ETV Bharat / city

প্রতি বছর 100 কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হলেও মাখনার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা - মাখনার খাদ্যগুণ

জেলায় প্রতি বছর 100 কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয় মাখনার । অথচ এর চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ । "ফক্স নাট"-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা ।

Fox nut
মাখনা
author img

By

Published : Nov 27, 2020, 7:09 PM IST

Updated : Nov 27, 2020, 7:20 PM IST

মালদা, 27 নভেম্বর : মাখনা । নামটির সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত নয় । তবে দেশের মানুষ ধীরে ধীরে নামটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে । অনেক আগেই বস্তুটির সঙ্গে পরিচিত জাপান ও রাশিয়া । আমাদের এখানে যা মাখনা ওই দুই দেশে তা "ফক্স নাট" নামে পরিচিত । একাধিক গুণে ভরপুর মাখনার খ্যাতি এখন বাড়ছে অনেক দেশেই । ওজন কমাতে কিংবা বয়স ধরে রাখতে মাখনার জুড়ি মেলা ভার । রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে । জ়িরো কোলেস্টরেল ও ফ্যাট, ক্যালসিয়ামে ভরপুর মাখনা গর্ভবতীদের নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । একসময় শুধুমাত্র বিহারের এর চাষ হত । এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরেও । এখানে প্রতিবছর 100 কোটি টাকার বেশি মাখনার ব্যবসা হয় । এই চাষকে কেন্দ্র করে এখানে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোরও উন্নতি হয়েছে । প্রতিবছর বিহার থেকে 10 থেকে 12 হাজার মানুষ হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে নিজেদের রুজি রুটির ব্যবস্থা করে । লাভ বেশি থাকায় প্রতি বছর বাড়ছে মাখনা চাষের এলাকা । বাড়ছে চাষির সংখ্যাও । তবে অভিযোগ, রাজ্য সরকার এই চাষে কোনও সহায়তা করছে না । এমনকী সরকারিভাবে মাখনার প্রচারও করা হচ্ছে না । সরকার এদিকে নজর দিলে মাখনার জন্য সারা দেশ, এমনকী বিদেশেও পরিচিতি পাবে এই জেলা । কারণ মাখনার পেটেন্ট রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরেরই ।

মাখনা পদ্মগোত্রীয় একধরনের জলজ উদ্ভিদ । পদ্মের মতোই দেখতে এর পাতা । পাতায় অসংখ্য কাঁটা থাকে । পাতার নীচে গুচ্ছাকারে ফল জন্মায় । সেই ফলের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় খই । সেটাই মানুষ স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাখনা গ্লুটেন ও কোলেস্টেরল ফ্রি । এতে খুব অল্প মাত্রায় সোডিয়াম ও ফ্যাট রয়েছে । রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টি এজিং এনজ়াইম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । আর তাই এর ব্যাপক চাহিদা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে । ধীরে ধীরে এর উপকারিতা বুঝতে পারছেন অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও । সেই কারণে আগে শুধু বাংলা লাগোয়া বিহারে চাষ হলেও এখন হরিশ্চন্দ্রপুরে ব্যাপক আকারে মাখনার চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে । হরিশচন্দ্রপুরে এই চাষ প্রথম শুরু করেছিলেন পুরুষোত্তম ভগত ।

মাখনার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা


বর্তমানে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বেশ কিছু মাখনা খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে উঠেছে । প্রায় দশটি পাইকারি গদিও তৈরি হয়েছে । কোনও যন্ত্র নয়, পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় হাতে । মাখনার চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা । জমিতে মোটামুটি 12 ইঞ্চি জল থাকলেই এর চাষ হয় । মার্চ-এপ্রিল মাসে মাখনার বীজ ফেলা হয় । অগাস্ট থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু হয় । খই প্রক্রিয়ার কাজ চলে জানুয়ারি পর্যন্ত । তবে প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকরা যুক্ত নয় । বিহারের দ্বারভাঙা জেলার শ্রমিকরাই এই কাজ করে থাকে । প্রতি বছর 10-12 হাজার মানুষ বিহার থেকে কয়েকমাসের জন্য এই জেলা আসে ।

processing of khai from Makhna
চলছে মাখনা থেকে খই প্রস্তুতি

হরিশ্চন্দ্রপুরের তালশুরের মাখনাচাষি রামহরি মহালদার বলেন, এক বিঘা জমিতে এক থেকে সোওয়া কুইন্টাল মাখনার বীজ উৎপাদিত হয় । অন্য বছর দাম বেশি থাকলেও এবার প্রতি কুইন্টালের দাম 10 থেকে 11 হাজার টাকা । কোরোনার জন্য এবার দাম কিছুটা কম । বলেন, "জলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ধুয়ে, সাফ করে বিহারের শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করি । তারাই বীজ থেকে খই বের করে ।"

দ্বারভাঙার এক শ্রমিক মহাবীর বলেন, " প্রায় 20 বছর ধরে এখানে আসছি । প্রতি বছর 6 মাস এখানে থাকি । আমরাই চাষিদের কাছ থেকে মাখনার বীজ কিনি । খই বের করি । সেই খই পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিক্রি করি । বীজ কেনার পর জলে ডুবিয়ে রাখতে হয় । যেদিন যতটা বীজ থেকে খই বের করা হবে, সেই পরিমাণ বীজ আগের দিন রোদে শুকোতে হয় । তারপর চালনিতে চেলে বীজের প্রকারভেদ করতে হয় । সবকিছুই হাতে হয় । মাখনার খই বের করার জন্য বিহারে যন্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল । কিন্তু তাতে কাজ হয়নি ।"

আরও এক শ্রমিক রতন বলেন, "মাখনা চাষ পুরোপুরি জলের উপর নির্ভরশীল । যে জলের বিষয়ে জানে, সেই-ই এর চাষ করতে পারবে । বীজ থেকে খই বের করার প্রক্রিয়াটিও খুব জটিল । সবাই এই কাজ করতে পারে না । বীজ পরপর 8 টি চুল্লিতে বিভিন্ন তাপমাত্রায় গরম করতে হয় । শেষ চুল্লি থেকে বের করার আগে সেই বীজ পিটিয়ে খই বের করা হয় । বীজের গুণমানের উপর খইয়ের গুণমান নির্ভর করে ৷ এর আগের বছর আমরা 18-19 হাজার টাকায় প্রতি কুইন্টাল বীজ কিনেছিলাম । কিন্তু কোরোনার জন্য এবার দাম কিছুটা কমেছে । 12-13 হাজার টাকায় প্রতি কুইন্টাল বীজ পাওয়া যাচ্ছে । এবার আমরা মাখনার খই পাইকারদের কাছে 380 টাকা কিলো দরে বিক্রি করছি । এক কুইন্টাল বীজ থেকে মোটামুটি 50 কিলো খই পাওয়া যায় । খই হালকা হলে আমাদের লাভ বেশি । এখানে বস্তা হিসাবে পাইকাররা মাল কেনে ।"

এলাকার পাইকারি মাখনা ব্যবসায়ী রাজীব ভগত বলেন, " 20-25 বছর ধরে মাখনার চাষ হরিশ্চন্দ্রপুরে জনপ্রিয় হয়েছে । এই ব্যবসায় লাভ বেশি । তাই ব্যবসাও বাড়ছে । আমার জেঠু পুরুষোত্তম ভগত মাখনার উপর রিসার্চ করেছিলেন । তাঁকে সাহায্য করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরি । তাঁরা একসময় মাখনার পেটেন্টও বের করেন । মাখনা চাষ ও শিল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য । এখানে বছরে 100 কোটি টাকার বেশি মাখনার ব্যবসা হয় । এই ব্যবসা অগাস্ট মাস থেকে শুরু হয় । চলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত ।"

আর এক ব্যবসায়ী প্রবীণ সরাফের বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ব্যবসার হাল খুব খারাপ । এখানে উৎপাদন হলেও বিক্রির জন্য আমাদের ভিনরাজ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় । রাজ্য সরকার একটু নজর দিলে এই ব্যবসা আরও বাড়বে । আমরা এখানে প্রতি কিলো মাখনা খই 380 টাকায় কিনছি । দিল্লিতে এই এক কিলোর দাম পড়বে প্রায় 500 টাকা । ভিনরাজ্যে এর ব্যাপক চাহিদা । সেই অনুযায়ী আমরা সবসময় জোগান দিতে পারি না । মাখনা খুব উপকারী । প্রোটিনে পরিপূর্ণ । এর চাষ ও ব্যবসার দিকে সরকার একটু নজর দিলে যেমন রাজ্যের আর্থিক লাভ হবে, তেমনই বেকারত্বের সংখ্যা কমবে ।"


স্থানীয় ব্যবসায়ী আশিস ভগত বলেন, "এই রাজ্যে মাখনার কোনও মার্কেটিং হয়নি । গোটা দেশ এখন মাখনা কী, তা জেনে ফেলেছে । আমরা নিজেরাই এই জেলা ও রাজ্যে এর মার্কেটিং করার চেষ্টা করছি । রাজ্যের মানুষ মাখনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না । তবে বিরাট কোহলি মাখনার বিজ্ঞাপন করার পর রাজ্যের মানুষ মাখনা সম্পর্কে খানিকটা জানতে পেরেছে । যে কোনও মানুষের জন্যই এটা উপকারী । চিকিৎসকরাও এখন মাখনা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন । তবে মনে হয়, মাখনা রাজ্য সরকারের নজরেই নেই । তারা এর জন্য কিছু ভাবেনি । এখানকার মাখনা সবই বাইরে চলে যায় ।"

মালদা, 27 নভেম্বর : মাখনা । নামটির সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত নয় । তবে দেশের মানুষ ধীরে ধীরে নামটির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে । অনেক আগেই বস্তুটির সঙ্গে পরিচিত জাপান ও রাশিয়া । আমাদের এখানে যা মাখনা ওই দুই দেশে তা "ফক্স নাট" নামে পরিচিত । একাধিক গুণে ভরপুর মাখনার খ্যাতি এখন বাড়ছে অনেক দেশেই । ওজন কমাতে কিংবা বয়স ধরে রাখতে মাখনার জুড়ি মেলা ভার । রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এর কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে । জ়িরো কোলেস্টরেল ও ফ্যাট, ক্যালসিয়ামে ভরপুর মাখনা গর্ভবতীদের নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা । একসময় শুধুমাত্র বিহারের এর চাষ হত । এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরেও । এখানে প্রতিবছর 100 কোটি টাকার বেশি মাখনার ব্যবসা হয় । এই চাষকে কেন্দ্র করে এখানে আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোরও উন্নতি হয়েছে । প্রতিবছর বিহার থেকে 10 থেকে 12 হাজার মানুষ হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে নিজেদের রুজি রুটির ব্যবস্থা করে । লাভ বেশি থাকায় প্রতি বছর বাড়ছে মাখনা চাষের এলাকা । বাড়ছে চাষির সংখ্যাও । তবে অভিযোগ, রাজ্য সরকার এই চাষে কোনও সহায়তা করছে না । এমনকী সরকারিভাবে মাখনার প্রচারও করা হচ্ছে না । সরকার এদিকে নজর দিলে মাখনার জন্য সারা দেশ, এমনকী বিদেশেও পরিচিতি পাবে এই জেলা । কারণ মাখনার পেটেন্ট রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরেরই ।

মাখনা পদ্মগোত্রীয় একধরনের জলজ উদ্ভিদ । পদ্মের মতোই দেখতে এর পাতা । পাতায় অসংখ্য কাঁটা থাকে । পাতার নীচে গুচ্ছাকারে ফল জন্মায় । সেই ফলের বীজ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় খই । সেটাই মানুষ স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে । পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাখনা গ্লুটেন ও কোলেস্টেরল ফ্রি । এতে খুব অল্প মাত্রায় সোডিয়াম ও ফ্যাট রয়েছে । রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, অ্যান্টি এজিং এনজ়াইম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । আর তাই এর ব্যাপক চাহিদা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে । ধীরে ধীরে এর উপকারিতা বুঝতে পারছেন অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাও । সেই কারণে আগে শুধু বাংলা লাগোয়া বিহারে চাষ হলেও এখন হরিশ্চন্দ্রপুরে ব্যাপক আকারে মাখনার চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে । হরিশচন্দ্রপুরে এই চাষ প্রথম শুরু করেছিলেন পুরুষোত্তম ভগত ।

মাখনার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা


বর্তমানে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় বেশ কিছু মাখনা খই প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট গড়ে উঠেছে । প্রায় দশটি পাইকারি গদিও তৈরি হয়েছে । কোনও যন্ত্র নয়, পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় হাতে । মাখনার চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা । জমিতে মোটামুটি 12 ইঞ্চি জল থাকলেই এর চাষ হয় । মার্চ-এপ্রিল মাসে মাখনার বীজ ফেলা হয় । অগাস্ট থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু হয় । খই প্রক্রিয়ার কাজ চলে জানুয়ারি পর্যন্ত । তবে প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকরা যুক্ত নয় । বিহারের দ্বারভাঙা জেলার শ্রমিকরাই এই কাজ করে থাকে । প্রতি বছর 10-12 হাজার মানুষ বিহার থেকে কয়েকমাসের জন্য এই জেলা আসে ।

processing of khai from Makhna
চলছে মাখনা থেকে খই প্রস্তুতি

হরিশ্চন্দ্রপুরের তালশুরের মাখনাচাষি রামহরি মহালদার বলেন, এক বিঘা জমিতে এক থেকে সোওয়া কুইন্টাল মাখনার বীজ উৎপাদিত হয় । অন্য বছর দাম বেশি থাকলেও এবার প্রতি কুইন্টালের দাম 10 থেকে 11 হাজার টাকা । কোরোনার জন্য এবার দাম কিছুটা কম । বলেন, "জলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে ধুয়ে, সাফ করে বিহারের শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করি । তারাই বীজ থেকে খই বের করে ।"

দ্বারভাঙার এক শ্রমিক মহাবীর বলেন, " প্রায় 20 বছর ধরে এখানে আসছি । প্রতি বছর 6 মাস এখানে থাকি । আমরাই চাষিদের কাছ থেকে মাখনার বীজ কিনি । খই বের করি । সেই খই পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিক্রি করি । বীজ কেনার পর জলে ডুবিয়ে রাখতে হয় । যেদিন যতটা বীজ থেকে খই বের করা হবে, সেই পরিমাণ বীজ আগের দিন রোদে শুকোতে হয় । তারপর চালনিতে চেলে বীজের প্রকারভেদ করতে হয় । সবকিছুই হাতে হয় । মাখনার খই বের করার জন্য বিহারে যন্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল । কিন্তু তাতে কাজ হয়নি ।"

আরও এক শ্রমিক রতন বলেন, "মাখনা চাষ পুরোপুরি জলের উপর নির্ভরশীল । যে জলের বিষয়ে জানে, সেই-ই এর চাষ করতে পারবে । বীজ থেকে খই বের করার প্রক্রিয়াটিও খুব জটিল । সবাই এই কাজ করতে পারে না । বীজ পরপর 8 টি চুল্লিতে বিভিন্ন তাপমাত্রায় গরম করতে হয় । শেষ চুল্লি থেকে বের করার আগে সেই বীজ পিটিয়ে খই বের করা হয় । বীজের গুণমানের উপর খইয়ের গুণমান নির্ভর করে ৷ এর আগের বছর আমরা 18-19 হাজার টাকায় প্রতি কুইন্টাল বীজ কিনেছিলাম । কিন্তু কোরোনার জন্য এবার দাম কিছুটা কমেছে । 12-13 হাজার টাকায় প্রতি কুইন্টাল বীজ পাওয়া যাচ্ছে । এবার আমরা মাখনার খই পাইকারদের কাছে 380 টাকা কিলো দরে বিক্রি করছি । এক কুইন্টাল বীজ থেকে মোটামুটি 50 কিলো খই পাওয়া যায় । খই হালকা হলে আমাদের লাভ বেশি । এখানে বস্তা হিসাবে পাইকাররা মাল কেনে ।"

এলাকার পাইকারি মাখনা ব্যবসায়ী রাজীব ভগত বলেন, " 20-25 বছর ধরে মাখনার চাষ হরিশ্চন্দ্রপুরে জনপ্রিয় হয়েছে । এই ব্যবসায় লাভ বেশি । তাই ব্যবসাও বাড়ছে । আমার জেঠু পুরুষোত্তম ভগত মাখনার উপর রিসার্চ করেছিলেন । তাঁকে সাহায্য করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উৎপল রায়চৌধুরি । তাঁরা একসময় মাখনার পেটেন্টও বের করেন । মাখনা চাষ ও শিল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য । এখানে বছরে 100 কোটি টাকার বেশি মাখনার ব্যবসা হয় । এই ব্যবসা অগাস্ট মাস থেকে শুরু হয় । চলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত ।"

আর এক ব্যবসায়ী প্রবীণ সরাফের বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে আমাদের ব্যবসার হাল খুব খারাপ । এখানে উৎপাদন হলেও বিক্রির জন্য আমাদের ভিনরাজ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় । রাজ্য সরকার একটু নজর দিলে এই ব্যবসা আরও বাড়বে । আমরা এখানে প্রতি কিলো মাখনা খই 380 টাকায় কিনছি । দিল্লিতে এই এক কিলোর দাম পড়বে প্রায় 500 টাকা । ভিনরাজ্যে এর ব্যাপক চাহিদা । সেই অনুযায়ী আমরা সবসময় জোগান দিতে পারি না । মাখনা খুব উপকারী । প্রোটিনে পরিপূর্ণ । এর চাষ ও ব্যবসার দিকে সরকার একটু নজর দিলে যেমন রাজ্যের আর্থিক লাভ হবে, তেমনই বেকারত্বের সংখ্যা কমবে ।"


স্থানীয় ব্যবসায়ী আশিস ভগত বলেন, "এই রাজ্যে মাখনার কোনও মার্কেটিং হয়নি । গোটা দেশ এখন মাখনা কী, তা জেনে ফেলেছে । আমরা নিজেরাই এই জেলা ও রাজ্যে এর মার্কেটিং করার চেষ্টা করছি । রাজ্যের মানুষ মাখনা সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না । তবে বিরাট কোহলি মাখনার বিজ্ঞাপন করার পর রাজ্যের মানুষ মাখনা সম্পর্কে খানিকটা জানতে পেরেছে । যে কোনও মানুষের জন্যই এটা উপকারী । চিকিৎসকরাও এখন মাখনা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন । তবে মনে হয়, মাখনা রাজ্য সরকারের নজরেই নেই । তারা এর জন্য কিছু ভাবেনি । এখানকার মাখনা সবই বাইরে চলে যায় ।"

Last Updated : Nov 27, 2020, 7:20 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.