ওয়াশিংটন ও বেজিং, 11 ফেব্রুয়ারি: একদিকে মৃত্যু মিছিল চলছে লাগাতার, অন্যদিকে কোরোনা নাকি গরমে বিদায় নেবে, এমনটাই মত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৷
চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের দৈনিক রিপোর্ট অনুযায়ী সোমবার কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে 108 জন মারা যান, এই নিয়ে চিনে কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট 1016 জন মারা গেলেন ৷ এছাড়া 2478টি নতুন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে ৷ মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌছালো 42,638-এ ৷
মৃত 108 জনের মধ্যে 103 জনই হুবেইয়ের বাসিন্দা ছিলেন ৷ সোমবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন 716 জন ৷ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন 849 জন কোরোনা আক্রান্ত ৷
এখনও কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলেও মোট 3996 জন কোরোনা আক্রান্ত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৷
কোরোনা প্রতিরোধে সমগ্র চিন জুড়েই চলছে কড়া নজরদারী ৷ ইতিমধ্যে 4.28 লাখ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা কোরোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছে এবং 1.87 লাখের উপর ব্যক্তিকে চিকিৎসকদের কড়া নজরদারীতে রাখা হয়েছে ৷
রবিবার চিনের উদ্দেশে রওনা দেওয়া WHO-এর একটি বিশেষ দল সেমবার রাতে চিনে পৌছায় ৷ কোরোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে তারা চিনের চিকিৎসকদের সাহায্য করবেন ৷ বেজিংয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের এক মি ফেং বলেন, ‘‘চিন ও WHO একত্রে মিলিত হয়ে একটি দল গঠন করবে, যারা কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং এর প্রতিরোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে আলোচনা করবে ৷’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ আমরা অ্যামেরিকা থেকে আগত বিশেষজ্ঞদেরও স্বাগত জানাচ্ছি ৷ বিশেষজ্ঞ দলের বৈঠকের পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’’
অন্যদিকে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আশা করছি আগামী এপ্রিল মাসেই কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ হয়ে যাবে অতিরিক্ত গরমে ৷ সাধারণত গরমে এইধরনের ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ৷ শীতেই এইধরনের ভাইরাস সক্রিয় হয়, যার ফলে সর্দি-কাশি, ফ্লু দেখা দেয় ৷ গরমে এই ভাইরাস আর আগের মত সক্রিয় থাকতে পারবে না ৷’’ তিনি কোরোনা সংক্রমণ রোধে চিনের তৎপরতার প্রশংসা করে বলেন, ‘‘ দুদিন আগেই আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের কথা হয়েছে ৷’’
যেখানে চিনে আক্রান্তের সংখ্যা 40 হাজার অতিক্রম করেছে, অ্যামেরিকাতেও এখনও অবধি মোট 12 জন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে ৷ তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভবিষ্যতবাণী সঠিক নাও হতে পারে বলেই মনে করেন মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ৷ শুক্রবার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজে়র প্রধান অ্যন্থনি ফসি বলেন, ‘‘যেহেতু আমরা এই ভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানিনা, তাই আন্দাজে যেকোনও ঘোষণা করার অর্থই মানুষকে ভুল তথ্য পেশ করা ৷’’ তিনি বলেন,‘‘চিন যদি এই ভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে তবে পৃথিবীর বাকি অংশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না ৷ তবে এই আশঙ্কাও আছে যে, চিন এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও ভাইরাসটি অন্যান্য দেশেও কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ ছাড়াই ছড়িয়ে পড়তে পারে ৷
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের তরফ থেকেও জানানো হয়, এপ্রিল মাসের মধ্যে চিনে কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার সম্ভাবনা থাকলেও এই ভাইরাস বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও ছড়াতে পারে ৷