ওয়াশিংটন, 12 ফেব্রুয়ারি: অনেক হয়েছে ৷ এবার অন্তত পাকিস্তানের তার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো উচিত ৷ পাশাপাশি, এতদিন ধরে যে সমস্ত কট্টরপন্থী সংগঠন পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সারা দুনিয়ায় সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে, তাদেরও উৎখাত করা দরকার ৷ এই মুহূর্তে পাকিস্তান যে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের (Pakistan in Crisis) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা এককথায় নজিরবিহীন ৷ পরস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে বন্ধু দেশগুলিও একে একে সঙ্গ ত্যাগ করছে ৷ এই অবস্থায় কার্যত দেশের খোলনলচে বদলে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ তাঁদের আশঙ্কা, পাক প্রশাসন নিজেও জানে না, কীভাবে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে !
তথ্য বলছে, বর্তমানে পাকিস্তানি মুদ্রার দরে রেকর্ড পতন হয়েছে ৷ 1 মার্কিন ডলার কেনার জন্য পাকিস্তানি মুদ্রায় খরচ করতে হচ্ছে প্রায় 275 টাকা ! যা আগে কখনও হয়নি ৷ মূল্যবৃদ্ধির হারে রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটে তা 27 শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে ! তলানিতে এসে ঠেকেছে সঞ্চিত বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও ৷ বস্তুত, 1998 সালের পর থেকে এবারই পাকিস্তানে ফরেন এক্সচেঞ্জের পরিমাণ সবথেকে কমে মাত্র 300 কোটি মার্কিন ডলারে এসে ঠেকেছে ! এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আগামী একমাসের আমদানি খরচও কুলোবে না ! অথচ, দেশের এই দুর্দিনেও চুপ করে বসে নেই সন্ত্রাসবাদীরা ৷ তারা পাক ভূখণ্ডে তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে ৷ গত 30 জানুয়ারি পেশোয়ারে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ৷ তাতে 100-রও বেশি মানুষের মৃত্য়ু হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: 'হ্যাঁ, উইকিপিডিয়াকে ব্লক করা হয়েছে !' জানালেন পাক আধিকারিক
বিপুল অর্থসঙ্কটের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে ইতিমধ্য়েই আইএমএফের শরণাপন্ন হয়েছে পাকিস্তান ৷ তাদের উদ্দেশ্য, 110 কোটি মার্কিন ডলারের একটি তহবিল আদায় করা ৷ কিন্তু, আইএমএফ কর্তৃপক্ষ এখনও সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি ৷ আর যদি তা মঞ্জুর করাও হয়, তাহলেও পাকিস্তানের বিরাট কিছু সুবিধা হবে না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একটা বড় অংশ ৷ তবে, এই টাকা না পেলে পাকিস্তানের শোচনীয় পরিস্থিতি অতি দ্রুত আরও খারাপ হবে ৷
আমেরিকায় নিযুক্ত প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি এই প্রসঙ্গে বলেন, সন্ত্রাসবাদের কারণেই পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ উপরন্তু, চিনের উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছে ৷ চিনের কাছে কার্যত 'গলা পর্যন্ত ঋণে' ডুবে রয়েছে পাকিস্তান ৷ সেদেশের আরও একটি সমস্যা হল, বিদেশি অনুদান নির্ভরতা ৷ এতে দেশের উৎপাদনশীলতায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ৷ তারপরও যেটুকু টাকা হাতে এসেছে, তার অধিকাংশ খরচ করা হয়েছে সেনার স্বার্থে ৷ এতে সামগ্রিকভাবে পাকিস্তানের কোনও লাভ হয়নি ৷ সমস্যা আরও বাড়িয়েছে ভারত, আফগানিস্তানের মতো পড়শির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ৷
ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জে জে সিং এই প্রসঙ্গে বলেন, পাকিস্তানকে স্বনির্ভর হতে হবে ৷ একমাত্র তবেই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ৷ পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি ৷ পাকিস্তানের নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জি পার্থসারথি বলেন, পাকিস্তান যেভাবে এতদিন সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে এসেছে, অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে ৷ বদলে গঠনমূলক উন্নয়নে নজর দিতে হবে ৷ তবেই এই সঙ্কট কাটানো সম্ভব হবে ৷ ভারতের আর এক প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল দীপক কাপুর মনে করেন, পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ ৷ সেখান থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন ৷ পাক বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী সাজিদ তারার বলছেন, দেশের উন্নয়নে পাক সরকার একটুও আগ্রহী নয় ৷ পাকিস্তানে দুর্নীতি আকাশ ছুঁয়েছে ৷ যার খেসারত দিতে হচ্ছে সমগ্র দেশবাসীকে ৷