বিশ্বজুড়ে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বেড়ে চলেছে । যদিও আমাদের দেশে বর্তমানে ‘আনলক’ ফেজ় চলছে, তবুও অনেকে আতঙ্কে ভুগছেন এই ভেবে যে শরীরে উপসর্গ দেখা গেলে কী করবেন ? কেউ কেউ এটা জানেন না যে যদি সংক্রমণ হয় তাহলে তাঁরা কী করবেন । এই বিষয়ে হায়দরাবাদের VINN হাসপাতালের কনসালটেন্ট ফিজ়িসিয়ান, MD (জেনেরাল মেডিসিন) ডা. রাজেশ বুক্কালাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "ভাইরাস শরীরের যে কোনও জায়গায় সংক্রামিত হতে পারে । তাই শরীরজুড়ে নানা ধরনের উপসর্গ লক্ষ্য করছি আমরা ।"
কিন্তু কী কী উপসর্গ বিপদসংকেত বহন করে?
ডা. রাজেশের মতে, জ্বর এবং কাশি ছাড়াও আরও কয়েকটি উপসর্গের দিকে নজর রাখতে হবে ।
- ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া
- স্বাদগ্রহণের ক্ষমতা কমে যাওয়া
- দুর্বলতা
- মাংসপেশীতে ব্যথা
- অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
- দৈনন্দিন কাজকর্মে অনীহা
- শ্বাসকষ্ট
- মাথাব্যথা
- ঝিমুনি ভাব
- জ্বর নেই অথচ ডায়েরিয়া
- পেটে ব্যথা
- পায়ে ব্যথা
এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে কী করবেন?
ডা. রাজেশ বুক্কালা বলেন, "যদিও অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় নভেল কোরোনা ভাইরাস খুব দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে, তবুও এটা দেখা গেছে যে অন্তত 80 শতাংশ আক্রান্তই হয় উপসর্গহীন নয় তো উপসর্গ থাকলেও তা মৃদু । শুধু 20 শতাংশ আক্রান্তের ভাইরাস সংক্রমণের ফলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে । এর মধ্যে আবার মাত্র 5 শতাংশ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে, যার জন্য তাদের হাসপাতালে ভরতি করার প্রয়োজন পড়ছে ।"
উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেকে আইসোলেট করুন । বিশেষ করে যখন মনে হবে আপনি কোনও আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন ।
উপরে উল্লিখিত উপসর্গের কোনও একটি যদি টানা তিন দিন ধরে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।
চিকিৎসকের লেখা প্রেসক্রিপশন মেনে পরীক্ষা করান । হয় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে বা লালারসের পরীক্ষা (সোয়াব টেস্ট) । যবে থেকে উপসর্গ অনুভূত হচ্ছে, তার পঞ্চম দিনে পরীক্ষা করানো হলে ফল যথাযথ আসবে ।
উপসর্গ যদি গুরুতর হয় তাহলে শরীরের যে অংশে তা বেশি দেখা যাচ্ছে, যেমন পেট, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি, সেখানকারও পরীক্ষা করাতে হবে । অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গে সংক্রমণ হয়েছে তা বুঝে কী কী পরীক্ষা হবে তা ঠিক করা হবে ।
যাঁরা মৃদু উপসর্গ অনুভব করছেন বা কোনও উপসর্গই অনুভব করছেন না তাঁদের হাসপাতালে ভরতি করার প্রয়োজন নেই । তাঁরা বাড়িতেই নিজেরা নিজেদের আইসোলেট করবেন এবং কোনওভাবে সমস্যা বাড়লে জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন ।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করবেন ।
ভিটামিন সাপলিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে যা ইমিউনিটি বাড়াবে । যেমন ভিটামিন সি এবং ডি । এই দুই ভিটামিনই নানা ধরনের খাদ্য উপাদানে মজুত রয়েছে । সেগুলিও খাওয়া যেতে পারে ।
উপসর্গ কতটা কী কমছে বা বাড়ছে তার দিকে খেয়াল রেখে 10 দিন আইসোলেশনে থাকুন ।
যদি আপনি সেই 20 শতাংশ মানুষের মধ্যে হন যাঁদের উপসর্গ গুরুতর বা ক্রমশ সংকটজনক হচ্ছে তাহলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন । আপনাকে হয়তো হাসপাতালে ভরতি হতে হবে এবং বেশ কিছু পরীক্ষাও করাতে হবে । পরীক্ষার ফল অনুযায়ী আপনার চিকিৎসা হবে ।
আতঙ্কিত হবেন না কারণ যে সব কোরোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে । যথাযথ যত্ন নিলে নিজেকে আইসোলেট করে রাখলে এবং সংক্রমণ ছড়ানো আটকাতে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করলে (যেমন বাড়ির বাইরে না যাওয়া, লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা) কোরোনার বিস্তার কমবে । দেশের দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে এ্রই কর্তব্যটুকু পালন করুন ।