কলকাতা, 22 জুন: সম্প্রতি 20 লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হন টলিউডের বহুল পরিচিত পরিচালক পীযূষ সাহা । অভিযোগকারী অক্ষয় গুপ্ত এক নবাগত অভিনেতা । গত 30 মে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পীযূষকে গ্রেফতার করা হয় ৷ তারপর 6 জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান পরিচালক । আর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই তাঁর প্রথম কথা, "আমি যখন কোনও প্রতারণা করিনি তখন আমিও এর শেষ দেখব ।"
ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজক তথা পরিচালক হিসাবে বহুদিন ধরই কাজ করছেন এই পীযূষ সাহা। বহু নবাগতকে সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁরা আজ স্বনামধন্য অভিনেতা । তাঁর প্রযোজনা বা পরিচালনায় কাজ করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও বহু তারকা । পরিচালক পীযূষ সাহাকে এই 20 লক্ষ টাকার প্রতারণা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আমি কোনও চুরি করিনি বা ঘুষ নিইনি । অক্ষয় আমার অভিনয় ওয়ার্কশপের ছাত্র ছিল । আমার প্রযোজিত 'হরি ঘোষের গোয়াল' ছবিটা দেখে সে এবং তার মা এসে রীতিমতো আমার হাতে পায়ে ধরে ছেলেকে হিরো বানানোর জন্য । আমি সাফ জানাই এত টাকা আমার নেই । তাছাড়া আগে বহু মানুষকে সুযোগ দিয়েছি এখন আর পারব না । তখন অক্ষয় নিজেই আমায় জানায় সে 20 লক্ষ টাকা দিতে পারবে । আমি স্পষ্ট ভাষায় বলি এই টাকায় ছবি হয় না । সে তবু নাছোড়বান্দা ৷ অবশেষে আমি আশ্বাস দিই যে ঠিক আছে এরকম আরও দু'জন যদি টাকা দেয় তাহলে আমিও কিছু টাকা দিয়ে তিনজনের চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে একটা থ্রিলার বানাবো ।"
তিনি আরও বলেন, "সেক্ষেত্রে অক্ষয় যৌথ প্রযোজনার অংশীদার হত ৷ লভ্যাংশের টাকা থেকেও একটা ভাগ পাবে । সেই মর্মে আমাদের আইনি চুক্তিও হয় ৷ যেখানে এটাও স্পষ্ট উল্লিখিত রয়েছে যে অক্ষয় গুপ্ত আমাদের প্রোডাকশনের এক্সক্লুসিভ আর্টিস্ট এবং সে এই মুহূর্তে অন্য কোনও ছবিতে কাজ করতে পারবে না । তারপর আমি স্ক্রিপ্ট রাইটার, মিউজিক ডিরেক্টর, ও টেকনিশিয়ানদের বুক করি। এরপর লকডাউন আসে । দু'বছর কাজ স্থগিত থাকে । 2022 সাল থেকে আবার কাজ শুরু হয় । ওকে মেইলে স্ক্রিপ্ট পাঠানো হয় এবং মেইলে অভিনয়ের ওয়ার্কশপেও ডাকা হয় ।ফোনেও বারবার ডাকা হয় । মাঝে নানান খবর থেকে আমরা জানতে পারি ও অন্য আরেকটি ছবিতে আমাদের না জানিয়েই কাজ করছে ।"
পীযূষের কথায় অক্ষয়ই তাঁর চুক্তিভঙ্গ করেছে ৷ তিনি বলেন,"ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করা হলে ও জানায় ও ছবিটা আর করতে চায় না ৷ কারণ ও এখন বড় অভিনেতা, ওর দাদার রাধাকৃষ্ণ প্রোডাকশনে লিড হিরো হিসাবে অনন্যা গুহ ও রূপসা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করছে । তাই ও অন্য কোনও অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করবে না । এদিকে আমি সবাইকে অ্যাডভান্স দিয়ে দিয়েছি আর চুক্তি অনুযায়ী ও আমার সহ-প্রযোজক তাই ও লিখিতভাবে নো অবজেকশন জানিয়ে সরে না গেলে আইনত আমি একাও ছবিটার কাজে হাত দিতে পারি না । সেই হিসাবে বারবার ওর থেকে লিখিত ভাবে সরে যাওয়ার আবেদন চাওয়া হয় কিন্তু সেটা ও দিতে রাজি নয় ।"
আরও পড়ুন: আইফেল টাওয়ারে প্রিমিয়ার, ভারতীয় সিনেমা হিসেবে নজির গড়ল বরুণ জাহ্নবীর 'বাওয়াল'
অক্ষেয়ের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করে তিনি বলেন, "তারপর হঠাৎই আমার নামে অভিযোগ দায়ের করে । এর মধ্যে আপনাদের জানিয়েছে মায়ের ক্যানসার ইত্যাদি যা আমায় কখনোই বলেনি বরং বলেছে 40 লক্ষ টাকার অন্য ছবিতে হিরো করে কাজ করছে ।" অক্ষয় দাবি করেছে জালবন্দির স্ক্রিপ্ট অক্ষয়কে আপনি পাঠিয়েছিলেন শুনে পীযূষ বলেন, "প্রমাণ দিতে পারবে তো এতবড় একটা মিথ্যে কথার ? দু'দিন বাদে তো বলবে তুলকালামে মিঠুন চক্রবর্তীর চরিত্র ওকে প্রথমে অফার করা হয়েছিল । মিথ্যে কথার একটা সীমা থাকে ।"
পীযূষ সাহা আরও বলেন, "এই ইন্ডাস্ট্রিতে বিগত 25 বছর কাজ করছি, এত মানুষকে হাতে করে প্রথম নিয়ে এসেছি ৷ কেউ বলতে পারবে আমি এক টাকা অন্যায় ভাবে নিয়েছি? আর আমি কি পাগল যে বিনা কোনো চুক্তিতে বিনা কাগজে 20 লক্ষ টাকার মতো একটা বড় অংকের টাকা আমি নিয়ে নেব? আমার আয়করেও কোনও ফাঁকি বা কারচুপি নেই । অন্যদের মতো আমি মার্সিডিজ, বি এম ডব্লিউতে চড়িনা, বাড়ি গাড়ি করিনি, সিনেমাকে ভালোবেসে সিনেমাই বানিয়ে গেছি লাভ ক্ষতি না ভেবেই । একটা কাজ হলে প্রায় 50-60 জন টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য মানুষদের ঘর চলে । সেখানে এত বছর ধরে এত হিট সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়ার পর এটা খুবই দু:খজনক ।"
আরও পড়ুন: 'আমার তখন 12, পিতৃস্নেহের অছিলায় কোলে বসিয়ে চুমু দিত নির্দেশক ! তারপর...'
পীযূষের দাবি, "এরকম হলে কোনও প্রযোজকই আর নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে চাইবে না । বহু প্রযোজক বন্ধু ফোন করেছেন । তাঁরা জানিয়েছেন পাশে আছেন কারণ প্রযোজকরা এভাবে কতদিন মার খাবে? আজ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে গেলে বাবা মা ইনভেস্ট করেন ভালো জায়গায় পড়াতে, দোকান খুলতেও টাকা লাগে আর সিনেমার বেলাতেই সব দায় একা প্রযোজকের । কেন হবে? সহ-প্রযোজনায় থেকে যন্ত্রণাটা বুঝুক না এইসব নতুন অভিনেতারা । আর আমি যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই ওর সমস্যা হয়েছে ও ইমপা বা ফেডারেশনের দ্বারস্থ হল না কেন? যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলে দিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও সমস্যা হলে আগে এই সমস্ত সংগঠনে জানাতে আমরা তো আগে এইসব সংগঠনের কাছে যাই । তাই এটা কি শুধুই টাকা পাওয়ার ইচ্ছে নাকি পীযূষ সাহাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে ।"