কলকাতা, 17 অক্টোবর: 100 মিটারে তিনি দেশের দ্রুততমা ৷ 2018 এশিয়াডে রুপো জিতে চমকে দিয়েছিলেন ৷ তবে শুধু ট্র্যাকেই নয়, ওড়িশার গোপালপুরের মেয়ে দ্যুতি চাঁদ ছক ভেঙেছেন সমাজের রক্ষণশীলতার বিষয়েও ৷ তিনি সমকামী, সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন দ্যুতি ৷ সেই ঘোষণার পরিণাম পুরোটা সুখের হয়নি পরবর্তীতে ৷ দ্যুতি ও তাঁর প্রিয়জনের সম্পর্ক বৈবাহিক পরিণতি পায়নি এখনও ৷ দ্যুতি স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবার তাকিয়ে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের দিকে ৷ এদিন শীর্ষ আদালতে সমকামী সম্পর্কের বৈবাহিক স্বীকৃতি না-মেলায় আপাতত সংসদের কোর্টে বল ৷ দ্যুতি জানাচ্ছেন, সংসদের প্রতি তাঁর পূর্ণ আস্থা রয়েছে ৷
বৈবাহিক স্বীকৃতি না-দিলেও সমকামী যুগলদের অধিকার রক্ষায় মান্যতা দেওয়া হয়েছে ৷ 'সুপ্রিম' নির্দেশের পর ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে দ্যুতি বলেন, "ভালবাসার অধিকারে কোনও লিঙ্গ বৈষম্য বাধা হতে পারে না। কে কাকে ভালোবাসবে। কে কার মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পাবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভর করবে। তা কখনই লিঙ্গ বৈষম্যের ধুয়ো তুলে দেওয়াল হতে পারে না। বৈবাহিক স্বীকৃতি না-দিলেও আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় আমাদের ভালোবাসার অধিকারের স্বপক্ষে দিয়েছে তাকে স্বাগত জানাই। বিষয়টি সংসদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এবং আমি নিশ্চিত সেখানেও আমাদের ভালোবাসা স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি মান্যতা পাবে। সর্বোচ্চ আদালত মান্যতা দিয়েছে। এবার তা আইনে পরিণত করার বিষয়টি দেশের সরকারের ওপর নির্ভর করছে। "
এদিনের সুপ্রিম নির্দেশ কি তবে তোমাদের নৈতিক জয়? উত্তরে দ্যুতি বলেন, "আমরা সেদিনই জিতে গিয়েছিলাম যেদিন দেশে সমকামীতা স্বীকৃতি পেয়েছিল ৷ তারপর থেকে আমরা একসঙ্গে ঘুরতে এবং থাকতে পারছি। সমাজে সমানাধিকারে বাঁচার জন্য সরকারি কাগজপত্র দরকার। যাতে সম্পর্কের আইনত বৈধতা থাকে। যে কোনও সরকারি প্রশাসনিক কাজ, বাচ্চা দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমার সঙ্গীর স্বাক্ষর দরকার পড়ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আমাদের দাবির মান্যতা দিয়েছে কিন্তু তা আইনে পরিণত করার ভার দিয়েছে সংসদকে। আমি বিশ্বাস করি ওখানে পুরো বিষয়টি আলোচনার পরে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। আমাদের সমাজে প্রতিটি ধর্মের লোক তাদের অধিকার পায়। গণতন্ত্রে সেটাই স্বাভাবিক।"
আরও পড়ুন: বিবাহে আইনি বৈধতা না দিলেও সমকামী যুগলদের অধিকারকে মান্যতা সুপ্রিম কোর্টের
সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমকামীদের দাবি মান্যতা পায়নি। এ ব্যাপারে দ্যুতি জানান, একজন নারী এবং পুরুষের বিবাহের ফলে একটি শিশুর জন্ম হয়। আমাদের দেশে বহু দম্পতি রয়েছেন যাদের কোনও সন্তান নেই। ওরা কৃত্রিমভাবে সন্তান নেওয়ার পথে যায়। সেখানেও না-হলে দত্তক নেওয়ার পথে যায়। ওরাও তো সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে এই দাবির স্বীকৃতি মিলবে না? আমাদের লড়াই এই নিয়ে চলবে। অনেকে তো বাচ্চা নিয়েও পালন করতে পারে না। আমরা তো বাচ্চা দত্তক নিয়ে তাঁকে পালন করে বড় করে তুলব। আমাদের এই দাবির মান্যতা জরুরি। আগামীতে এই নিয়ে সরব হব আমরা। সেখানেও একদিন সাফল্য পাব বলেই বিশ্বাস রয়েছে।"