কাবুল, 8 সেপ্টেম্বর : আফগানিস্তানে নয়া সরকার গঠন করল তালিবান (Taliban) ৷ ঘোষিত হল মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ৷ তালিবানের পক্ষ থেকে যে তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, সেই অনুযায়ী সরকারের শীর্ষে থাকছেন মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দ ৷ নয়া জমানায় তাঁকেই আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে বসাচ্ছে তালিবান ৷ তাঁর দুই ডেপুটি হচ্ছেন মোল্লা আবদুল গনি এবং মৌলবী আবদুল সালাম হানাফি ৷ তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, 33 জনের যে মন্ত্রিতালিকা প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে কোনও মহিলার নাম নেই ৷ যা মোটেই অস্বাভাবিক নয় বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷
আরও পড়ুন : Afghanistan : তালিবানের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ব্যবস্থা নেবে চিন, নিশ্চিত বাইডেন
আফগানিস্তানের পুনরুত্থানের পর তালিবানের তরফে দাবি করা হয়েছিল, শরিয়তি আইন মেনে মেয়েদের পড়াশোনা-সহ অন্যান্য অধিকার দিতে কোনও সমস্যা নেই তাদের ৷ অথচ, এক মহিলা সাংবাদিক যখন তালিব যোদ্ধাদের প্রশ্ন করেন, আগামী দিনে আফগানিস্তানের মাটিতে মহিলারাও রাজনীতিতে যোগ দিতে পারবেন কি না, তখন হেসেই খুন হন উত্তরদাতারা ! যা নিয়ে নানা মহলে শুরু হয় কাটাছেঁড়া ৷ প্রশ্ন উঠতে শুরু করে নারীর অধিকার রক্ষার প্রশ্নে তালিবানের স্বদিচ্ছা নিয়েও ৷ গোটা বিশ্ব এগিয়ে গেলেও তালিবানের মানসিকতা যে এখনও বহু যুগ পিছিয়ে রয়েছে, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলতে শুরু করেছে ৷ ইতিমধ্যেই আফগান নারীদের স্বাভাবিক জীবন যাপন নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সামনে আসতে শুরু করেছে ৷ তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল আফগানিস্তানের নারীবিহীন মন্ত্রিসভার তালিকা ৷
নয়া মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মৌলবী মহম্মদ ইয়াকুবকে ৷ তিনি তালিব সরকারের নয়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ৷ শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন শেখ মৌলবী নূরউল্লা মুনির ৷ যিনি ইতিমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখনকার দিনে পিএইচডি এবং মাস্টার্স ডিগ্রি মূল্যহীন। কারণ মোল্লা ও তালিবান নেতাদের কারও পিএইচডি, মাস্টার্স এমনকি হাইস্কুলের ডিগ্রিও নেই। কিন্তু তাঁরাই শ্রেষ্ঠ !’’ স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে ৷ অনেকেরই আশঙ্কা, 2001 থেকে 2021 সালের মধ্যে তিল তিল করে যে শিক্ষাব্যবস্থা নতুন করে গড়ে উঠেছিল আফগানিস্তানে, তালিবানের জমানায় তা শেষ হয়ে যাবে ৷
তালিবানের সরকার গঠনে কি আশঙ্কার মেঘ গাঢ় হচ্ছে আফগানিস্তানের আকাশে ? এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল ৷ নয়া আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দের বক্তব্য সেই সম্ভাবনা আরও বাড়িয়েছে ৷ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে আখুন্দ জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের 20 বছরের সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য ছিল দু’টি ৷ প্রথমত, আফগানিস্তান থেকে বিদেশিদের দখলদারি সরিয়ে এক স্বাধীন দেশ হিসাবে একে প্রতিষ্ঠা করা। দ্বিতীয়ত, দেশে স্থায়ী ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা। এই নীতি মেনেই নবগঠিত সরকার চলবে। সব সিদ্ধান্ত শরিয়তি আইন মেনেই নেওয়া হবে।’’ আর এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ কারণ, এর আগে 1996 থেকে 2001 সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে যে তালিবানি শাসন চলেছিল, তাও শরিয়তি আইন মেনেই পরিচালনা করা হত ৷ সেখানে নারীর অধিকার বলে কিছুই ছিল না ৷ তাই আবারও স্বাধীনতা হরণের আশঙ্কায় শঙ্কিত আফগান মহিলারা ৷ ইতিমধ্যেই তালিবান শাসনের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁরা ৷ যা আফগান ভূমে নিঃসন্দেহে আনকোরা ৷
আরও পড়ুন : Taliban Government : আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা তালিবানের, প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ
এছাড়া, তালিবানের মন্ত্রিতালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন জঙ্গিতালিকায় থাকা একাধিক ব্যক্তিও ৷ বস্তুত, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোল্লা মহম্মদ হাসান আখুন্দেরই নাম রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের জঙ্গিতালিকায় ! এছাড়া, দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আলহজ মোল্লা সিরাজউদ্দিন হাক্কানিকে ৷ তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্কের মাথা ! অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে নাকি আল-কায়দারও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে ৷ এমনকী, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাতেও নাম রয়েছে আলহজ মোল্লা সিরাজউদ্দিন হাক্কানির !