান কী ?
চানু : 2016 সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হই ৷ নভেম্বরে ছিল প্রতিযোগিতা ৷ এদিকে সেবছরের 27 নভেম্বর আমার বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয় ৷ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বোনের বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারিনি ৷ এরকরম আরও আছে ৷ এটা তার মধ্যে অন্যতম ৷ ডায়েট মেনে চলার জন্য পছন্দের খাবার খেতে পারিনি ৷ অনুষ্ঠান, পার্টি কিছুই করতে পারিনি ৷ ফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতাম না ৷ কারণ দেশের জন্য কিছু করে দেখানোর ইচ্ছে ছিল ৷ আমার ফোকাস ছিল শুধুমাত্র ট্রেনিংয়ে ৷
প্রশ্ন : প্যারিস অলিম্পিকসে পদকের রং বদলানোর ভাবনা কি এখনই মাথায় রয়েছে ?
চানু : এখন আমি রুপো পদক জিতে খুব খুশি ৷ 2022 সালে কমনওয়েলথ এবং এশিয়ান গেমস রয়েছে ৷ এই প্রতিযোগিতাগুলিতে ভাল পারফর্ম করার চেষ্টা করব ৷ তারপর প্যারিস অলিম্পিকস ৷ সেখানে রুপোর পদক সোনায় পরিবর্তন করার লক্ষ্য থাকবে ৷
প্রশ্ন : আপাতত পরিকল্পনা কী ?
চানু : সময়টা উপভোগ করছি ৷ প্রচুর মানুষের সঙ্গে দেখা করছি ৷ অনেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন ৷ প্রচুর ভালবাসা পাচ্ছি ৷ সময়টা উপভোগ করে শীঘ্রই অনুশীলন শুরু করব ৷
--- সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আয়ুষ্মান পাণ্ডে