মুম্বই, 14 জুন : অভিশপ্ত সেই দিনটার এক বছর ৷ যার মৃত্যুতে থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ ৷ 14 জুন 2020 । যেদিন একটি ফুল প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝরে পড়েছিল সেই কুড়িটির নাম সুশান্ত সিং রাজপুত ৷ ওইদিন মুম্বইয়ে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ ৷ মুম্বই পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে জানায় হতাশায় ভুগছিলেন অভিনেতা । তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি ৷ কিন্তু এই কথা মানতে নারাজ তাঁর পরিবার এবং ভক্তরা ৷ তাই গোটা দেশ আওয়াজ তোলে " জাস্টিস ফর সুশান্ত " ৷ এমনকি, তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতাও বলেন, যাঁর স্বপ্ন আকাঁশ ছোয়া সে কোনওদিন আত্মহত্যা করতে পারে না ৷
মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুশান্ত ৷ মেধাবি ছাত্র হলেও বেছে নেন অভিনয় জগত ৷ 'পবিত্র রিস্তা' সিরিয়ালের হাত ধরে টেলি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পদার্পন । সেখান থেকেই বড় পর্দায় আগমন ৷ প্রথম সিনেমা ''কাই পোচে"তে জয় করে নেন সহস্র মানুষের মন ৷ তারপর থেকেই শুরু লাগামহীন যাত্রার ৷ কেদারনাথ , পিকে, ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সি , এম এস ধোনি, ছিছোরে ইত্যাদির মতো মেগা হিট সিনেমা ৷ তাই ভক্তদের মনে একটাই প্রশ্ন যার ঝুলিতে অসংখ্য হিট সিনেমা সে কখনও হতাশায় ভুগতে পারে না ৷ সত্যিই কি আত্মহত্যা করেন সুশান্ত ? নাকি বলিউডের স্বজন-পোষন নীতিতে তলিয়ে যায় তাঁর প্রতিভা, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা ৷
প্রিয় অভিনেতার মৃত্যুর সঠিক তদন্তে সরব হয় গোটা দেশ ৷ মুম্বই পুলিশের হাত থেকে তদন্ত ভার স্থানান্তরিত হয় বিহার পুলিশের হাতে ৷ তারপর এই তদন্তে নামে কেন্দ্রের তিনটি সংস্থা সিবিআই, ইডি এবং এনসিবি ৷ ইডির তদন্তে নাম উঠে আসে সুশান্তের বান্ধবী রিয়া এবং তার ভাই সৌভিকের ৷ তছরুপের অভিযোগ ওঠে দুজনের নামে ৷ সেখান থেকেই সূত্রপাত বলিউডের মাদকযোগের ৷ তারপর নড়েচড়ে বসে গোটা বলিউড ৷ মাদক যোগে জড়িত হয় বলিউডের তাবড় তাবড় তারকাদের নাম ৷ দীপিকা পাডুকন , সারা আলি খান, শ্রদ্ধা কাপুর, ভারতী সিং প্রমুখের নাম ৷ এমনকি মাদক যোগে গ্রেফতারও হন প্রয়াত অভিনেতার কাছের বান্ধবী রিয়া ৷ যদিও এক মাস জেল হেফাজতের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি ৷
এতকিছুর পরেও সঠিক বিচার পাননি অভিনেতার পরিবার ৷ আজও লড়াই করে যাচ্ছে ছেলে হারানো সেই বাবা এবং একমাত্র ভাই হারানো বোন শ্বেতা ৷ শুধু অভিনয় নয় সুশান্তের আকাশের সঙ্গে ছিল আলাদা এক সংযোগ ৷ সময় পেলেই টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশে চেয়ে থাকতেন ৷ সপ্তর্ষিমন্ডল, চাঁদ, নক্ষত্রের সঙ্গে ছিল তাঁর বিশেষ যোগ ৷ শেষ সিনেমায় বলে গিয়েছেন জন্ম এবং মৃত্যু আমাদের হাতে নেই কিন্তু বাঁচব কীভাবে তা আমাদের হাতেই ৷ সিনেমায় শেষ বার হেসে সকলকে শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন কীভাবে বাঁচতে হয় ।