নয়াদিল্লি, 25 মার্চ : পরিশ্রুত পানীয় জল থেকে স্বাস্থ্যবিমা, বেকারের কর্মসংস্থান থেকে কৃষকের আর্থিক অনুদান ৷ কেন্দ্রের যাবতীয় জনকল্যাণমুখী প্রকল্প থেকে বাংলাকে বঞ্চিত রেখেছেন শুধুমাত্র একজনই ৷ তিনি রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির জনসভা থেকে কার্যত এভাবেই ‘দিদি’কে কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘‘2 মে দিদিকে হটান, 3 মে থেকেই মিলবে পাঁচ লাখের স্বাস্থ্য বিমা ৷’’
অমিতের বক্তব্য, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন ৷ তাঁর ভয়, কেন্দ্রের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি বাংলায় চালু হলে বঙ্গভূমেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা বাড়বে ৷ সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে আয়ুষ্মান ভারতের মতো বহু কেন্দ্রীয় প্রকল্পই চালু হতে দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ যার ফল ভুগতে হচ্ছে আমজনতা, বিশেষ করে গরিগুর্বোকে ৷ কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারতের পাল্টা রাজ্য়ে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দাবি, আয়ুষ্মানের থেকে ঢের ভালো বাংলার এই নিজের প্রকল্প ৷ যা মানতে নারাজ দিল্লি ৷ তাদের লক্ষ্য দেশের অন্যান্য় প্রান্তের মতো পশ্চিমবঙ্গেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য়বিমা চালু করা ৷ তাঁরা যে এই লক্ষ্যে অবিচল, এদিন সেকথা আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন অমিত ৷
অমিত শাহের ভাষণে উঠে এল প্রধান কিষাণ সম্মান নিধির প্রসঙ্গও ৷ যার আওতায় উপভোক্তা কৃষকদের বছরে 6 হাজার টাকার অর্থসাহায্য করা হয় ৷ বাংলার ঝুলিতে অবশ্য এরও পাল্টা দাওয়াই মজুত আছে ৷ তার নাম কৃষকবন্ধু ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের আশ্বাস, মে মাস থেকে রাজ্য়ের এই প্রকল্পে আগের তুলনায় আরও বেশি টাকা পাবেন কৃষকরা ৷ অন্যদিকে অমিত শাহদের প্রতিশ্রুতি, বাংলায় পদ্ম ফুটলেই বকেয়া দু’বছর এবং চলতি বছর মিলিয়ে মোট 18 হাজার টাকা একসঙ্গে অনুদান হিসাবে ঢুকবে কৃষকদের ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টে ৷ তবে সেই টাকা পেতে হলে আগে বাংলা থেকে জোড়াফুলকে সমূলে উৎখাত করতে হবে ৷
আরও পড়ুন : মোদিজির লক্ষ্য বিকাশ, আর মমতার লক্ষ্য ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী করা; তোপ শাহের
এর আগে পুরুলিয়ায় নির্বাচনী জনসভা করতে এসে জেলার জলসমস্য়া নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, পূর্বতন বাম সরকার এবং বর্তমান তৃণমূল সরকারের অনীহাই জলকষ্ট জিইয়ে রেখেছে ৷ এদিন একই সুর শোনা যায় অমিত শাহের গলাতেও ৷ তাঁর আশ্বাস, রাজ্য়ে বিজেপির সরকার গঠিত হলেই 10 হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে ৷ পুরুলিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে পরিশ্রুত পানীয় জল ৷ তবে দিদি যতদিন বাংলার মসনদে থাকবেন, ততদিন সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নয় বলেই দাবি অমিতের ৷
এছাড়াও, জঙ্গলমহলের উন্নয়নে একগুচ্ছ অন্য়ান্য় প্রতিশ্রুতিও করেন অমিত শাহ ৷ জঙ্গলমহলে এইমস তৈরি থেকে কুড়মি, সাওতালিদের জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন, মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে ট্রেন ও সরকারি বাসে সফর, সাঁওতাল, আদিবাসী মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ৷ অমিতের ঝুলিতে মজুত ছিল সবই ৷ বার্তা শুধু একটাই, দিদিকে হঠালেই মিলবে জল, বিমা, অনুদানের মতো যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ৷
প্রসঙ্গত, পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডী আসনে কোনও প্রার্থী দেয়নি বিজেপি ৷ বদলে তারা সমর্থন করছে অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (আজসু)-এর প্রতিনিধি আশুতোষ মাহাতকে ৷ আজসুর নির্বাচনী প্রতীক কলা ৷ এদিন আশুতোষের সমর্থনেই বাঘমুণ্ডীতে সভা করেন অমিত ৷ বাংলায় কমল ফোটাতে বাঘমুণ্ডীতে সকলকে কলা চিহ্নে বোতাম টিপতে বলেন তিনি ৷