লন্ডন, 10 এপ্রিল : জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবার্ষিকী পূর্ণ হতে আর মাত্র দু'দিন বাকি। এমন এক মুহূর্তে সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে অনুতপ্ত হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আজ থেরেসা মে বলেন, "জালিয়ানওয়ালাবাগে যা ঘটেছিল এবং মানুষ যে সমস্যায় পড়েছিল তার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং অনুতপ্ত।"
1919-র 13 এপ্রিল। আজ থেকে একশো বছর আগে তখন বৈশাখি উৎসবে মেতে উঠেছিল গোটা অমৃতসর। ভোর থেকে স্নান সেরে গুরুদ্বার যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল শিশুরা। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে জালিয়ানওয়ালাবাগে। সঠিক সময়ে সভা শুরু হয়। স্লোগান ওঠে বন্দেমাতরম। রাওলাট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়া হয় এই সভায়। তড়িঘড়ি গুপ্তচরের মাধ্যমে খবর পৌঁছে যায় তৎকালীন পঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও ডায়ারের কাছে। 90 জন সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছান জেনেরাল ডায়ার। জালিয়ানওয়ালাবাগের সভাস্থান চারদিক থেকে বড় দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। সভাস্থান থেকে প্রবেশ ও বেরোনোর জন্য মাত্র একটাই দরজা ছিল। সেই দরজা এতটাই ছোটো ছিল যে একবারে একজনই বেরোতে পারে। জেনেরালের নির্দেশ পেয়ে ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করে সশস্ত্র বাহিনী। হঠাৎ জেনেরাল ডায়ার বলে ওঠেন, "ফায়ার ! ভারতীয় কুকুরগুলিকে গুলি করে মার।" আগে থেকে কোনও সতর্কবার্তাও দেননি তিনি। কিছুক্ষণ আগে যে জায়গাটি দেশপ্রেমের শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছিল এবার তা সম্পূর্ণরূপে বদলে যায়। সবাই বেরোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু দরজার সামনে ব্রিটিশ আর্মিদের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অনেকে দেওয়াল বেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। প্রাণ বাঁচাতে মহিলারা তাঁদের সন্তান নিয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঝে একটি কুয়োতে ঝাঁপ দেন। একমসয় সেই কুয়োটিও মৃতদেহে ভরে যায়। সেদিন অসহায়দের আর্তনাদে কেঁপে ওঠে জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রাচীর। শিশুদের রক্তে ভিজে যায় জালিয়ানওয়ালাবাগের মাটি। অনেকে মৃত্যুর নানান পরিসংখ্যানও দিয়েছেন।
এরপর কেটে গেছে 100 বছর। আজ ভারত স্বাধীন। কিন্তু আজও কান পাতলে 13 এপ্রিলের সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অসহায় আর্তনাদ শোনা যায়। এর মাঝে অনুতপ্ত হয়েছেন অনেকে। 2013 সালে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই ঘটনাকে লজ্জাজনকও বলেছিলেন। আজ 100 বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র দু'দিন আগে আবার অনুতপ্ত হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।