কলকাতা, 21 জুন: স্বনামধন্য নাট্য নির্দেশক রাজা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুললেন জনৈক তরুণী । সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলে এই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি ৷
তাঁর অভিযোগ, খুব ছোট বয়স থেকেই তিনি 'ব্ল্যাংক ভার্স থিয়েট্রিকাল স্পেস'- এ নাটক শিখতেন নির্দেশক রাজা ভট্টাচার্যের কাছে । নির্দেশক শুরুর দিন থেকে নানাভাবে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চাইতেন বলে অভিযোগ । 12 বছরের ছাত্রীকে নাকি কোলে তুলে সংলাপ বোঝাতেন রাজা । আরও অভিযোগ, তিনি ছাত্রীর শরীরের নানা জায়গায় অবলীলায় হাত দিতেন । চুমু খেতে বলতেন । ছাত্রীর দাবি, তিনি শিক্ষকের এই রূপ আচরণকে ভাবতেন পিতৃস্নেহ । কেননা সবটা বোঝার বয়স তখনও হয়নি তাঁর । দিনের পর দিন শিক্ষকের এই আচরণ চলতে থাকে বলে অভিযোগ ।
এরই সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাত্রীর বয়স । তিনি বুঝতে এবং জানতে শেখেন সবটা । সরে আসতে থাকেন 'শ্রদ্ধেয়' স্যারের কাছ থেকে । তখনই তাঁকে নানা রকমের হুমকি শুনতে হয় বলে অভিযোগ । নিজের সামাজিক মাধ্যমের পাতায় নির্দেশকের বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন সে দিনের সেই ছোট্ট মেয়েটি, যে আজ তরুণী । তিনি প্রতিবাদ জানান নাট্যদলের অফিসে গিয়েও । তবে তাঁকে জনসমক্ষে মুখ খুলতে বারণ করা হয় বলে অভিযোগ ।
তরুণীর দাবি, তাঁকে মাথা ঠান্ডা রেখে সমঝোতায় আসতে বলেন রাজা ভট্টাচার্য এবং তাঁর স্ত্রী মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় । তবে তিনি শেষ দেখে ছাড়বেন বলে জানিয়ে দেন ওই তরুণী । তিনি লিখেছেন যে, তিনি চান নির্দেশক রাজা ভট্টাচার্য সব জায়গা থেকে যেন বিতাড়িত হন । 2020 সালে যখন ওই তরুণী দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছিলেন, তখনই তিনি রাজা ভট্টাচার্যের ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ করে দেন বলে জানিয়েছেন ৷
তরুণীর এই পোস্ট দেখার পর লাইভে আসেন আরেক নাট্য নির্দেশক তথা অভিনেতা দেবদাস ঘোষ । তিনি রাজা ভট্টাচার্যের কাছের মানুষ । নাটকের হাত ধরে আলাপ হলেও তাঁরা পারিবারিক বন্ধু । তরুণীর এই পোস্ট দেখে তিনি লাইভে এসে ধিক্কার জানান নিজের খুব কাছের মানুষটিকে । ইটিভি ভারতের তরফে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয় ।
দেবদাস ঘোষ বলেন, "আমি আজ যতটুকু তার অনেকটাই রাজাদা'র জন্য । রাজাদা লোকের টাকা মারতে পারে, লোককে ঠকাতে পারে কিন্তু এ রকমটা করতে পারে আমি ভাবিনি । আগেও এ রকম অভিযোগ কানে এসেছে । বিশ্বাস করিনি । কিন্তু আজ যে বিশ্বাস না করে উপায় নেই । একটি ছেলের মাথা অবধি ফাটিয়ে দিয়েছে হেলমেট দিয়ে ! এত কিছুর পরেও বলব বাচ্চাদের নিয়ে নাটকের কাজ করার মতো লোক রাজাদা'র মতো কেউ নেই এই কলকাতায় । তবু কেন এ রকম করল আমি জানি না । আমি অনেকবার ক্ষমা চাইতে বলেছিলাম মেয়েটির কাছে । রাজি হননি রাজাদা । তাই হাত ছাড়লাম আমি ওঁর । তবে, এ কথাও ঠিক, আরও অনেকেই আছেন যাঁরা এ হেন কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত । সবার কীর্তি সামনে আসে না । রাজাদা'র টা সামনে এসেছে । যাঁরা না বুঝে তাঁকে সমর্থন করছেন তাঁদেরকে আমার কিছু বলার নেই ।"
আরও পড়ুন: চাকরি দেওয়ার নাম করে ধর্ষণের অভিযোগ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে
এই ব্যাপারে রাজা ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তাঁর ফোনটি বেজে যায় । অন্যদিকে, সেই তরুণীকে ফোন করা হলে তাঁর বাবা ফোন তুলে বলেন, "সকলেই সবটা জেনে গিয়েছেন ইতিমধ্যে । নতুন করে কিছু বলার নেই আমাদের । সারাদিন অনেকে ফোন করছে । ওর ফোন ধরা সম্ভব নয় । আমার মেয়ে লেখাপড়া করে । ওকে এগোতে হবে । এখানেই তো ওর জীবনটা শেষ নয় । তাই আমি বলছি, বিষয়টা নিয়ে আমরা ভাবছি কী করা যায় ।"