আমেদাবাদ, 4 অক্টোবর: গুজরাতের আমেদাবাদ সংলগ্ন ছোট শহরতলি এলাকা হিসেবে পরিচিত মোতেরা ৷ এখানকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি আগে মোতেরা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে এই স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে ৷ আমেদাবাদের এই নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই উদ্বোধনী ম্যাচ, ফাইনালের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলির পাশাপাশি আগামী 14 অক্টোবর হতে চলেছে ভারত-পাকিস্তানের বিশ্বকাপের ম্যাচ ৷ প্রায় 1 লাখ 32 হাজার আসন সংখ্যা বিশিষ্ট এই স্টেডিয়াম বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিত ৷ বলা বাহুল্য বিশ্বকাপের ম্যাচে যখন চির প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান দুই দলের ক্রিকেটাররা এই স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবেন দুই দলের, তখন ক্রিকেট প্রেমীদের চোখ থাকবে এই স্টেডিয়ামেই ৷
যদিও প্রতিবেশী এই দুই দেশ যখনই খেলার ময়দান বিশেষত ক্রিকেটের মাঠে মুখোমুখি হয় তখন সবার মধ্যেই আলাদা এক উত্তেজনা কাজ করে ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির রাজ্যে তাঁর নামাঙ্কিত এই স্টেডিয়ামে 1 লাখ 32 হাজার দর্শকের সামনে আয়োজক দেশ ভারতের বিরুদ্ধে খেলা নয়া অভিজ্ঞতা হতে চলেছে পাক ক্রিকেটারদের কাছে ৷ সাম্প্রতিক কালের মধ্যে এই প্রথম গুজরাতের মাঠে খেলতে নামছে পাকিস্তান ৷ নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাতের মোতেরায় যখন দুই দল মুখোমুখি হবে তখন টিম ইন্ডিয়ার সমর্থনে সেখানকার সমর্থকদের উল্লাস ও স্লোগানে যে শব্দমাত্রার বাঁধ ভাঙতে পারে তা আগাম অনুমেয় ৷
এছাড়াও এই বিশাল স্টেডিয়ামে নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ ৷ একে দর্শকদের মধ্যে বিশ্বকাপের উত্তেজনা, তার উপর 1 লক্ষ 32 হাজার দর্শককে সামলানোর বিষয়, পুলিশের কাছে এক বড় পরীক্ষা হতে চলেছে বলা যায় ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন ভারতীয় দর্শকরা,এবারের বিশ্বকাপে এটি অন্যতম শো-কেস পয়েন্ট হতে চলেছে বলা যায় ৷ উত্তেজনা ও সম্ভাবনার এক অদ্ভুত সাক্ষী থাকতে চলেছে এই স্টেডিয়াম ৷
আরও পড়ুন: যে কোনও জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারে ঈশান, আত্মবিশ্বাসী বাবা
মোতেরার প্রকৃতি অনেকটা পাকিস্তানের মুলতানের মতো ৷ ক্রিকেটের অন্যতম ভেন্যু হিসেবে এখানকার গরম ও রুক্ষ প্রকৃতির জন্য এই স্টেডিয়াম নিয়ে আলোচনা কম হয়নি ৷ যদি দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সের বসার ব্যবস্থাকে বাদ দেওয়া যায়, তাহলে নরেন্দ্র মোদির নামে এই স্টেডিয়াম নামাঙ্কিত হওয়ার আগে, এই স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সই সবচেয়ে অস্বস্তিজনক প্রেসবক্স হিসেবে পরিচিত ছিল ৷ কিন্তু ক্রিকেটের একাধিক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী এই স্টেডিয়াম ৷
1987 সালের 7 মার্চ, এই স্টেডিয়ামেই বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে 10 হাজার রানের মাইল স্টোন পার করেন সুনীল গাভাস্কার ৷ তখন সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল মোতেরার এই এই মাঠ ৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচেই এই রান করেছিলেন গাভাস্কার ৷ এই মাঠে খেলেই 1994 সালে কপিল দেব তাঁর মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছিলেন ৷ এখানেই তিনি স্যার রিচার্ড হ্যাডলির দীর্ঘদিন ধরে অক্ষত থাকা টেস্টে ক্রিকেট সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড ভেঙেছিলেন ৷ এই স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের আসর বসেছিল 1983 সালে ৷ ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ৷ সেই ম্যাচে 83 রান দিয়ে 9 উইকেট পান কপিল দেব ৷
800 কোটি টাকা খরচ করে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে এই স্টেডিয়াম ৷ 2015 থেকে 2020, এই পাঁচ বছর সময় লাগে স্টেডিয়ামটিকে এই আকারে তৈরি করতে ৷ টাটা স্টিলের পিলার দিয়ে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো এই স্টেডিয়াম তৈরি করেছে ৷ এই মাঠেই 2011 সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারে অস্ট্রেলিয়া ৷ গত বছর আইপিএল ফাইনালও হয় এই স্টেডিয়ামে ৷ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচও এবার হবে এই স্টেডিয়ামে ৷