কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর: অভিনেতা তাপস পালের কথা বললেই আরেকজনের মুখ ভেসে ওঠে সিনেপ্রেমী দর্শকের মনে ৷ তিনি অবশ্যই অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় ৷ দু'জনের রসায়ন বাংলা সিনেমার ইতিহাসে রচনা করেছে একটি নতুন অধ্যায় ৷ 'ভালোবাসা ভালোবাসা' ছবির হাত ধরে বাংলাকে এই নতুন জুটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক তরুণ মজুমদার ৷ এর আগে 'দাদার কীর্তি' ছবিতে তাঁরা দু'জনেই অভিনয় করেছিলেন ঠিকই ৷ তবে সেখানে তাঁদের জুটিতে দেখা যায়নি ৷ 'ভালোবাসা ভালোবাসা' ছবির পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁদের ৷ আজ সেই কিংবদন্তি অভিনেতার জন্মদিন ৷ আর প্রিয় তাপসের জন্মদিনে ইটিভি ভারতের কাছে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উজার করে দিলেন দেবশ্রী ৷
অভিনেত্রী বলেন, "একটাই কথা বলব তাপস আমার নায়ক, আমার বন্ধু ৷ তাপস-দেবশ্রী জুটি জন্ম হয়েছিল 'ভালোবাসা ভালোবাসা' ছবি থেকে ৷ আজকের দিনে আমার সহশিল্পী আর এক কাছের বন্ধুকে মনে পড়ছে ৷ অকালে একটা নক্ষত্র ঝড়ে গিয়েছে ৷ আমি জানিনা আকাশের কোন তারা হয়ে তাপস লুকিয়ে আছে ৷"
তাপসের সঙ্গে কাজ ও তাঁদের জুটি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "দাদার কীর্তি থেকে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ৷ তবে সেই ছবিতে তাপস আমার নায়ক ছিল না ৷ 'ভালোবাসা ভালোবাসা' ছবির হাত ধরে যে জুটি তৈরি হল তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের ৷ বাঙালি দর্শক আমাদের খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছিলেন ৷ আমি যতদিন অভিনয় করব ততদিন তাপসের কথা মনে থাকবে ৷ আমার মনে হয় না, এমন একটা সরল মুখ আর সরল হাসি আমরা আর খুঁজে পাব!"
তাপস পাল খেতে ভালোবাসতেন এই তথ্য সকলেরই জানা ৷ খাওয়া দাওয়ার গল্প বলতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়লেন দেবশ্রী ৷ তিনি বলেন, "খেতে ভীষণ ভালোবাসতো ৷ কোনও কথাই শুনতো না ৷ আমায় বলতো চুমকি আমি খাচ্ছি, তুমিও খাও ৷ আমি বলতাম, তুমি কি পাগল নাকি! একবার চাকদার দিকে একটা অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলাম ৷ মধ্যরাতে একটা ধাবা দেখে গাড়ি দাঁড় করানো হল ৷ হঠাৎ গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নীচে নামল তাপস ৷ আমি বলছি, আরে কী করছ তুমি! শুনে বলল, দাঁড়াও আমি নিজেই রান্না করব ৷ ডিমের একটা পদের কথা তোমায় বলছিলাম ৷ সেটা আমি নিজে দাঁড়িয়ে তৈরি করে আনছি ।"
আরও পড়ুন: 'দাদার কীর্তি' থেকে 'ভালোবাসা ভালোবাসা' জন্মদিনে ফিরে দেখা বাংলা সিনেমার তাপস যুগ
আরেকটি ঘটনার কথা বলতে গিয়ে দেবশ্রী বলেন, "আমরা তখন শুভকামনা ছবির শুটিং করছি ত্রিবেণীতে ৷ উঠেছি পাওয়ার স্টেশনের গেস্টহাউজে ৷ তাপস চন্দননগর থেকে আসা যাওয়া করত ৷ পরের দিন ভোরবেলায় আমাদের শুটিং ৷ রাত ন'টার সময় গল্প করতে করতে হঠাৎ বলল, চুমকি ডিমের পোচের ঝোল কখনও খেয়েছ? আমার মা খুব সুন্দর বানান ৷ আমি বললাম, না কখনও খাইনি ৷ শুনেই আমার দিদি তথা আমার হেয়ার ড্রেসার পূর্ণিমাদিকে তাপস বলল, দিদি আমি এই যাব আর আসব ৷ সকলেই এত রাতে ত্রিবেণী থেকে চন্দননগর যেতে বারণ করল ৷ কিন্তু তাপস নাছোড় ৷ সেই গেল। তারপর মায়ের হাতে বানানো ঝোল আমাদের জন্য নিয়ে এল ৷ শেষ রাতে সবাই মিলে খেলাম ৷ আমাদের খাওয়ার গল্প এরকমই ৷ "