মালদা, ১০ মার্চ : তৃণমূল নয়, উত্তর মালদা কেন্দ্রে BJP-কেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন ইশা খান চৌধুরি। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে এখনও পর্যন্ত তাঁর নাম ঘোষণা না করা হলেও ওই কেন্দ্রে তিনিই যে প্রার্থী হচ্ছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। সেকথা জানিয়ে গেছেন খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও। এদিকে দাদা প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন উত্তর মালদার তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর।
আজ সকালে কোতয়ালি ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত মৌসম নির্বাচনী প্রচারে বেরোতে তৈরি। সামান্য সময়ের মধ্যেই তিনি বলেন, "গতকাল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি উত্তর মালদা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ইশা খান চৌধুরির নাম তুলে এনেছেন। কিন্তু ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। প্রার্থী তো সব রাজনৈতিক দলই দেবে। আমাদের কাজ লড়াই করা। আমরা লড়ব। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ভালো ফলের বিষয়ে আমরা প্রত্যয়ী। মানুষ আমাদের সঙ্গে, দিদির সঙ্গে আছে। তবে CPI(M)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের জোটে কোনও প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের সময় আমরা CPI(M)-এর সঙ্গে জোট করেই লড়েছিলাম। কিন্তু আমরা কোনও ফল পাইনি। তাই এবার CPI(M)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হলেও তাদের কোনও লাভ হবে না। কারণ, মানুষ এখন পুরোপুরি তৃণমূলের দিকে চলে গেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের জোট ভালো ফল করলেও সেই সময় দুই দলের শক্তিশালী নেতৃত্ব ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে দুই দলেই ভাঙনটা স্পষ্ট হয়েছে। একথা আমি কংগ্রেস নেতৃত্বকেও বলেছিলাম। দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমি কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।"
পাশাপাশি তিনি বলেন, "আর আমার মনে হয় না মালদায় BJP-র কোনও উত্থান হয়েছে বলে। এখনও তারা নিজেদের প্রার্থী ঠিক করে উঠতে পারেনি। তাই বাম-কংগ্রেস জোট হোক, কিংবা BJP-র প্রশ্ন আসুক, আমার মনে হয় না তাদের কোনও ফায়দা হবে।" BJP-কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, "এখানে BJP নেতৃত্ব বিভিন্ন প্রচার করার চেষ্টা করছে। তারা সেনাদের নিয়ে রাজনীতি করছে। সেটা ঠিক নয়৷।" তিনি অভিযোগ করেন, BJP তাঁর মন্তব্য নিয়ে অপপ্রচার শুরু করেছে। তাঁকে পাকিস্তানের এজেন্ট বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। মুসলিম দেখলেই তারা অপপ্রচার করে। তিনি বলেন, "ভোটের আগে BJP এমন বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করে। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন করার চেষ্টা করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য। সেখানে তাদের এই কৌশল কাজে দেবে না।" নির্বাচনী প্রচারে এই জেলায় দলনেত্রী বার বার প্রচারে আসবেন বলেও আজ জানান মৌসম।
এদিকে নির্বাচনী যুদ্ধে সাফল্য পেতে পরিবারের কংগ্রেসি আনুগত্যকেই অন্যতম হাতিয়ার করতে চলেছেন ইশা খান। আজ তিনি বলেন, "আমরা চিরদিনই কংগ্রেসকে ভরসা করে এসেছি। আর মালদার মানুষের সঙ্গে শুধু ভোটের সম্পর্ক নেই আমাদের। এই সম্পর্ক অনেক পুরোনো। সেটা আমাদের পরিবারের সঙ্গেই হোক, কিংবা কংগ্রেসের সঙ্গে। আমার জেঠু, বরকত গণি খান চৌধুরির সময় থেকেই মালদার মানুষের এই সম্পর্ক ছিল, আছে, থাকবে। মৌসম কংগ্রেস ছেড়ে চলে গেছে। তবে নীতির প্রশ্নে রাজনীতির ময়দানে আমরা লড়াই করব। রাহুলজি আমার সমর্থনে সভা করতে আসছেন। আমার মনে হয়, উনি দেশের যেখানে সভা করবেন, সেখানেই ভোটে ভালো প্রভাব পড়বে। দেশের মানুষ তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। তাছাড়া গত ৫ বছরে দেশের কোনও উন্নতি হয়নি।"
তিনি আরও বলেন, "BJP অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেস ভোটে ভালো ফল করেছে। গান্ধি পরিবার মালদার মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। তাই রাহুলজি মালদায় আসলে কংগ্রেস কর্মী শুধু নয়, মানুষও উজ্জীবিত হবে। ভোটেও তার প্রভাব পড়বে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ ভোটই দিতে পারেনি। সেই নির্বাচন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়েছিল। সেই ভোটে সংগঠিত লুট হয়েছিল। আবার ওই ভোটে অভিযোগ জানানোরও কোনও উপায় ছিল না। তবে কেন্দ্রের ভোট অন্য। এখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও হাত থাকবে না। নিরাপত্তারক্ষীও বাইরে থেকে আসবে। তাই লোকসভা ভোটে পঞ্চায়েতের মতো লুট হবে না। মানুষ নিরপেক্ষভাবে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।" আসন্ন ভোটে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কে হতে চলেছেন? ইশার জবাব, BJP-র সঙ্গে তাঁর মূল লড়াই হতে পারে। তবে তার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।