কলকাতা, 14 অগাস্ট : এ যেন এক মিলন ক্ষেত্র ৷ দেশ-মহাদেশের ব্যবধান ঘুচিয়ে তাঁদের একটাই পরিচয়, প্রত্যেকেই প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক ও কোচ ৷ গতকাল এমনই এক সন্ধ্যার সাক্ষী থাকল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম ৷
চলতি বছরের স্পোর্টস ডে ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানের বর্ধিত অংশ । আর সেই 100 বছরের পথ চলায় যে অধিনায়ক ও কোচরা দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁদের এক মঞ্চে সংবর্ধিত করা হল ৷ ছয়ের দশকের সুকুমার সমাজপতি, চন্দন ব্যানার্জি, পরিমল দে'রা যেমন থাকলেন তেমনই মঞ্চ আলো করে রইলেন পরবর্তীকালের অধিনায়করাও ৷ 100 শতাংশ উপস্থিতি বলা যাবে না । তবে সিংহভাগের উজ্বল উপস্থিতিতে নেতাজি ইন্ডোরে চাঁদের হাট বসল । সম্মানিত হলেন শতবর্ষের কোচেরাও । সেখানে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি সুব্রত ভট্টাচার্য, ট্রেভর জেমস মরগ্যান এবং বর্তমান দলের কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেজ় গার্সিয়ার ।
পুরো অনুষ্ঠানে বর্তমান দলকে পরিচয় না করিয়ে দেওয়াও কিছুটা দৃষ্টিকটু । তবে তা চাপা পড়ে গেল ভালোবাসা, আবেগে ৷
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ অবশ্যই মজিদ বিসকার । কার্যত হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সরিয়ে 32 বছর পরে কলকাতায় পা রেখেছেন । মঞ্চে অন্য প্রাক্তনদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফেলে আসা সোনালি বিকেলে ফিরে গেলেন তিনি । বললেন, "আমি ভাবিনি আমার জন্য এত সম্মান ভালোবাসা অপেক্ষা করছে ৷" মজিদের আবেগে ঝরা কথাগুলি শোনার যেন ভালোবাসার বিস্ফোরণ হল নেতাজি ইন্ডোরে ৷ শব্দব্রহ্ম তৈরি করে লাল-হলুদ সমর্থকরা জানিয়ে দিলেন, কলকাতা ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে একটাই বাদশা ৷ মজিদ বিসকার ৷ জামশিদ নাসিরিকে সংবর্ধিতও করলেন । যা বহু কাঙ্ক্ষিত ছবি ।
একই সুর সুলে মুসার গলায় ৷ তাঁর অধিনায়কত্বে ASEAN কাপ জিতেছে লাল-হলুদ ৷ স্মৃতির সরণি বেয়ে ফিরে গেলেন সেই দিনগুলোতে ৷ সুদূর ঘানা থেকে উড়ে এসেছেন লাল-হলুদের আমন্ত্রণে । পেশাদারিত্বের আঙ্গিক ছেড়ে লাল-হলুদ জার্সিতে এখনও খুঁজে পান প্রাণের টান । স্বপ্ন দেখেন নিজের পরবর্তী প্রজন্মের গায়ে উঠেছে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি । বললেন, "আমার সন্তানরা ফুটবল খেললে তাদের বলব অন্তত এক বছর ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে খেল । বুঝতে পারবে ভালোবাসা-সম্মান কাকে বলে ।" কথা শুনে মনে হচ্ছিল, কোনও আফ্রিকান ফুটবলার নন, এ যেন বাংলার কোনও প্রাক্তন কথা বলছেন ।
অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয় ইস্টবেঙ্গলের থিম সং । গেয়েছেন অরিজিৎ সিং । পঞ্চ পাণ্ডবের পরিবারের সদস্যদের হাতে শতবর্ষ স্মারক দিয়ে সম্মান জানানো হয় ।
ফুটবল দুনিয়ার বাইরে সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের তিন কিংবদন্তি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও তরুণ মজুমদারকে সম্মানিত করা হয় । গানের মাধ্যমে লাল-হলুদ উদ্যোগকে স্বাগত জানান রুদ্রপ্রসাদ । শীর্ষেন্দুর কথায় "জীবনের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল ।" প্রবীণ সাহিত্যিকের এক কথাতেই ফুটে উঠল অনুষ্ঠানের সারমর্ম ৷