মালদা, 6 ডিসেম্বর : ইংরেজবাজারের ধানতলা এলাকায় আমবাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় যুবতির দগ্ধ দেহ উদ্ধারের পর পেরিয়ে গেছে 24 ঘণ্টা ৷ কিন্তু এখনও অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ ৷ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি মৃত যুবতির পরিচয় ৷ তাঁকে আমবাগানে নিয়ে খুন করা হয়েছে, না কি বাইরে খুন করার পর তাঁর মৃতদেহ বাগানে নিয়ে এসে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ ৷ নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তদন্তকারীরা ৷ তবে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, মৃত যুবতির সঙ্গে ধর্ষণের কোনও ঘটনা ঘটেনি ৷ যদিও পুলিশের এই অনুমান মানতে রাজি নন জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন ৷ তিনি জানান, ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট পাওয়ার পরই এবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে ৷ তবে তাঁরা মনে করছেন, যুবতিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল ৷ প্রমাণ লোপাটের জন্য পরে তাঁকে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৷
গতকাল ওই যুবতির দেহ উদ্ধারের পর দফায় দফায় এলাকায় তদন্ত চালায় পুলিশ ৷ ঘটনাস্থানে যান খোদ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া ৷ গতকাল ঘটনাস্থান থেকে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৷ আজ দুপুরেও পুলিশ সুপার সহ পুলিশের একাধিক আধিকারিক ঘটনাস্থানে আসেন ৷ আজও তাঁরা একাধিক নমুনা সংগ্রহ করেন ৷ ঘুরে দেখেন সংলগ্ন এলাকা ৷ তদন্তের পর পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, "এই ঘটনার তদন্তভার ইংরেজবাজার থানার IC-কে দেওয়া হয়েছে ৷ এই এলাকায় যতগুলি CCTV রয়েছে, আমরা সে গুলির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি ৷ আপাতত দুই-তিনটি ফুটেজ সংগ্রহ করা গেছে ৷ আমরা আরও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছি ৷ এই ফুটেজ থেকে আমরা ক্লু পেতে পারি বলে আশা করছি ৷ আমরা আশেপাশের গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলছি ৷ তার জন্য পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে ৷ মৃত যুবতির পরিচয় জানার জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে ৷ গতকালই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে ৷ ময়নাতদন্তের পুরো রিপোর্টও আমরা খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব বলে আশা করছি ৷"
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আপাতত কয়েকটি বিষয় তদন্তকারী দলের সামনে উঠে এসেছে ৷ প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে মৃত যুবতি এই এলাকা কিংবা জেলার নন ৷ গত তিন-চারদিনে জেলার কোনও থানায় এই বয়সের কোনও মেয়ের মিসিং ডায়ারি জমা পড়েনি ৷ তাই যুবতির পরিচয় জানতে দেশের প্রতিটি থানায় বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ যুবতির দু'টি হাত অক্ষত থাকায় তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে আধার কার্ডের তথ্য জানারও চেষ্টা চলছে ৷ তবে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবতিকে ধর্ষণ করা হয়নি ৷ শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ৷ পরে মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷
আজ সপার্ষদ ঘটনাস্থান পরিদর্শনে আসেন জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন চৈতালি ঘোষ সরকার ৷ তিনি বলেন, "আজ আমরা ঘটনাস্থান পরিদর্শন করলাম ৷ আমরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে এই ঘটনায় জড়িতদের চরমতম শাস্তি দাবি করব ৷ মানসিক অসুস্থ কিছু লোকের জন্য আমাদের সমাজের বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে ৷ তাই আমরা এই ঘটনায় দোষীদের চরমতম শাস্তি দাবি করছি ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া গেলে এই যুবতির সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে তা আমরা বলতে পারছি না ৷ তবে আমাদের অনুমান, এই যুবতির সঙ্গেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৷ তারপর প্রমাণ লোপাটের জন্য তাঁকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ৷ মোট কথা, এর পিছনে বড়ো কোনও ঘটনা রয়েছে ৷ মেয়েটির পরিচয় দ্রুত বের করার জন্যও আমরা পুলিশের কাছে আবেদন রাখছি ৷ এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য আমরা বিভিন্ন ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আলোচনায় বসছি ৷ মানুষকে পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব এখন মানুষকেই নিতে হবে ৷ আমরা কমিউনিটি পুলিশিং-এর উপর জোর দিচ্ছি ৷"