নয়াদিল্লি, 27 ডিসেম্বর: ভোটে জিতলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলবেন ৷ এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ যা নয়াদিল্লির জন্য অবশ্যই খুশির খবর ৷ আগামী 7 জানুয়ারি ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে সাধারণ নির্বাচন ৷ সেই উপলক্ষ্যে হাসিনা তাঁর দল আওয়ামী লীগের ইস্তাহার প্রকাশ করেন বুধবার ৷ সেখানেই তিনি ভারত-সহ অন্য সব দেশের সঙ্গে উন্নয়নমূলক সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কথা বলেন ৷
ইস্তাহারে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা নির্ধারণ এবং ছিটমহল বিনিময়ের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হয়েছে । এর ফলে ভারতের সঙ্গে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করেছে ।” তাঁর দলের বিদেশনীতি সম্পর্কে হাসিনা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব ও ন্যায়সঙ্গত জল বণ্টন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে ।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডে জঙ্গি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি ঠেকাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । আওয়ামী লীগ সরকার সমগ্র অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিকে নির্মূল করতে দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ।" এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে ভবিষ্যতে শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়, এমন সব পদক্ষেপে সহযোগিতা করবেন, এমনই মত প্রকাশ করেছেন শাহরিন শাহজাহান নাওমি ৷
তিনি বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মী৷ বর্তমানে তিনি ভারতের ক্রিয়া (কেআরইএ) বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ করছেন ৷ ইটিভি ভারত-কে নাওমি বলেন, "আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ, ট্রানজিট ও সন্ত্রাসবিরোধী অ্যাজেন্ডা নির্দেশ করে যে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী ৷"
ইস্তাহার অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী হাসিনার দল ৷ নদীর জলের যৌথ ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গেও কাজ করতে চায় বাংলাদেশ ৷ ভোটে জিতলে সেই কাজ শুরু হবে বলে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে ৷ তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা দীর্ঘদিন থমকে রয়েছে ৷ মূলত, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে ৷
এবার প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) ভোট বয়কট করেছে ৷ কারণ, বিএনপি-র দাবি ছিল, ভোটের সময় তদারকি সরকারকে দায়িত্ব দিতে হবে ৷ হাসিনা তা মানতে রাজি হননি ফলে বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল জয় প্রায় সময়ের অপেক্ষা ৷ যদিও পশ্চিম বিশ্বের সমালোচকরা এই নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ৷ কারণ, ভোট তদারকি সরকারের অধীনে হচ্ছে না ৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশে 1991 থেকে 2008 সালের মধ্যে চারবার তদারকি সরকারের অধীনে ভোট হয়েছে ৷ চারবারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’বার করে ভোটে জিতেছে ৷
2008 সালে আওয়ামী লীগের সরকার তৈরি হওয়ার পর এই তদারকি সরকারের অধীনে ভোট করার বিষয়টি বাতিল করা হয় ৷ কারণ, হিসেবে বলা হয় যে তদারকি সরকার দু’বছর ক্ষমতায় থাকে ৷ আর নিজেদের অ্যাজেন্ডা তৈরি করে নেয় ৷ সেই কারণে 2014 সালেও বিএনপি ভোট বয়কট করেছিল ৷ সেই সময় প্রায় একমাস ধরে প্রতিবাদও চলে ৷
2018 সালে অবশ্য বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ করে ৷ তাদের অবাধ ভোটের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৷ কিন্তু দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিএনপি নেত্রী ও বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভোটে লড়তে পারেননি ৷ ফলে নির্বাচনী ময়দানে খুব খারাপ ফল করে বিএনপি ৷ বাংলাদেশের সংসদে সাড়ে তিনশো আসন ৷ তার মধ্যে বিএনপি জয়ী হয় মাত্র সাতটি আসনে ৷
2024 সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইস্তারের থিম ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ ৷ 2030 সালের মধ্যে বাংলাদেশে 15 মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে ৷ ডেইলি স্টার হাসিনার বক্তব্য হিসেবে লিখেছে, “জনগণ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দিলে এবং আবার আমাদের সেবা করার সুযোগ দিলে 2031 সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক বাংলাদেশকে 2041 সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে আওয়ামী লীগ ।’’
তিনি 2041 এর মধ্য়ে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির পরিকল্পনার চারটি স্তম্ভ উন্মোচন করেন - স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ । হাসিনা বলেন, “2008 সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে আমরা ভিশন 2021 ঘোষণা করেছিলাম, যা ছিল পরিবর্তনের সনদ । 2014 ও 2018 সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে শত বাধা অতিক্রম করে আমরা সফলভাবে দেশ পরিচালনা করেছি ৷”
আওয়ামী লীগের ইস্তাহারে বাংলাদেশের জন্য 11টি মূল বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ৷ সেগুলি হল - সাশ্রয়ী পণ্য, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, স্মার্ট বাংলাদেশ, লাভজনক কৃষি, শিল্প সম্প্রসারণ, আর্থিক ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করা, স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন, আইন প্রয়োগকারীর জবাবদিহিতা, চরমপন্থা মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক অনুশীলনের প্রচার ও সুরক্ষা ।
আরও পড়ুন: