হায়দরাবাদ, 2 অক্টোবর: ক্রিকেট বিশ্ব বহুল প্রতীক্ষিত 2023 আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ৷ যে টুর্নামেন্টে সকলের নজর প্রতিটি দলের পরিকল্পনা, প্লেয়ার এবং তাঁদের শক্তি ও দুর্বলতার দিকে ৷ তেমনই একটি দেশ নিউজিল্যান্ড ৷ গত দু’টি বিশ্বকাপের রানার্স দল ৷ যাঁরা চাইবে এবারের বিশ্বকাপটি নিজেদের হাতে তুলতে ৷
শেষ বিশ্বকাপে কিউয়িরা হেরে গিয়েছিল আইসিসি-র বিতর্কিত নিয়মের কারণে ৷ ফাইনালে সুপার-ওভারেও ম্যাচের ফয়সালা না-হওয়ায়, কোন দল ক’টি বাউন্ডারি মেরেছিল, তার উপর ভিত্তি করে বিশ্বকাপ জয়ী দল নির্ধারণ করা হয়েছিল ৷ যা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয় ৷ এবার সেই নিয়মে বদল এসেছে ৷ সেই সঙ্গে একাধিক বদল হয়েছে পুরনো বিশ্বকাপ দলেও ৷ কেমন হল এবারের নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল ?
নিউজিল্যান্ড দলের শক্তি
1. অভিজ্ঞ নেতৃত্ব এবং মিডল-অর্ডার: নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন এবং অধিনায়ক হিসেবে প্রখর ক্রিকেট মস্তিষ্কের অধিকারী ৷ চাপের পরিস্থিতিতে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং শান্ত স্বভাব দলকে সাহায্য করবেই ৷ 2023 সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে তিনি চোটের পর প্রত্যাবর্তন করেছেন ৷ গত 29 সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে চোটের পর প্রথমবার ক্রিকেট মাঠে দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷ সেখানে 50 বলে 54 রানের ইনিংসও খেলেন উইলিয়ামসন ৷ রান নেওয়ার সময় সামান্য সমস্যা হলেও, পুরো ইনিংসে তাঁর ফুট-ওয়ার্ক দুরন্ত ছিল ৷ উইকেটের চারিদিকে শট খেলেছেন কিউয়ি অধিনায়ক ৷
আরও পড়ুন: পারিবারিক কারণে জরুরি ভিত্তিতে মুম্বই ফিরলেন বিরাট, সোমবারই যোগ দিতে পারেন দলের সঙ্গে
উইকেট-কিপার ব্যাটার টম ল্যাথামের স্পিনারদের বিরুদ্ধে দুরন্ত পারফর্ম্যান্স রয়েছে ৷ একজন স্টাম্পার হওয়ায় বোলারের হাত থেকে বল বোঝা এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া করা তাঁর ক্ষেত্রে অনেকটাই সহজ । ভারতের মাটিতে তাঁর রেকর্ডও ভালো ৷ অভিষেকের পর থেকে ওডিআই ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে ল্যাথামে সর্বাধিক রান রয়েছে ৷ তিনি 11 ইনিংসে 85.89 স্ট্রাইক রেট-সহ 52.77 গড়ে 475 রান করেছেন ভারতের মাটিতে ৷
2. বৈচিত্র্যে ভরা বোলিং আক্রমণ: ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি এবং লকি ফার্গুসনের মতো অভিজ্ঞ স্যুইং ও পেস বোলারদের নিয়ে নিউজিল্যান্ড একটি ভালো বোলিং বিভাগ তৈরি করেছে ৷ বিভিন্ন কন্ডিশনে তাঁদের বল সুইং ও সিম করার ক্ষমতা যে কোনও ব্যাটিং লাইন-আপকে সমস্যায় ফেলতে পারে ৷ সেই সঙ্গে দলে আছে উন্নতমানের স্পিনার ৷ ইশ সোধি এবং মিচেল স্যান্টনারের মতো স্পিনার নিউজিল্যান্ড দলে গভীরতা প্রদান করেন ৷ আর ভারতের উইকেটে তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ৷
বাঁ-হাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট বোলিং ওপেনিংয়ে এসে দ্রুত উইকেট তোলার ক্ষমতা রাখেন ৷ ডেথ-ওভারে তাঁর হাতে ভালো ইয়র্কর ও স্লোয়ার ডেলিভারি রয়েছে ৷ বোল্ট 104টি ওয়ান-ডে ম্যাচে 4.94 ইকনমি রেটে 197 উইকেট নিয়েছেন ৷ 200 ওয়ান-ডে উইকেট পূরণ করা থেকে মাত্র তিন উইকেট দূরে রয়েছেন বোল্টি ৷ টিম সাউদি এবং লকি ফার্গুসন কিউয়ি বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা ৷ সাউদির অভিজ্ঞতা এবং ফার্গুসনের গতি প্রতিপক্ষের চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে ৷ সাউদি 157 ম্যাচে 33.6 গড়ে 5.47 ইকনমি রেটে 214 উইকেট নিয়েছেন ৷ ফার্গুসন 58 ওয়ান-ডে ম্যাচে 31.7 গড়ে 5.69 ইকনমি রেটে 89 উইকেট নিয়েছেন ৷
ভারতীয় পরিস্থিতিতে লেগ-স্পিনার ইশ সোধি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে উঠবেন নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে ৷ এখন পর্যন্ত, তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে 49টি ওডিআই-তে 46 ইনিংসে 5.46 ইকনমি রেটে 61 উইকেট নিয়েছেন ৷ ইশ সোধির সেরা পারফর্ম্যান্স 39 রানে 6 উইকেট ৷
আরও পড়ুন: বয়সের নিরিখে সবচেয়ে অভিজ্ঞ 5 ক্রিকেটার, 2023 বিশ্বকাপে চোখ থাকবে যাঁদের দিকে
নিউজিল্যান্ড দলের দুর্বলতা
মিডল-অর্ডার নিয়ে উদ্বেগ: নিউজিল্যান্ডের টপ-অর্ডার শক্তিশালী হলেও মিডল-অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ৷ আইপিএল-এ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা গ্লেন ফিলিপস ছাড়া ভারতীয় কন্ডিশনে খেলার তেমন অভিজ্ঞতা নেই মিডল-অর্ডারের ৷ চাপের পরিস্থিতিতে, মার্ক চ্যাপম্যান, গ্লেন ফিলিপস এবং রাচিন রবীন্দ্রের মতো খেলোয়াড়দের থেকে ধারাবাহিক পারফর্ম্যান্সের প্রয়োজন দলের ৷ এই তিনজনের শেষ পাঁচটি ম্যাচের পরিসংখ্যান ৷
গ্লেন ফিলিপসের শেষ পাঁচটি ইনিংস - 3, 25, 72, 2, ব্যাট করেননি
মার্ক চ্যাপম্যানের শেষ পাঁচ ইনিংস- 65*, 40*, 8*, 15, 11
রচিন রবীন্দ্রের শেষ পাঁচ ইনিংস - 97 (ওপেন), ব্যাট করেননি, 10, 0, 61
সীমিত স্পিন বিকল্প: স্যান্টনার এবং সোধি নির্ভরযোগ্য স্পিনার হলেও, দলে স্পিন বোলিংয়ের বিকল্পের অভাব রয়েছে ৷ এই দুই স্পিনারের উপর খুব বেশি নির্ভর করা, ভারতীয় পরিবেশে একটি দুর্বলতা হয়ে উঠতে পারে নিউজিল্যান্ডের ৷ তার উপর টুর্নামেন্ট চলাকালীন তাঁদের মধ্যে কেউ আহত হলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হবে কিউয়িদের পক্ষে ৷
আরও পড়ুন: এশিয়াডে নিয়ম ভেঙে রূপান্তকামীকে পদক! সোশাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক স্বপ্না বর্মন
তরুণ ক্রিকেটারদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ:
মার্ক চ্যাপম্যান, রাচিন রবীন্দ্র এবং উইল ইয়ংয়ের মতো তরুণ প্রতিভা নিউজিল্যান্ডের জন্য বাড়তি পাওনা ৷ তাঁদের স্ফূর্তী এবং নির্ভীক ক্রিকেট দলে নতুন মাত্রা এনে দিতে পারে ৷ মার্ক চ্যাপম্যান এবং রাচিন রবীন্দ্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁদের ফর্মের কিছুটা ঝলক দেখিয়েছেন ৷ রাচিন রবীন্দ্র তিন রানে সেঞ্চুরি মিস করেন ৷ যেখানে মার্ক চ্যাপম্যান ম্যাচ জেতানো অপরাজিত 65 রান করেন ৷
নিউজিল্যান্ডের চোট সমস্যা:
গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের আঘাত, বিশেষ করে বোলিং বিভাগে, নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনায় প্রভাব ফেলতে পারে ৷ চোটের ঝুঁকি কমাতে নিউজিল্যান্ড টিম ম্যানেজমন্টকে ক্রিকেটাদের ওয়ার্ক-লোড নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৷ খেলোয়াড়দের কাজের চাপ কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে। ইতিমধ্যে, কেন উইলিয়ামসন হাঁটুর চোটের সঙ্গে লড়াই করছেন ৷ তিনি প্রত্যাবর্তন করলেও, একশো শতাংশ ফিট বলা যাবে না ৷ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে পায়ের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়ে টিম সাউদি এই মুহূর্তে বাইরে রয়েছেন ৷ আশা করা হচ্ছে তিনি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে ফিট হয়ে উঠবেন ৷